দুমকিতে কৃষকদের দেয়া ভর্তুকি মূল্যের কৃষি যন্ত্রপাতির হদিস নেই!

প্রকাশিত: ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০২৫

দুমকিতে কৃষকদের দেয়া ভর্তুকি মূল্যের কৃষি যন্ত্রপাতির হদিস নেই!

দুমকিতে কৃষকদের দেয়া ভর্তুকি মূল্যের কৃষি যন্ত্রপাতির হদিস নেই!

 

দুমকি(পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর দুমকিতে সরকারি ভর্তুকিমূল্যে দেওয়া বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র কৃষকদের মাঝে বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে এসব যন্ত্র দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তি, দালালদের। এ জন্য কৃষি কর্মকর্তাকে প্রতিটি যন্ত্রের জন্য দিতে হয় অর্থ। আর এসব কিছুর মূলে রয়েছেন খোদ দুমকি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এড. হারুন অর রশীদ হাওলাদার ও কৃষি কর্মকর্তা মেহের মালিকা। এমন পরিস্থিতিতে বিতরণ হওয়া বেশিরভাগ যন্ত্রের হদিসও মিলছে না।

জানা গেছে, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে সরকারি অর্থায়নে বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয় প্রায় দেড় কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতি। কিন্তু সরেজমিনে মাঠ পর্যায়ে এর বেশির ভাগ মেশিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

কৃষি যন্ত্রপাতি লাপাত্তা হওয়ার পেছনে মূল হোতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও তৎকালীন কৃষি অফিসের সাবেক কৃষি অফিসার মেহের মালিকা। তার সঙ্গে রয়েছেন উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা প্রয়াত আবু মুছা, উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা দুলাল দাস, লুৎফর রহমান ও মো: ইউনুচ।

সংশ্লিষ্ট নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সরকার থেকে ১টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার দেওয়া হয় পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ২৯টি পাওয়ার টিলার দেওয়া হয়েছে। এতে সুবিধাভোগী কৃষক হিসেবে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তারা অনেকেই কৃষক নন তবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদারের সমর্থক-কর্মী বলে জানা যায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কৃষিযন্ত্র সরবরাহের আগেই কৃষকের সঙ্গে কৃষি অধিদপ্তরের একটি চুক্তিপত্র করতে হয়। ওই চুক্তিপত্রে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ তিনজন এবং কৃষকের পক্ষে তিনজন সাক্ষীর স্বাক্ষরের পর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্বাক্ষর করে মেশিন সরবরাহ করার কথা।

কম্বাইন্ড হারভেস্টার বিতরণে অনিয়ম বড় ধরনের। একটি মেশিনে দুই লাখ থেকে প্রায় ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেয় সরকার। কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান তার পছন্দের কৃষক নির্বাচন করে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে ডাউন পেমেন্ট ৮ লাখ টাকা দিয়ে মেশিন এনে কৃষককে বুঝিয়ে দেন। কৃষকের প্রাপ্তি স্বীকার নিয়ে কোম্পানি সরকারের ভর্তুকির টাকা আবেদন করে আদায় করে থাকে। এরপরে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে ওই মেশিন বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করে নেন দুই পক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কৃষি কর্মকর্তা জানান, যারা মেশিনের জন্য আবেদন করেন তাদের মেশিন দেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু কেউ মেশিন নিয়ে কাজে লাগান আবার কোম্পানির লোকজন এই মেশিন দিয়ে ব্যবসা করেন।

ভর্তুকিমূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য এসিআই মোটরস লিমিটেড, আদি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মেটাল অ্যাগ্রিটেক লিমিটেড, বাংলা মার্ক, এসকিউ অ্যাগ্রিকালচার লিমিটেড ও কৃষিবিদ অ্যাগ্রিকালচার লিমিটেডসহ ৩৪ কোম্পানিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর এসব কোম্পানির সঙ্গে কৃষকরা চুক্তি করার আগে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিভিন্ন কোম্পানির লোকদের সঙ্গে দেন-দরবার শুরু করেন কে কত দেবেন। যে বেশি টাকা দেবে সেই কোম্পানির মেশিনই সরবরাহ করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে দুমকি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: ইমরান হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কৃষকদের মাঝে কৃষিযন্ত্র বিতরণ করার কথা বটে। তবে এটি তার সময়ে হয়নি। এর আগে যিনি ছিলেন তিনি ভাল বলতে পারবেন।

মোবাইল ফোনে সাবেক কৃষিকর্মকর্তা মেহের মালিকা বলেন, কোনো রকম অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। অনেক কৃষক যন্ত্র বরাদ্দ পেয়ে বিক্রি করে দিতে পারেন। ফলে অনেক যন্ত্র হয়তো মাঠে নেই।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এড. হারুন অর রশিদ হাওলাদারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest