আসন্ন ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে এমএফএস সার্ভিস চার্জ হাজারে ১০ টাকা করার দাবিসহ ১১ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন

প্রকাশিত: ৪:০৫ অপরাহ্ণ, মে ৬, ২০২১

আসন্ন ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে এমএফএস সার্ভিস চার্জ হাজারে ১০ টাকা করার দাবিসহ ১১ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন

মারুফ সরকার ,ঢাকা : ৬ মে বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর-রুনি মিলনায়তন হলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের উদ্যোগে আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেটে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহকের প্রত্যাশা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন টেক্সেস বার এসোসিয়েশনের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট রাশেদুল হাসান, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক, আয়কর আইনজীবী এডভোকেট সাহেদা বেগম, আইন বিশেষজ্ঞ ড. আলহাজ্ব শরীফ সাকী, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সদস্য সাব্বির আহমেদ হাজরা, সাধারণ নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মোঃ কবির আহমেদ প্রমুখ।

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে করোনা মহামারির মধ্যে দেশের অর্থনীতির গতি চলমান রাখতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এমএফএস সবচাইতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত লেনদেন, ই-কমার্স পেমেন্ট, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, পয়ঃনিস্কাশন, ট্যাক্স প্রদানসহ অন্যান্য সকল সেবার বিল পরিশোধের পাশাপাশি পবিত্র মাহে রমজানের জাকাত প্রদান এমনকি ঈদ সালামি প্রদানেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা।

এই সেবায় দৈনিক লেনদেন হচ্ছে প্রায় ২২০০ কোটি টাকা। এখনো এ সেবার সামর্থ্যরে ৬৫ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে না। অর্থাৎ ৬৫ শতাংশ মানুষ কোন ধরণের আর্থিক অন্তর্ভূক্তির বাইরে রয়েছে। এমএফএস সেবায় নিবন্ধিত হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি গ্রাহক। তবে সক্রিয় লেনদেনকারী সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সংখ্যা ৭০ শতাংশ। দেশে বর্তমানে ১৫টি এমএফএস প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান একমাত্র প্রতিযোগিতায় রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান একমাত্র প্রতিযোগিতায় রয়েছে। আরেকটি প্রতিষ্ঠান নতুন পরে প্রতিযোগিতায় নামার চেষ্টায় রয়েছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে এজেন্ট রয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৪৪ হাজার । কিন্তু প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রান্তিক পর্যায়ে রিটেইলার বা এজেন্ট না থাকায় তাদের প্রদেয় সুবিধাদি এমনকি প্রতিযোগিতার কোন সুফল প্রান্তিক পযর্ডায়ের গ্রাহকেরা পাচ্ছে না। আমরা মনে করি এ সেবার সামর্থ্যরে পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করলে এ সেবায় দৈনিক লেনদেন ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ফলে সরকার ও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে। জিডিপিতে অংশগ্রহণ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। তাই আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেটে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ওপর গুরুত্ব প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

আমরা এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। এ সেবার সঠিক ব্যবহার বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে জিডিপির অগ্রগতি যেমন একদিকে হবে তেমনিভাবে কর্মসংস্থানও বাড়বে। এ সেবার অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় হয়ে আছে এর গলাকাটা উচ্চ সার্ভিস চার্জ। আমরা এই সেবা চালুর পর থেকেই এই সার্ভিস বার্জ কমানোর জন্য সময় সময়ে সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদন করেছি। যদিও সরকারিভাবে কন্দ্রেয়ি ব্যাংক সার্ভিস চার্জ কমানোর কোনো উদ্যোগ আজ পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। তবে বাজার প্রতিযোগিতা রক্ষার স্বার্থে রাষ্ট্রীয় অংশিদারিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ কিছুটা হলেও সার্ভিস চার্জ কমিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। আশা রাখি আগামী দিনে এই প্রতিযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকলে গ্রাহকেরা খুব দ্রুতই এর সুফল ভোগ করতে পারবে।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর পর বাংলাদেশ ব্যাংক সেন্ড মানি ফ্রি করলেও দেখা গেছে একট অপারেটর মাত্র ৫টা নম্বরে সেন্ড মানি ফ্রি করলেও অন্য অনেক ক্ষেত্রেই সেন্ড মানির খরচ ৫টা থেকে বাড়িয়ে ১০টাকা করেছে। আমরা বিষয়টিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তাছাড়া একটি এমএফএস কোম্পানির বিদেশী মালিকরা বাংলাদেশে আরো কয়েকটি ডিজিটাল কোম্পানী কিনে তাদের এক চেটিয়াত্ব আরো প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছে। এসব বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
এ সেবার আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে এর নিরাপত্তা ও কর ব্যবস্থাপনা।

তিনি আরো বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে আমাদের কিছু দাবি দাওয়া সরকারের কাছে তুলে ধরতে চাই।
১। বর্তমান সার্ভিস চার্জ কমিয়ে এক অংকে নামিয়ে আনতে হবে। অর্থাৎ প্রতি হাজারে ভ্যাট-ট্যাক্স খরচসহ আনুষাঙ্গিক অন্যান্য ব্যয় মিটিয়েও হাজারে ১০ টাকা চার্জ গ্রাহক প্রতি ধার্য করতে হবে।
২। বর্তমান কর হার পরিবর্তন করে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
৩। সেন্ড মানি চার্জ সকল অপারেটরকে শূণন্য (০) টাকায় নামিয়ে আনতে হবে। অর্থাৎ সেন্ড মানি ফ্রি করতে হবে।

৪। দৈনিক লেনদেনের পরেও অপারেটরদের কাছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা সঞ্চিত থাক।ে এই টাকা অপারেটরেরা কলমানি মার্কেটে বিনিয়োগ করলেও সেই বিনিয়োগের লভ্যাংশ গ্রাহকেরা পায় না। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েচে গ্রাহকের সঞ্চিত অর্থের উপর লাভ প্রদান করতে হবে। যদিও দুই-একটি প্রতিষ্ঠান কিঞ্চিৎ পরিমাণ লাভ দিয়ে থাকে, আমরা চাই আসন্ন বাজেটে এই বিনিয়োগ ও গ্রাহকের লভ্যাংশ প্রদানের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হবে।
৫। অপারেটরদের কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়ে আনতে হবে। বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি।

৬। ভ্যাটসহ কোন সেবার চার্জ কত টাকা কাটা হয়েছে, তা প্রতি লেনদেনের সাথে সাথে গ্রাহককে জানানোর কথা থাকলেও দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে তা জানায় না। এ ধরণের নির্দেশণার অমান্যের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনা যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা যায়, সেই নির্দেশনা আসন্ন বাজেটে থাকা জরুরি বলে আমরা মনে করি।

৭। এমএফএস সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগকারী কারা এবং বিনিয়োগের পরিমাণ কত তা বাজেটে স্পষ্ট উপস্থাপন করতে হবে।

৮। আন্ত লেনদেনের চার্জ শূন্যে (০) নামিয়ে আনতে হবে।

৯। সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহকের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চিয়তা প্রদান করতে হবে। নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার দায় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে, এমন নির্দেশনা বাজেটে আমরা প্রত্যাশা করি।
১০। এমএফএস সেবার পরিধি বৃদ্ধি করতে এই সেবাকে মোবাইল ওয়ালেট হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
১১। এমএফএস সেবায় এই মুহুর্তে একটি প্রতিষ্ঠানের বাজার শেয়ার ৭০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। গ্রামীণফোনের মতো ওই প্রতিষ্ঠানটিকেও সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার বা তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতাসম্পন্ন পরিচালনাকরী (এসএমপি অপারেটর) হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এটি হলে গ্রাহকেরা আরও বেশি উপকৃত হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest