রাজশাহীতে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারা মানছেন না সামাজিক দূরত্ব, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রকাশিত: ৬:০৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০২০

রাজশাহীতে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারা মানছেন না সামাজিক দূরত্ব, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
ওমর ফারুক, রাজশাহী ব্যুরো : বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ন্যায্য দামে পণ্য বিক্রি করছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার পর থেকেই রাজশাহী মহানগরীর দশটি পয়েন্ট টিসিবি ন্যায্য দামে মসুর ডাল, চিনি, তেল, ও ছোলা বিক্রি শুরু করে। টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু করার ক্রেতারা খোলাবাজারের চাইতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কম দামে কিনতে পাওয়ার কারণে টিসিবির ট্রাকের সামনে ভিড় জমায়। আর বর্তমানে সাড়া দেশব্যাপী চলছে করোনা আতঙ্ক। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর মানুষকে সচেতন করতে পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চালানো হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এখনো এসবের তোয়াক্কা করছে না। কিছু ক্রেতা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ইচ্ছা করলেও কিছু মানুষের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা লাইনে মানুষের কাছে দাঁড়িয়ে পড়ছে। গত কিছুদিন ধরে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে রাজশাহীর কাঁচাবাজার ও টিসিবির ট্রাকের সামনে। লাইনে শরীরের সাথে শরীর ঘেষে দাঁড়ানোর কারণে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকির। প্রত্যেকটি টিসিবির পণ্য বিক্রির স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। পুলিশ থাকার পরও অনেক সময় ক্রেতারা কোন কিছু তোয়াক্কা না করেই সামাজিক দূরত্বের বালাই না করে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার পর থেকেই দেশের অন্যান্য স্থানের মত রাজশাহী মহানগরীর দশটি পয়েন্টে গত ১৭ ই মার্চ থেকে টিসিবি ন্যায্য দামে চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও তেল বিক্রি করা শুরু করেছে। চলবে আগামী মে মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত। সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত টিসিবির পণ্য বিক্রির নিয়ম রয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিভিন্ন স্থানে টিসিবির পণ্য শেষ হয়ে যায়। অনেক সময় ক্রেতারা লাইন ধরে রয়েছে কিন্তু ট্রাকে পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকে পায়নি এমন চিত্র রয়েছে। জানা গেছে, চিনি ৫০ টাকা, ছোলা ৫০ টাকা, মসুর ডাল ৬০ টাকা কেজি ও সয়াবিন তেল ৮০ টাকা লিটার বিক্রি করছে টিসিবি। বিক্রি শুরুর প্রথম দিন থেকেই ক্রেতারা ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে এসব পণ্য কিনছেন। কোন কোন স্থানে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। আবার যেসব স্থানে প্রচুর রোদ পড়ে সেসব জায়গায় সামিয়ানা টানানো হয়েছে ক্রেতাদের সুবিধার্থে। এছাড়াও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গোল চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। অনেক স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই ক্রেতারা পণ্য কিনলেও কোন কোন স্থানে সামাজিক দূরত্ব উপর গুরুত্ব না দিয়ে নিজের ইচ্ছামত গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে গতকাল শনিবার রাজশাহী মহানগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, টিসিবির পণ্য কিনতে ক্রেতারা ট্রাকের সামনে লাইনে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তবে কিছু কিছু জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্রেতারা শান্তিপূর্ণভাবে পণ্য কিনছেন। আর কিছু কিছু স্থানে ক্রেতারা হুড়োহুড়ি গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন। নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার বড় মসজিদের সামনে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এদিন সকাল থেকেই ক্রেতারা টিসিবির পণ্য কেনার জন্যবলাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। এখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ মাঝেমধ্যে তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করলেও তারা শুনছেন না। তবে ওখানে সংলিষ্ট থানার ওসি গিয়ে লাইন ঠিক করেন। তবে ওসি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আবারো আগের মত হয়ে যায়। সাহেব বাজার ছাড়াও নগরীর আরো একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লক্ষ্মীপুর। লক্ষ্মীপুর পুলিশ বক্সের কাছে টিসিবি পন্য বিক্রি করে। এখানেও দেখা যায় ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই নিজেদের ইচ্ছামত গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনছেন। অন্যান্য স্থানের ন্যায় এখানেও ছিল পুলিশ। তবে অনেক ক্রেতার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব না মানার প্রবণতা দেখা গেছে। এ নিয়ে সচেতন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, এত প্রচার-প্রচারণার পরেও কেন মানুষ সচেতন হচ্ছে না। সচেতন হলে নিজের পরিবার ও এলাকাবাসীর সহ দেশবাসীকেও সুরক্ষা রাখা সম্ভব। তাই তারা এসব মানুষকে সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ট্রেডিং কর্পোরেশন টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয় রাজশাহী অফিস প্রধান প্রতাপ কুমার বলেন, ক্রেতাদের সুবিধার্থে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য গোল চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। আবার যেসব জায়গায় রোদ বেশি সেখানে সামিয়ানা টাঙিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার এসব বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য প্রত্যেক পয়েন্টে পুলিশ রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার সচেতন করা হচ্ছে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা ক্রেতাদের। কিছু মানুষ এখনো নিয়ম মানছে না। নিয়ম না মানলে আমাদের আর কি করার আছে? সকলকে আমি সামাজিক গুরুত্ব বজায় রেখে টিসিবির পণ্য কেনার জন্য অনুরোধ করছি। যাতে কারো জন্য কেউ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।

alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest