ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মোঃ হাইরাজ, বরগুনা প্রতিনিধি।। বরগুনার তালতলী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কয়েক বছর আগেও শীতের মৌসুমে সকালে রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছিদের ব্যস্ততা চোখে পড়ত। সকালে গাছিরা খেজুরের রস নিয়ে বাড়ি বাড়ি ফেরি করে রস বিক্রি করত।
তবে এখনো কিছু খেজুরের গাছ থাকলেও গাছির সংকটে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। কয়েক গ্রামের ব্যবধানে দু’একজন গাছি পাওয়া গেলেও গাছ তুলনামূলক কম থাকায় রস সংগ্রহের কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে না গাছিরা । ফলে তালতলীতে খেজুরের রসের দাম আকাশ ছোয়া।
এক সময় শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলত খেজুরের রস কিংবা রসের পাতালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠা পুলির আয়োজন। আর খেজুরের রস দিয়ে তৈরী ঝোলা গুড়ের সুনাম তো তালতলীর ছিলই.তখন এ উপজেলায় খাবার দোকানে খেজুরগুড় ও নারিকেল দিয়ে বারোমাস চিতই পিঠা (স্থানীয় ভাষায় কাচিকোচা) আটার রুটি বিক্রি হতো তবে এ উপজেলায় এই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
এখন গুটিকয়েক দোকানদার সন্ধ্যার পর পিঠা বিক্রি করলেও খেজুর গুড় দিতে পারছেননা।
তার পরিবর্তে দিচ্ছেন চিনি দিয়ে তৈরি শিরা ও নারিকেল।
মাছবাজার রোডের পিঠার দোকানি জমির মিয়া বলেন খেজুর গুড় খুঁজেও সহজে পাওয়া যায়না। তাই চিনি দিয়ে তৈরি শিরা ও নারিকেল দিতে হচ্ছে।
মুনসুর আলী জোমাদ্দার বলেন খেজুরের রসের স্বাদ নিতে ছোট এক হাড়ি রস ৩০০ টাকা দিয়েও রস পাচ্ছিনা । প্রতি বছর শীতে আমরা খেজুর রসের খির,পুলিপিঠা, রসের মন্ডামিঠাইসহ নানা মুখরোচক খাবার খেয়েছি। কিন্তু আফসোস এই ঐতিহ্য মজাদার খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের নতুন প্রজন্ম।
গাছি আঃ খালেক মুন্সি বলেন, আগের মত তো গাছ নাই রস অইবে ক্যামনে। অনেক গাছ কাইট্টা হালাইছে। এই জন্য রসের দাম বেশি আর রাইতে তো পোলাপান চুরি হইর্রা রস লইয়া যায়। সকালে আইয়া দেহি রস নাই। এর লাইগ্যাও অনেকে গাছ কাডেনা।
তবে উপজেলা মেডিকেল অফিসার মেজবাহ্ উল হক চৌধুরী বলেনঃকাঁচা খেজুরের রসের মাধ্যমে নিপা ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৭০ শতাংশ রোগী প্রায় নিশ্চিতভাবেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কারণ নিপা ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি। কাজেই এ ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে খেজুরের কাঁচা রসপান থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি।
এ বিষয় পরিবেশ বিদ হাসান ঝন্টু বলেন,
খেজুর রস হারিয়ে যাচ্ছে এর প্রধান কারন
খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ ব্যবহার করায় এই গাছ কমে যাচ্ছে। ১৯৯৪ সালে ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ করে খেজুর গাছ ও বাঁশের মোতা পোড়ানোর অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বাঁশের মোতা না থাকায় সব ধরণের ইট ভাটায় পোড়ানোর জন্য খেজুর গাছ নিধন শুরু হয়। খেজুর গাছের ব্যাপক নিধনের ফলে সারাদেশে কমছে খেজুর গাছ। তাই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে খেজুরের রস। খেজুর গাছ পরিবেশ ও ভূমি রক্ষা রোধে খুব উপকারি। আমরা নিজেদের সামান্য স্বার্থে উপকারি গাছটিকে নিধন করে আমাদেরই ক্ষতি করছি। পরিবেশ রক্ষায় এবং রসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে রাস্তার পাশে খেজুর গাছ লাগানোর দাবি জানান তিনি।এখনি যদি এই গাছের বিষয় পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তবে অচিরেই হারিয়ে যাবে সুস্বাদু এই প্রাকৃতিক মধুর রসের গাছ।#####
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST