ঢাকা ৬ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৫২ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২০
মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান |
ঢাকা |
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অত্যন্ত দক্ষ ও প্রচন্ড মেধাবী যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে পরিচিত ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রুম্মন তাহমিদ চৌধুরি । ছোটবেলা থেকেই তিনি যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়ার নেশা চেপে বসে তার মাথায় । শঙ্খ নদীর তীরে শালিকের উড়ে যাওয়া কিংবা আকাশে উড়ে যাওয়া যুদ্ধবিমানের সাথে দৌড়ে পাল্লা দিতেন ।
যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে তিনি তার জীবন কে ভীষন উপভোগ করতেন । তিনি তার ব্যাচের সবচেয়ে সেরা ছাত্র ছিলেন তেমনি তার অমায়িক ব্যবহার সকল কে মুগ্ধ করতো । নির্ভেজাল ও নিরঅংহকারী তাহমিদের মুখে হাসি লেগেই থাকতো । কোর্সমেটরা এবং বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা প্রায়েই তার কাছে এসে বলতো ইজেক্ট করা যেন ভালভাবে শিখে নেয় । তেমনি ইজেকশন কোর্স করতে গিয়ে কিংবা ফ্লাইট সর্ম্পকে পড়াশোনা করতে গিয়ে ইজেকশনের ব্যাপারটা তাকে ভীষন বিরক্ত করতো ।
যখনেই ইজেকশনের কথা আসতো তখনেই একটা হাসি দিয়ে বলতো ” যাই ঘটে যাক আমি আমার বিমান কখনো ত্যাগ করবো না ” ।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রুম্মন তাহমিদের ইজেকশনের ব্যাপারে একটা যুক্তি সবাই কে বলতো যে জনগনের টাকা তে কেনা এই যুদ্ধবিমান ইজেক্ট করে বেরিয়ে এসে এভাবে টাকা নষ্ট করার মানে নেই । একটা যুদ্ধবিমান টিকিয়ে রাখাটা তার কাছে অনেক দামী ছিল তাই ইজেক্ট নিয়ে কারো কথা তে কান দিতেন না ।
বুঝতেই পারছেন তিনি কতটা প্রফেশনাল ও তার মধ্যে দেশপ্রেম ও সততা ছিল । তিনি সবসময়ে F-7 যুদ্ধবিমান চালাতেন । তার যুদ্ধবিমান নিয়ে অসাধারন ম্যানুভ্যারেটি সকল কে মুগ্ধ করতো । তার দক্ষতা নিয়ে কারোই কোন সন্দেহ ছিল না । দিনটা ছিল ২০১৫ সালের ২৯ জুন । প্রতিবারের মত রুটিন ফ্লাইটের আগে মা এর সাথে কথা বলেছিলেন কিন্তু তার বাবা ঘুমিয়ে থাকাতে তার সাথে আর কথা বলা হয়নি । বোনের সাথে শেষ কথা ছিল আমার ফ্লাইট আছে আমি একা যাচ্ছি ।
এরপর ১১টা ৩০ মিনিটে বঙ্গোপসাগরে খুব নিচু দিয়ে এসে সমুদ্রে F-7 যুদ্ধবিমান নিয়ে বিধ্বস্ত হয় । তখনেই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার বিমানবাহিনীর প্রধান কে জানান Sir We have lost our a beautiful bird . আর এর মধ্যে দিয়ে চিরতরের জন্য হারিয়ে যায় অত্যান্ত ভদ্র , দক্ষ ও দেশপ্রেমিক পাইলট রুম্মন তাহমিদ । পরের ৩ দিন পর্যন্ত সমুদ্রে নৌবাহিনী , কোস্টগার্ড ও বিমানবাহিনী একযোগে তল্লাশি চালিয়েও তার মৃতদেহ পায়নি ।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রুম্মন তাহমিদ চৌধুরি হারিয়ে গেছে অথৈ সাগরে কিন্তু তিনি কখনো আমাদের হৃদয়ের মাঝখান থেকে হারিয়ে যাবেন না । তিনি চিরকাল আমাদের মনে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালভাসার সাথে বেচেঁ থাকবে । তার মত এত অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী পাইলট হারানোটা বাংলাদেশের জন্য ছিল বিশাল এক ক্ষতি । হয়তো এই ক্ষতি অপূরনীয়।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST