ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা খাল দখলের মহোৎসব চালাচ্ছে। কলাপাড়ার বাদুরতলী খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, খালে পা ভিজালেও চলে নিযার্তন

প্রকাশিত: ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০

ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা খাল দখলের মহোৎসব চালাচ্ছে। কলাপাড়ার বাদুরতলী খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, খালে পা ভিজালেও চলে নিযার্তন
 মো.ওমর ফারুক, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা খাল দখলের মহোৎসব চালাচ্ছে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় দূযোর্গ ও জলোচ্ছাস থেকে মানুষের জানমাল রক্ষায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের ওয়াপদা বেড়িবাঁধ নিমার্ণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বেড়িবাঁধ নিমার্ণকালীন বাদুরতলী খালে পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে নিমার্ণ করা হয় স্লুইজ। স্লুইজ নিমার্ণ হলে জোয়ার ভাটায় খালে পানি ওঠা-নামা করায় খালের দুই পারের মানুষ দৈনন্দিন কাজসহ কৃষি জমিতে সেচ ও পানি নিস্কাশন ও খালের পানি ব্যবহার করতো। জেলা প্রশাসন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ও প্রায় একশ ফুট প্রস্থ্য বাদুরতলী খালটি কাগজপত্রে বদ্ধ খাল দেখিয়ে মাছ চাষের জন্য লিজ নেয়া হয়েছে । সরকারি খালটি দিয়ে প্রায় এক হাজার একর চাষের জমির পানি নিস্কাশন ছাড়াও পাঁচ শতাধিক পরিবার দৈনন্দিন কাজে পানি ব্যবহার করতো। খালের দুই পার দখল করে গড়ে উঠেছে একাধিক পাকা ও আধা-পাকা স্থাপনা। ড্রেজার বসিয়ে খাল দিয়ে কেটে নেয়া হচ্ছে বালু। এলাকাবাসী দীর্ঘ যুগ ধরে খালটি উম্মুক্ত করে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। বছরের পর বছর ধরে দূভোর্গে পোহাচ্ছে খালের পারের হাজার হাজার মানুষ। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান খালটি সরেজমিন পরিদর্শণ করে খালে বাঁধ দেয়া ও দখল করার দৃশ্য দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কলাপাড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) পৃথক অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগে এক ড্রেজার মালিককে এক মাস ও খাল ভরাট করায় এক দখলদারকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রধান করেছেন। দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা রয়ে গেছে বহাল তবিয়তেই। এতে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। প্রশাসনের সামনেই তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দাবি উঠছে খালের লিজ বাতিল করে জনগনের ব্যবহারের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়ার। গ্রামবাসীদের অভিযোগ বাদুরতলী খালের কলাপাড়া সরকারি বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতুর নিচে পানি আটকে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া খালের মধ্যে মাটি ভরাট করে, পাইলিং করে নিমার্ন করা হচ্ছে বসত ঘর। বাদুরতলী গ্রামের সেলিনা বেগম ও আবুল হোসেনসহ আরও অনেকে বলেন,খাল লিজ দেয়ার কারনে তারা হাঁস পর্যন্ত পালন করতে পারছেন না। হাঁস খালে নামলে তাদের বকাঝকা করা হচ্ছে। কেউ খালের পানিতে মাছ ধরাতো দূরের কথা পা ভেজাতেও এখন সাহস পাচ্ছেন না মাছ চাষীদের কারনে। ওই খালে মাছ ধরে একসময় শতশত মানুষ জীবিকা নিবার্হ করতো। এখন গোটা বাদুরতলী এলাকায় পানির সংকট। খালে ড্রেজার বসিয়ে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর। এ কারনে তাদের পানির জন্য যেতে হচ্ছে অনেক দূর পর্যন্ত । খালের পানি ব্যবহার করতে পারলে তারা সীমাহীন দূভোর্গ থেকে বাঁচতে পারতেন। এছাড়া খালে বাঁধ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক দেয়ায় এ পানি ব্যবহার করলে এখন শরীরে চর্মরোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। বাঁধের কারনে খালের পানি প্রবাহিত না হতে পারায় খালে কোথাও কোথাও ময়লার স্তুপ জমাট হয়ে আছে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে খালের পানি কালচে হয়ে যায়। খালের মধ্যে মাটি ফেলে ভরাট করার অভিযোগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুপ দাশ সরেজমিন পরিদর্শণ করে দখলদার সালাম মীরাকে পুলিশের সহায়তায় আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতেদ দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। কলাপাড়া উপজেলার বিদায়ী সহকারি কমিশনার(ভূমি) অনুপ দাশ জানান, সারাদেশের মতো কলাপাড়ার সকল নদী, খাল ও জলাধারা দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। খাল দখল করায় সালাম মীরাকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান জানান, খালে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় এক ড্রেজার মালিককে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। গ্রামবাসীরা খালের পানি ব্যবহার করতে পারছে না এ সংক্রান্ত অভিযোগ করেছেন। পযার্য়ক্রমে সকল দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest