আগৈলঝাড়ায় ২শ ৪০ বছরের প্রাচীণ ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ৭:১১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০২০

আগৈলঝাড়ায় ২শ ৪০ বছরের প্রাচীণ ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত

মোঃ জহিরুল ইসলাম সবুজ, আগৈলঝাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধিঃ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে দুইশ চলিশ বছরের প্রাচীন মার্বেল মেলা বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় শুধু আগৈলঝাড়া উপজেলাই নয়,পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া, উজিরপুর, ডাসার, মাদারীপুর, কালকিনি, গৌরনদী, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করে। মেলা কমিটির সভাপতি মিহির মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, রামানন্দের আঁক গ্রামে দুইশ একচল্লিশ বছর পূর্বে আউলিয়া মা সোনাই চাঁদের বিয়ে হয়েছিলো ৬ বছর বয়সে। ৭বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নি:সন্তান অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে একটি নিমগাছের গোড়ায় শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা আরম্ভ করেন মা সোনাই চাঁদ। ক্রমশ তার অলৌকিত্ব ছড়িয়ে পড়লে ওই স্থানে বাৎসরিক পূজার আয়োজন করা হয়। মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ইং সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে নবান্নের অায়োজনের মধ্য দিয়ে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাঁর মৃত্যুর পরে ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। প্রতিবছর এই দিনটি উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীর্ত্তন, কবিগান শেষে সোয়ামণ (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সাথে সোয়ামণ আঁখের গুড়, ৫০ জোড়া নারিকেল ও কলা সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নবান্ন তৈরী করে মেলায় আগত দর্শণার্থীদের মধ্যে প্রসাদ হিসাবে বিতরন করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম আকর্ষন পৌষ সংক্রান্তিতে বাস্তুপূজা উপলক্ষ্যে আড়াই’শ বছর ধরে এ গ্রামে মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মার্বেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা হরিহর মন্ডল (৮০) জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিল। যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আমরা সেই প্রাচীণ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এদিনটিকে ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে মহোৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের এ মার্বেল মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে ৩ কি.মি এলাকা জুড়ে মার্বেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি, বাগানসহ সর্বত্রই মার্বেল খেলার আসর বসেছে। রামানন্দের আকঁ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে বালুর মাঠে বসেছে বাঁশ-বেতের শিল্প সামগ্রী,মনিহারী,খেলনা, মিষ্টি ও ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে মেলায় আগত অমল দাস (৩৫) জানান, এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী মার্বেল খেলার কথা শুনে মেলায় এসেছি। মেলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। বাশাইল গ্রামের ১০ শ্রেনীর ছাত্র সুমন ঘরামী ও ৯ম শ্রেনীর ছাত্র প্রীতিশ দাস জানায়, সারা বছর টাকা জমিয়েছি মার্বেল খেলার জন্য। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী,যুবক-যুবতীরা মেলার প্রধান আকর্ষণ মার্বেল খেলায় অংশগ্রহণ করেন। মেলা পরিচালনার জন্য ১৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেলা উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়। মেলায় মার্বেল খেলার জন্য অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন। তাদের জন্য পূর্ব থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলাকে জনপ্রিয় করার জন্য মেলাস্থলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ মাঠ সম্প্রসারণ করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন মেলা উদযাপন কমিটির সংশ্লিষ্টরা।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest