তালতলীতে ধানের দাম কম হতাশ কৃষক

প্রকাশিত: ৪:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯

তালতলীতে ধানের দাম কম হতাশ কৃষক

মোঃ হাইরাজ বরগুনা প্রতিনিধি ঃ প্রতি বছর স্বপ্ন নিয়ে মাটির বুক চিরে সোনালী ফসল ফলায় একটু লাভের আসায়, কিন্তু সেই ফসল বাজারে নিয়ে আসার পর চরম হতাশ কৃষক, তাদের মুখের হাসি মলিন হয়ে কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ। আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা হতাশ। কৃষকরা জানান, ধানের দাম কম থাকায় একর প্রতি গুনতে হবে ৩-৪ হাজার টাকা লোকসান। সারাবছর কষ্ট করে যদি লোকসান হয় তবে আর ধান চাষ করবোনা । প্রতিবছর সরকার ঘোষণা দেয় ধান বেশি দামে কিনবে। কিন্তু, ধান কাটার পর সেই দাম আর পাওয়া যায় না। বাজারে আমাদের কম দামেই ধান বিক্রি করতে হয়। তাছাড়া, অনেক কৃষক সরাসরি সরকারকে ধান দিতেও পারে না। তালতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, এ বছর তালতলীতে আমন চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার ৩৮১ হেক্টর। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের ৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর আর স্থানীয় জাতের ৭হাজার ৬৩১ হেক্টর। এক হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা গড়ে চার মেট্রিক টন। এবং এ লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে বলে জানাগেছে। কিন্তু বাজারে ধানের দামটা বেশী থাকলে কৃষকরা লাভবান হতো। সরকারীভাবে ধান ক্রয় শুরু করলে বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পাবে। পৌষ মাসের শুরু থেকে কৃষকরা পুরোদমে ধান কাটা শুরু করেছে। বর্তমানে তারা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এদিকে তালতলীতে সরকারীভাবে ২৬ টাকা কেজি দরে ২০ নভেম্বর থেকে সারা দেশে একযোগে সরাসরি প্রকৃত চাষিদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে, চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।এ উপজেলা থেকে ১৪শ ৩০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করবে বলে জানান খাদ্য অধিদপ্তর সুত্রে জানাযায় । সরকারী হিসেবে প্রতিমণ ধান ১০৪০ টাকা হলেও বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ওইধান প্রতিমণ বিআর-১১ ধান ৪৮০/৯০, বিআর- ২৩ ধান ৫০০/২০ও গুটি স্বর্ণ ধান ৪৮০/৯০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একাধিক কৃষকরা জানান, এক একর জমিতে জমির দাম, শ্রমিক মজুরী, নিরানী, সার-ঔষধ ও লাঙ্গল খরচসহ উৎপাদন খরচ প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা। ওই জমিতে ধান উৎপাদন হবে প্রায় ৩৫-৪০ মণ। বাজারে প্রতিমণ ধান ৪৮০-৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে ওই জমির ধান বিক্রয় হবে ১৮-২০ হাজার টাকা। একজন বদলা( শ্রমিক) দৈনিক ৫শ টাকা মজুরি দিয়ে ধান কাটতে হয় অথছ একমন ধান একদিনে কাটতে পারেনা। টাকা ও শ্রম বিনিয়োগ এখন লোকসান গুনতে হবে। সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারলে লাভবান হওয়া যেত। বাজারে সরকারী ভাবে ধান ক্রয় না করায় কৃষকরা ন্যায্য মুল্য পাচ্ছে না। বেপারীরা ইচ্ছা মাফিক মূল্যে ধান ক্রয় করছে। তাই নিরুপায় হয়ে তাদের দামেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। কৃষকরা দ্রুত সরকারী ভাবে ধান ক্রয়ের দাবী জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, সরকার কৃষকদের কাছ থেকে যে পরিমান ধান ক্রয় করবে তাতে বাজারে এর কোন প্রভাব ফেলবে না। উত্তরাঞ্চলের ফরিয়াদের ইচ্ছা মাফিক মূল্যেই কৃষকের ধান বিক্রি করতে হবে। এদিকে সরকার ও মিল মালিকরা ধান ক্রয় করছে না। এতে বাজারে ধানের দাম কম বলে জানান কৃষকরা। তালতলী মালীপাড়া, বগীর হাট বাজার, ঘুরে দেখাগেছে, বাজারে ধানের দাম কম। প্রতিমণ বিআর-২৩ ধান ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ সকল বাজারে সরকারী ভাবে কেউ ধান ক্রয় করছে না। অংকুজান পাড়া এলাকার কৃষক ইব্রাহিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন “মুই আর জাগা চমু না। হারা বচ্চর কষ্ট হইর‌্যা চইয়্যা রইয়্যা লচ অয়। এ কাম আর হরুমু না”। টাহা করজো আইন্না জমি চইছি অ্যাহন বাজারে ধানের যে দাম হ্যাতে মোর অনেক টাহা লচ অইবে”। বড়বগী ইউনিয়নের দুলাল হোসেন বলেন, এ বছর ১৩ একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। প্রতি একরে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৫০ মণ ধান ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। বাজারে ধানের দাম কম লাভতো হবেই না বরংঞ্চ একর প্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। তালতলীর চরপাড়া গ্রামের কৃষক হক মিয়া বলেন, এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম কম থাকায় তেমন লাভবান হওয়ার সম্ভবনা নেই। উল্টো লোকসান গুনতে হবে। ফকিরহাট গ্রামের সেন্টু মিয়া বলেন , পাঁচ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ফলন ভালোই হয়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম কম। কৃষকদের লোকসানের হাত থেকে বাচাঁতে হলে দ্রুত সরকারীভাবে ধান ক্রয়ের দাবী জানাই। তালতলী ধান ব্যবসায়ী মজনু মিয়া বলেন , মিল মালিকরা ধান ক্রয় করছে না। এতে বাজারে ধানের দাম কম। বাজারে বিআর-১১ ধান ৪৯০ টাকা, বিআর-২৩ ধান ৫২০ টাকা ও গুটি স্বর্ণা ধান ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest