ঢাকা ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আলোকিত সময়ঃ সম্প্রতি একজন জাপান প্রবাসীর সাথে আড্ডায় বসেছিলাম। কথা প্রসঙ্গে উঠে এলো টোকিওতে আমাদের দূতাবাস সংক্রান্ত নানা কথা। দূতাবাস কর্তাদের নানা কর্মকান্ড এবং আচরণের কথা বলতে গিয়ে একসময় তিনি বললেন, টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এখন আর বাঙালির বা বাংলাদেশীদের দূতাবাস নেই। এ যেন হয়ে উঠেছে দূতাবাস লীগদের দূতাবাস।
কথাটি শোনার পর আমি একদম “থ” হয়ে গেলাম। কারণ তিনি দেশে ছাত্র রাজনীতি করে আসা আওয়ামী লীগ ঘরোনার এবং বর্তমান সরকারের একজন খাটি সমর্থক। তার মুখে এমন কথায় অবাক না হয়ে পারিনি। বর্তমান সময়ে যারা তেলবাজির রাজনীতি করে বা অন্ধ সমর্থন করার মতো দল কানা তিনি তাদের মতোন নয়। সরকারের যেমন ভালো কাজের সমর্থন করে কথা বলেন তেমনি আবার সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত বা অন্যায় কাজের ঘোর সমালোচনা করে কথা বলতেও কার্পণ্য করেন না। এজন্যই তাকে আমার ভালো লাগা আর মাঝে মধ্যে সময় পেলে একসাথে বসে কফি খেতে খেতে দেশের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলি।
আমরা যারা দেশের বাইরে (ভিন্ন দেশে) বসবাস করছি তারা নিজেদের বাঙালি বলি আর বাংলাদেশী যা-ই বলি না কেনো আমরা প্রবাসী, এটাতে কোনো ভুল নেই। প্রবাসে আমরা যে যে-ই দেশেই থাকি না কেনো, সেই দেশ কিন্তু আমাদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, আঞ্চলিক কিংবা অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত কিনা সে নিয়ে ভাবে না। এনিয়ে যদি কেউ ভেবেই থাকে তা হলে সেটা আমাদের মধ্যেই কেউ না কেউ ভাবি। তবে আমি যা মনে করি, বিদেশের মাটিতে আমাদের পরিচয় একটাই, আমরা কোন দেশের পাসপোর্ট বহন করছি, সেটাই বড় পরিচয় এবং একটাই।
আবার, দেশে যারা আছেন তারা তো বটেই এমনকি সরকার পর্যন্ত আমাদের প্রবাসী বলে থাকেন। আগের সরকার গুলোর কথা আমার জানা নেই তবে বর্তমান সরকার প্রবাসীদের উপর অনেক ডিপেন্ডেট। না হলে দেশের ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে সেই টাকার সাথে সরকারের নির্দেশে ব্যাংক গুলো মূল টাকার সাথে বাড়তি কোনো টাকা যোগ করতো না। কথায় কথায় মিডিয়ার কাছে সরকার রেমিটেন্সের কথা বলতো না। এমনকি প্রবাসীদের রেমিটেন্স যোদ্ধা বলে সম্মানিত করতো না। কর্তৃপক্ষ কোন সময় দেশে কতো রেমিটেন্স গেলো সেটা ফলাও করে প্রচার করতো না। যে যে-ই অর্থেই দেখি না কেনো, প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠায় আর কেউ তা বায়রের দেশে পাচার করে।
মুখে এবং কাগজে প্রবাসীদের রেমিটেন্স যোদ্ধা বলে কতোটা যে তাদের সম্মান করে বা ছোট করে বা হেয় করে কথা বলে তার একটা চিত্র বোঝা যায় প্রবাসীরা যখন দেশে প্রত্যাবর্তন করে তখন। বিশেষ করে দেশের বিমানবন্দর গুলোতে প্রবাসীদের সাথে কর্মরত কর্মকর্তা – কর্মচারিদের কথা এবং আচরণে দেখে বলা যায়, কেবলই প্রবাসী হবার কারণে যে তাদের সাথে কতোটা অবহেলা করা হয়। এমন কি, দেশে বর্তমান সরকারের বিদেশ মন্ত্রী প্রবাসীদের নিয়ে যে কিছু মন্তব্য করেছেন তা শোনলে বোঝা যায় প্রবাসীদের যে সরকার কতোটা সম্মানের (?) চোখে দেখে বা মূল্যায়ন করে।
সরকার যদি প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রত্যাশী হয়েই থাকে তাহলে দূতাবাসে দলীয় রাজনীতির বৈষম্য করা হয় কেনো? আমি পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের কথা সঠিক বলতে পারছি না। আমি যেহেতু জাপান প্রবাসী সুতরাং জাপানের কথাই বলি।
এখানে কিছুদিন আগেও দেখেছি দেশের কোনো বিশেষ দিবসে টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, আঞ্চলিক, ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হতো। বর্তমানে সরকার বিরোধী দলের নেতা কর্মী তো দূরের কথা সরকার সমর্থক দলেরও যাদের বিশেষ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান গুলোতে আমন্ত্রণ পাবার কথা তাদের নির্ধারিত তালিকা থেকে বাদ দিয়ে কয়েকজনের পছন্দের বা কাছের সংশ্লিষ্টদের আমন্ত্রণ জানিয়ে চা কফি বা অন্য কিছু দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে, যারা নিয়মিত দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠান গুলোতে আমন্ত্রণ পাচ্ছে, তাদের অনেকে দেশে কালে ভদ্রে টাকা বা রেমিটেন্স পাঠালেও তা একান্ত না পারতে হয়তো কোনো বিশেষ কারণে পাঠায়। রেমিটেন্স অর্থে কোনো অর্থ পাঠায় না। তাহলে তাদের এতোটা আদর যত্ন করে আপ্যায়নের দরকার আদৌ আছে কি?
আমার কথা হচ্ছে প্রবাসে কেউ যদি সরকার বিরোধী রাজনীতির সাথে জড়িতও থাকে, তারা যদি প্রবাসে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে সরকার বিরুধী কোনো কিছুর আয়োজনও করে থাকে তারপরেও দূতাবাসে তাদের একসেস দেওয়া দরকার। প্রয়োজনে তাদের এক কাপ চা – কফি খাইয়ে আদর যত্ন করে দূতাবাস কর্তা বলতে পারেন দেশে বেশী করে রেমিটেন্স পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশ থেকে সম্ভব হলে বিশেষ করে জাপান থেকে যেন নতুন নতুন ভ্রমণকারী এবং বিনিয়োগকারীদের দেশে নিয়ে যায় বা যেতে আগ্রহী করে তোলে। এতে কারো ব্যক্তি স্বার্থ থাকলেও সার্বিকভাবে এতে দেশেরই মঙ্গল হবে।
এজন্য দূতাবাস কর্তাদের উচিৎ হবে প্রবাসে আমাদের দেশীয় রাজনীতির কথা সব বাদ দিয়ে বা ভেদাভেদ ভুলে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের এক করা। তাদের সেবাদানে আরো বেশী আন্তরিক হওয়া। যেহেতু এমন করার কোনো উদ্যোগ বা সম্ভাবনা আপাতত দেখছি না তাই আমার এমন প্রশ্ন, দূতাবাস আসলে কাদের জন্য?
লেখকঃ পি আর প্ল্যাসিড, জাপান সাংবাদিক, সম্পাদকঃ বিবেক বার্তা
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST