জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেলেও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জের ৬ টি পরিবার

প্রকাশিত: ১০:০৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০

জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেলেও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জের ৬ টি পরিবার

সিদ্ধিরগঞ্জ(নারায়ণগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক হাজী বসির উদ্দিন মার্কেট এলাকায় ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বাড়ির মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে ৬ টি পরিবারকে জিম্মি করে রাখে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতার ছেলে মাসুম রানা।
মধ্যরাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে প্রথমে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমকে অবহিত করলে পরবর্তীতে এসপির নির্দেশে তালা ভেঙ্গে জিম্মি থাকা ৬ টি পরিবারকে মুক্ত করে পুলিশ।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতেই বাড়ির মালিকের মেয়ে ঝর্ণা আক্তার বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের কবরেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পার্যন্ত পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করেনি বা কাউকে গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদীর ভাই নজরুল ইসলাম রনি।

কিন্তু সেই জিম্মিদশা থেকে মুক্তি মিললেও আতঙ্কে আছে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক হাজী বসির উদ্দিন মার্কেট এলাকার সেই ৬ পরিবার। শুক্রবার জুমার দিনটি কাটিয়েছেন সন্ত্রাসীদের প্রাণনাশের হুমকিতে। জিম্মিদশায় থাকা পরিবারগুলোর বাসার অদুর থেকে ৮-১০ জনের সন্ত্রাসীদল চিৎকার-চেচামেচি করছেন। করছেন গালমন্দও। বাড়ির বাহিরে আসলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়তে যেতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বাড়ির মালিকের ছেলে নজরুল ইসলাম রনি।

তবে এলাকাবাসী জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক হাজী বসির উদ্দিন মার্কেট এলাকায় ২৫-২৬ বছর যাবত বসবাস করে আসছেন হাজী আব্দুল জব্বার। তার পরিবার ছাড়াও ঐ বাড়িতে আরো ১৬ টি ভাড়াটিয়া পরিবার ছিলো। সম্প্রতি তিনি ঐ এলাকার পাশ্ববর্তী একটি বাড়ি ক্রয় করেন। যে বাড়ি ক্রয় করতে চেয়েছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাজী সালাহউদ্দিনের ছেলে মাসুম রানা। কিন্তু বাড়ির মালিক মাসুম রানার কাছে ঐ বাড়ি বিক্রি করেনি বাড়ি বিক্রির সম্পূর্ণ টাকা না পাওয়ার ভয়ে। সেই থেকেই মাসুম রানা ক্ষীপ্ত হয় আব্দুল জব্বার ও তার পরিবারের উপর। এক পর্যায়ে মাসুম রানা ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ছেড়ে যেতে হুমকি দিতে থাকে। মাসুম রানা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকিতে ঐ বাড়ির ১১ টি ভাড়াটিয়া পরিবার চলতি মাসে পর্যায়ক্রমিকভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। বাকী ৬ পরিবারকে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত তালা দিয়ে জিম্মি করে রাখে মাসুম রানা। এক কান দু কান করে এ খবর পৌছে স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীদের কানে। তারা ঘটনাস্থলে গেলে খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ রাত পৌনে ১২ টায় তালা ভেঙ্গে পরিবারগুলোকে মুক্ত করে।

আব্দুল জব্বারের ছেলে নজরুল ইাসলাম রনি জানান, এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর মাসুম রানা কাটা তারের বেড়া দিয়ে আমাদের বাড়ির লোকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে আমরা বিষয়টি ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি অবহিত করি। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই ফরিদ উদ্দিন এসে আমাদেরকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর মাসুম রানার চাচা হাবিব বিচার সালিশে বসে জানান, মাসুম রানা এ বাড়ি থেকে ওয়ারিশ কিনেছেন। কিন্তু জমি ক্রয় করার কোন কাগজ-পত্র বা প্রমাণাদী দেখাতে পারেনি মাসুম রানা। সেই বিচারে মাসুম রানাকে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার তাগাদা দেয় মাসুম রানার চাচা হাবিব। কিন্তু অন্যায়ভাবে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার বিচার আমরা মেনে না নিয়ে আমরা সেখান থেকে চলে আসি। ঐ দাবিকৃত ১৫ লাখ টাকার জন্যই বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় আমাদের বাড়ির সামনে কাটা তার ও দেয়াল দিয়ে পথ আটকে গেইটে তালা ঝুলিয়ে দেয় মাসুম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। সে ক্ষমতাশালী হওয়ায় আমাদের থেকে জোর করে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে শ্যামল নামে নরসিংদী এলাকার এক সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকের কাছ থেকে একই কায়দায় বাড়ির গেইটের সামনে ইটা দিয়ে আটকে ৮ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। পরে প্রাণের ভয়ে শ্যামল বাড়ি বিক্রি করে রাতের আধারে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। একইভাবে ইসমাইল মুন্সী নামের পাশের বাড়ি থেকে চাঁদা নেওয়ার জন্য গেইটে কাটা তার দিয়ে বেড়া ও ইটা দিয়ে দেওয়াল তৈরী করে রাখে। পরে তিনি তার সাথে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হন। তবে চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে সাংবাদিকদের বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এর পূর্বে ২০১৬ সালে ২৯ মার্চ ১টি বিদেশী নাইন এমএম পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলিসহ মাসুম রানার দুই ভাই সাইফুল ইসলাম রুপম ও মাহবুবুর রহমান আরমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওমর ফারুক তাদেরকে গ্রেফতার করে।##


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest