বাকেরগঞ্জে ননএমপিও ভুক্ত প্রধান শিক্ষকের দাপট! নিয়ম বর্হিভূতভাবে এমপিওভুক্ত বিদ্যালয় স্থানান্তর

প্রকাশিত: ১:৪৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২৩

বাকেরগঞ্জে ননএমপিও ভুক্ত প্রধান শিক্ষকের দাপট! নিয়ম বর্হিভূতভাবে এমপিওভুক্ত বিদ্যালয় স্থানান্তর

বিশেষ প্রতিনিধি,

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের ২৬ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি এক বছর আগেও মুখর ছিল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পদচারনায়। দুধল ইউনিয়নের সুন্দরকাঠী গ্রামের জিপিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ২০১৯ সালে সরকারি এমপিওভুক্ত হয়। এ বিদ্যালয়ের সকল অবকাঠামো প্রাণহীনভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখন আর এখানে পাঠদান করানো হয়না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের ত্রুটি থাকায় বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক এমপিওভূক্ত হতে না পেরে ক্ষুব্দ হন। পরবর্তীতে সম্পূর্ন নিয়মবর্হিভূতভাবে রাতের আধাঁরে বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ও আসবাবপত্র সরিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তিতে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। এ বিষয়ে গত ১৩ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের নির্দেশে অধিদপ্তরের সহকারি শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ও সহশিক্ষা পরিদর্শক মোহাম্মদ ওয়ায়েছ আলকারনী মুন্সী সরেজমিন তদন্ত করেছেন। এসময় ভূক্তভোগী এলাকাবাসি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এমপিওভূক্তিরস্থানে জিপিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেন। এছাড়াও একই দাবিতে ইতোমধ্যে কয়েক দফায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে সুন্দরকাঠী গ্রামে স্থাপন করা হয় জিপিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছিল দুধল ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম যথাক্রমে-গোমা, পিলখানা ও সুন্দরকাঠী এলাকার নামের প্রথমাক্ষর দিয়ে। ওই তিন এলাকার শিক্ষানুরাগীদের উদ্যোগে স্কুলটি সুন্দরকাঠী গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালের ২৪ মার্চ স্থানীয় সমাজ সেবক মো. শামসুল আলম মন্টু বিদ্যালয়ের নামে ১৫০ শতক জমি রেজিষ্ট্রির মাধ্যমে দান করেন। তার মৃত্যুর পরে একমাত্র পুত্র অলি আহাদ ২০২২ সালে এই বিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের আরও ৪০ শতাংশ জমি দলিল করে দেন।

বিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের দাতা সদস্য মো. অলি আহাদ বলেন, প্রধানশিক্ষক আহসান হাবিব মোল্লার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে ত্রুটি থাকায় তিনি এমপিওভূক্ত হতে পারেননি। তাই যোগ্যতা সম্পন্ন নতুন প্রধানশিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছিলো। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানশিক্ষক সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে স্কুল ক্যাম্পাস স্থানান্তরের ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তিনি আরও বলেন, স্কুলটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করতে ম্যানেজিং কমিটি গঠণেও প্রধানশিক্ষক তার ভাইকে সভাপতি মনোনীত করে চরম অনিয়ম করায় শিক্ষাবোর্ড তা স্থগিত করে দেয়।

বিদ্যালয়ের জমিদাতা শিক্ষানুরাগী মো.শামসুল আলম মন্টু’র ছোট বোন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তহামিনা বেগম, আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, জাকির হাওলাদার, বজলুর রহমান, সোহেল খানসহ একাধিক ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মো. আহসান হাবিব মোল্লা তার বড় ভাই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে গোমা এলাকার তার বাড়ির পাশে নিজেদের সম্পত্তিতে ফার্ম করার ঘোষণা দিয়ে ভবন নির্মান করেন। পরবর্তীতে সেখানে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সরকারের অনুমতি ব্যতিত জিপিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরু করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত একপত্রে জিপিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক কর্তৃক অবৈধভাবে স্কুল ক্যাম্পাস স্থানান্তর করায় তিন কার্যদিবসের মধ্যে পূর্বের এমপিভুক্তির স্থানে স্থানান্তর ও শ্রেণি পাঠদান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সূত্রমতে, মাউশির এ আদেশ উচ্চ আদালতে রিট করে স্থগিত করেন প্রধানশিক্ষক আহসান হাবিব মোল্লা। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে গত ১৩ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর অলিউল্লাহ মো. আজমদগীর স্বাক্ষরিত একপত্রে অধিদপ্তরের সহকারি শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ও সহশিক্ষা পরিদর্শক মোহাম্মদ ওয়ায়েছ আলকারনী মুন্সী সরেজমিন তদন্ত করেন।

তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকারিভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে স্থানান্তর করায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি প্রধানশিক্ষক আহসান হাবিব মোল্লার পারিবারিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারণে ঐতিহ্যবাহী জিপিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ধ্বংসের মুখে পরেছে। স্থানীয়রা অবিলম্বে এমপিওভুক্তির স্থানে জিপিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, একটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান যে কেউ চাইলেই অন্যত্র সরাতে পারেনা। কারন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দূরত্ব সনদ এবং উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার দেওয়া জনসংখ্যার তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডের পরিদর্শন প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ এমপিওভুক্ত হয়। সেক্ষেত্রে সরকারি এমপিওভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বিনাঅনুমতিতে সম্পূর্ণ নিয়ম বর্হিভূতভাবে অন্যত্র সরানো সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, জিপিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকের পৈত্রিক সম্পত্তিতে বিদ্যালয় স্থানান্তর বিধিমোতাবেক হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার দাস জানান, বর্তমানে জিপিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি নেই। শিক্ষা বোর্ড কমিটি স্থগিত করেছেন। গত ১৩ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের নির্দেশে অধিদপ্তরের সহকারি শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ও সহশিক্ষা পরিদর্শক মোহাম্মদ ওয়ায়েছ আলকারনী মুন্সী সরেজমিন তদন্ত করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন আসলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে জিপিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. আহসান হাবিব মোল্লা বলেন, নিয়ম মেনেই স্কুলটি স্থানান্তর করা হয়েছে। এনিয়ে উচ্চাদালতে রিট করার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এখন যা হওয়ার আদালতের নির্দেশেই হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest