ঝালকাঠিতে কাটা হচ্ছে শতবর্ষের গাছ l

প্রকাশিত: ৯:০২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০২১

ঝালকাঠিতে কাটা হচ্ছে শতবর্ষের গাছ l

রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু, ঝালকাঠি ঃ বৈধ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার হলেও পরিবেশ ও খুলনা বরিশাল মহাসড়কের ক্ষতিসাধন করে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে শতবর্ষী রেইন্ট্রি গাছ। এই মহা সড়কের ঝালকাঠি-রাজাপুর অংশে যান চলাচল ঝুঁকির অজুহাতে বিভিন্ন প্রজাতির ৬৬৪টি গাছ কেটে নেয়া হচ্ছে। গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান শ্লোগানকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে এসব গাছের ডাল ছেটে ঝুঁকি এড়ানো যেত। কিন্তু তা না করে বিষয়টি এমন হলো যে উকুনের ভয়ে মাথা ন্যাড়া করার মতো অবস্থা। এলাকাবাসির মন্তব্য যেখানে প্রধানমন্ত্রী গাছ লাগানোর মাধ্যমে পরিবেশ বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছেন সেখানে এভাবে গাছ কাটা যুক্তিসংগত নয়।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান সেতু থেকে রাজাপুরের মেডিকেল মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে গাছ কাটার এই মহাজজ্ঞ চলছে। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সড়কের পাশ ঘেঁষে মাটি খুঁড়ে গাছের শিকড় উপড়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এতে মূল সড়ক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও জলচ্ছাসের হুমকীর মুখে পড়েছে পার্শবর্তি এলাকা।
দক্ষিণের উপকূলীয় জণপদ ঝালকাঠি-রাজাপুর আঞ্চলিক সড়কের স্থানীয় অধিবাসীদের প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করে আসছে এই বিশালাকৃতির গাছ গুলো। স্থানীয় প্রবীন ব্যক্তিরা জানায়, বেশ কিছু গাছ বৃটিশ শাসন আমলে তাঁদের পূর্ব পুরুষরা লাগিয়ে ছিল। কিছু সওজ কর্তৃপক্ষ লাগালেও অধিকাংশ গাছ রোপন করেছে অধিগ্রহন করা জমির মালিকরা। তাঁদের অভিযোগ, শ্রমিকরা সড়কের ছোট বড় সব গাছ সাবার করে দিচ্ছে। এতে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
শতবর্ষী এসব গাছের ডালপালা সড়কের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঝুলে থাকাার কারণে মাঝে মধ্যে কিছু দূর্ঘটনা ঘটছে। ২০২০ সালের ২০ জুলাই রাজাপুরের বলাইবাড়ি নামক স্থানে এ সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে। ঝুঁকে পড়া একটি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে একটি গাড়ির ছাদ উড়ে যায়। এতে ১৬ জন যাত্রী আহত হয়। এরপর থেকেই সড়ক ও জনপদ বিভাগ এ আঞ্চলিক সড়কের ঝূঁকিপূর্ণসহ ভালো গাছগুলো কাটতে বিভিন্ন উন্নয়ন সভায় প্রস্তাব করে আসছে।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মাস পূর্বে ঢাকার প্রধান বৃক্ষপালনবিদ সওজ কার্যালয়ে এ গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ঝালকাঠি-রাজাপুর আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে ৬৬৪টি গাছ মাত্র ৭১ লাখ ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এ হিসেবে গড়ে প্রতিটি গাছের দাম পড়ে মাত্র ১০ হাজার ৭শ টাকা। আলাদা লটে ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গাছ গুলো ক্রয় করে। সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁরা সম্প্রতি এ গাছগুলো কাটা শুরু করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলো হচ্ছে, ডিপ টিম্বার ট্রেডার্স, রাব্বি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স টিএন্ডটি এন্টারপ্রাইজ, কাজী এন্টারপ্রাইজ ও মুরাদ এন্টারপ্রাইজ।
গত ২৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজাপুর পিংরী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা একটি প্রাচীন বিশাল রেইন্ট্রি গাছ কেটে একাধিক খন্ডে ভাগ করেছে। গাছ কাটার কারণে সড়করে দুই পাশে গাড়ির লম্বা লাইন পড়েছে। গাছের গোড়ার শিকড়ের অংশ মাটি খুঁড়ে বের করছে শ্রমিকরা। পাশের কিছু গাছ এমন ভাবে শিকড়সহ কেটে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে দেখে বোঝার উপায় নাই সেখানে গাছ ছিল।
এ বিষয়ে পিংরী গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মজিদ মিয়া (৫০) বলেন, শত বছরের প্রতিটি গাছের দাম ১ থেকে দেড় লাখ টাকা হলেও শুনেছি পানির দামে বিক্রি করা হয়েছে গাছ গুলো। আমাদের পূর্ব পুরুষদের লাগানো গাছের ডাল কাটলে আগে পুলিশ ধরত। এখন এভাবে গাছের গোড়াসহ কেটে উঠিয়ে নিলেও পরিবশে নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। এ কারণে পাখিরা হারাবে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। পথিক ছায়া থেকে বিঞ্চত হবে। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক ও রাজাপুর উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. শাজাহান মোল্লা বলেন, সড়কের দুই পাশের গাছগুলো ছিল এ উপজেলার মানুষের সবুজ বেষ্টনি। সিডরসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগে এরা আমাদের রক্ষা করেছে। নির্বিচারে গাছ কেটে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট করছে। তাঁদের এমন সিদ্ধান্তে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিপ টিম্বার ট্রেডার্সের মালিক শান্ত কুমার বাড়ৈ বলেন, দরপত্রের নির্দেশনা অনুসারে আমরা গাছ কেটে নিচ্ছি। এতে সড়কের কোন ক্ষতি হবেনা। গাছগুলো কাটার ফলে অনেক যানবাহন দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, সড়কের দুই পাশের ঝুঁকিপূর্ণ গাছ গুলো কাটার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ চালক ও বাস মালিকদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। সড়কের বিভিন্ন বাঁকে গাছের কারণে প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটে। সব পরিস্কার হলে সড়কের দুই ধারে আবার পরিকল্পিত ভাবে আকাশমনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest