ঢাকা ২৪ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:০৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২০
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর চর বলরামপুর নায়েবীয়া দাখিল মাদরাসার আয়া ও নিরপক্ষা কর্মী নিয়োগ পরীক্ষায় ১২লাখ টাকা রফাদফায় শুক্রবার (২অক্টোবর) কুড়িগ্রামের একটি মাদরাসায় গোপনে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য মাদরাসা বোর্ডের মহা-পরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে একজন কর্মকর্তাকে বিমান ভাড়া দিয়ে কঠোর নিরাপত্তায় এনে ঘন্টা খানেকের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করে ওই কর্মকর্তা বিমান যোগে ফিরে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান। অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুস সালাম নিয়োগ বাণিজ্য করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বেরুবাড়ী ইউনিয়নের চর বেরুবাড়ী গ্রামের নিজ বাড়িতে একটি নতুন বিল্ডিং ঘর নির্মাণ করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভেরখাস ইউনিয়নের চর বলরামপুর নায়েবীয়া দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুস সালাম সম্প্রতি গোপনে দু’টি পত্রিকায় একজন নিরাপত্তা কর্মী ও একজন আয়া পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়টি গোপন রেখে চাকুরী প্রত্যাশী বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের চর লুছনী গ্রামের মাজেদুল ইসলামের সহধর্মিনী প্রার্থী ফেরোজা বেগম এবং পাশ্ববর্তী লুছনীর নুরুল হকের পুত্র আবুল কালাম এর পরিবারের সাথে সুপার চুক্তি ভিত্তিক নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া দুই পদে ১২লাখ টাকা আগাম হাতিয়ে নেন এবং অতি গোপনে শুক্রবার (২অক্টোবর) কুড়িগ্রামের একটি মাদরাসায় গোপনে নিয়োগে তার পছন্দের প্রার্থীর নিয়োগ চুড়ান্ত করতে প্রক্সি প্রার্থীকে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা করেন। এদিকে গোপন নিয়োগের বিষয়টি ফাঁস হলে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন শেষে সুপার মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি চেয়ে আবেদন করেন। ওই পত্রের প্রেক্ষিতে গত ২১সেপ্টেম্বর মহাপরিচালক মাদরাসা ২০১৮খ্রিঃ জনবল নিয়োগ কাঠামো অনুযায়ী নব-সৃষ্ট নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ বোর্ডে তার প্রতিনিধি হিসেবে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক (রংপুর বিভাগ) মুহাম্মদ হোসাইন (কাজল) কে মনোনিত করেন। মাদরাসা ভারপ্রাপ্ত সুপার বিষয়টি অবহিত হয়ে ডিজি’র প্রতিনিধি পরিদর্শক মুহাম্মদ হোসাইনের সাথে যোগসাজশ করে গোপনে নিয়োগ বোর্ডের বিষয়টি চুড়ান্ত করেন। এরপর পরিকল্পিতভাবে গত ২অক্টোবর ওই কর্মকর্তাকে বিমানে করে কুড়িগ্রামে নিয়ে আসেন। মাত্র ঘন্টা খানেকের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি আবারও বিমানে করে ঢাকা ফিরে যান বলে নিয়োগ বোর্ড সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন। এ গোপন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাষ্টার মাইন্ড হিসেবে ওই মাদরাসার সভাপতি আব্দুল ওহাব নেপথ্যে ভূমিকা রাখেন।
চর বলরামপুর এলাকার হোসেন আলী, নুর ইসলাম, গফুর আলী, মনিরুজ্জামান ও রুহুল আমিনসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। সভাপতি ও সুপার যোগসাজশ করে বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের লুছনী গ্রামের ফেরোজা বেগম ও আবুল কালাম কে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে ১২লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
চর বলরামপুর নায়েবীয়া দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুস সালাম বলেন, নিয়োগ পরিক্ষা করতে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডসহ ডিজির প্রতিনিধি এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করতে হয়েছে। আপনার যা ইচ্ছে তাই লিখেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানায় এবং সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর আহমেদ মাছুম বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক কে, এম, রুহুল আমীন এর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST