ঢাকা ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩১ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:০০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২০
রাজশাহী ব্যুরো : উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৩৮ জন চিকিৎসক ও নার্স প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। আর প্রতিদিনই শনাক্তের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। খোদ চিকিৎসক-নার্সরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে সেবা। হাসপাতালেরর ওয়ার্ডগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। অনেক সময় সরকারী হাসপাতালে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে না পেয়ে একাধিক বেসরকারী হাসপাতালে গিয়ে সেবা না পেয়ে ফের ঘুরছেন রামেক হাসপাতালে এমন ঘটনাও ঘটছে। ওয়ার্ডের একজ কোন চিকিৎসক ও নার্সের করোনা শনাক্ত হলে তার সহকর্মীদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। আর সেই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে রোগী ভতির্র তারিখের দিন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের ব্যাপক হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। অনেক সময় ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) রোগী দেখে দেন। তবে অনেক সয়ম নিউরো সার্জারিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে চিকিৎসকের অপেক্ষা করেন। কিন্ত সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে মধ্যসারির চিকিৎসকতো দূরের কথা ইন্টার্ন চিকিৎসকও থাকেনা এমন অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা। শুরু থেকে এ পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের চিকিসক, নার্স, ডেইলি লেবার ও স্টাফের করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। দিন দিন এ তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস শনিবার দুপুরে বলেন, এ পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের ৩৪ জন চিকিৎসক, ১০৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, ডেইলি লেবার ১৩ জন ও স্টাফ ২৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মোট রামেক হাসপাতালের ১৭৮ জন চিকিসক, নার্স, স্টাফ এবং ডেইলি লেবারের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছে ২৮ জন। সুস্থরা নতুনভাবে কাজে যোগ দিয়েছে। কিন্ত প্রতিদিনই হাসপাতালের একাধিক ওয়ার্ডের চিকিৎসক-নার্সের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এ কারণে ওয়ার্ডে ডাক্তার ও নার্স সংকট দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসা সেবাও কিছুটা ব্যহত হচ্ছে। কোন ওয়ার্ডের চিকিৎসক-নার্সের করোনা শনাক্ত হলে তাদের সহচর্যে আসা সহকর্মীদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে। এ কারণে সংকট আরো বেশি হচ্ছে।
কয়েকদিন আগে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জাম সরবরাহের দাবি জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। তখন হাসপাতালের ডিডি বলেছিলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে।
এদিকে, নাম না প্রকাশ করার শর্তে রামেক হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম হলেও যারা জরুরী চিকিৎসার জন্য আসেন তারা বেশি সমস্যার মধ্যে পড়ছে। হাসপাতালের ৮ নং ওয়ার্ডে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তারা আহত হয়ে আসে। এই জরুরী ওয়ার্ডেও অনেক সময় কোন চিকিৎসক-নার্স থাকেনা। রোগীরা জরুরী বিভাগ থেকে ভর্তি হওয়ার পর ওয়ার্ডে গিয়ে অপেক্ষা করে চিকিৎসার জন্য। তিনি আরো বলেন, গত কয়েকদিন আগে হাসপাতালের মারামারি করে আহত হয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন কয়েকজন রোগী। বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৫/৬ জন রোগী জড়ো হয়ে যায়। প্রায় সবাই ৮ নং ওয়ার্ডের রোগী। কিন্ত ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসব-নার্স করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে তেমন কেউ ছিলনা। ইন্টার্ন চিকিৎসকও ছিলোনা। পরে তারা ওটি ও জরুরী বিভাগে যায়। ২/১ জন রোগী বাইরের কয়েকটি বেসরকারী ক্লিনিক ঘুরেও চিকিৎসা পেয়ে আবার হাসপাতালে ফিরে আসে। শুধু ওই ওয়ার্ডেই নয় হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডেও চিকিৎসক-নার্স না থাকার কারণে অনেক সয়ম চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। তবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন হাসপাতালে কম রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। করোনার কারণে হাসপাতালে খুব জরুরী ছাড়া কোন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন না।
রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন বলেন, আমি বেশ কয়েকদিন আগে আমার রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। এর আগেও এসেছি রোগী নিয়ে কিন্ত তখন এত সমস্যা ছিলনা। এখন চিকিৎসা পেতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আরেক রোগীর স্বজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, করোনার কারণে এখন চিকিৎসক-নার্সের সংকট থাকার কারণে তেমনভাবে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদেরও আগের মতো সেবা করা হয় না।
উল্লেখ্য, শুরু থেকে এ পর্যন্ত শুধু রামেক হাসপাতালই নয় আশেপাশের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক চিকিৎসক-নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে কর্তব্য পালনের সময় করোনা শনাক্ত হয়েছে।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST