নাটোরে শখের কবুতরে সফল ব্যবসায়ী তরুন যুবক মন্নাফ

প্রকাশিত: ১:৪৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২০

নাটোরে শখের কবুতরে সফল ব্যবসায়ী তরুন যুবক মন্নাফ

এস ইসলাম, নাটোর জেলা প্রতিনিধি।

কবুতরকে বলা হয় শান্তির প্রতীক। একসময়কার রাজা-বাদশাদের ও প্রেমিক প্রেমিকার বার্তাবাহক হিসেবে কবুতর ব্যবহার ছিলো অপরিসীম। কিন্তু এখন শখের বসে অনেক তরুণ কবুতর পালন করেন। কবুতর বিক্রি করে নিজেদের পকেট খরচের ব্যবস্থা করেন। সৌখিন কবুতরপ্রেমী অনেকের সফলতাই বলার মতো। সে রকমই একজন নাটোরের সিংড়া উপজেলার চকসিংড়া মহল্লার মোঃ আব্দুল মন্নাফ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসার পাশাপাশি অল্প সময়ে কবুতর পালনে সফলতা পেয়েছেন। বর্তমানে দুটি কবুতর ফার্মের মালিক তিনি।

শুরুটা দুই জোড়া কবুতর দিয়ে হলেও এখন তার কবুতরের সংখ্যা পঞ্চাশ জোড়া ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় বিশ বছর আগে শুরু করা শখে কবুতর পালন এখন আর শখে সীমাবদ্ধ নেই, পরিণত হয়েছে পেশায়। খরচ বাদে বর্তমানে তার মাসিক আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

শুরুর গল্পটা একটু ভিন্ন। আব্দুল মন্নাফ তখন ছোট। প্রতিবেশি আত্নীয়দের বাসায় রং-বেরংয়ের কবুতর দেখে কবুতর পালনের ইচ্ছে জাগে। কিন্তু তার মা বাধা দিতেন। একবার ঈদের সালামির টাকা জমিয়ে চাচাতো ভাইদের নিয়ে গেলেন হাটে। ২০০ টাকা দিয়ে দুই জোড়া কবুতর নিলেন। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ কবুতর কিনতে ও প্রশিক্ষণ নিতে আসে মন্নাফ এর কাছে। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব কবুতরের দাম কম রাখেন। অনলাইনেও কবুতর বিক্রি করেন তিনি। ফেঞ্চি কবুতর পালন করার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘ফেঞ্চি কবুতরের চাহিদা বেশি, এরা খুব ভালো মানের ডিম দেয় ও বাচ্চা ফোটায়। ২ মাসে এদের বাচ্চা বিক্রি করার উপযোগী হয়। অবশ্য অনেকে এক মাসের বাচ্চাও বিক্রি করে।

তার কাছে ইন্ডিয়ান ফান্টেল, লাহোর কালো, হলুদ। তুরিবাজ লাল,কালো, এলমন্ড, ইন্ডিয়ান নোটন, দেশি লোটন, বাশিরাজ কোকা, মাক্সি রেচার হুমা, সবজে গিরিবাজ, লাল,সাদা, হলুদ বোম্বাই, আমেরিকান সো কিং, কালদম, মুক্ষি লাল, হলুদ, কালো, সিলভার, কফি, ঝরনা শাটিন, ল্যাভেন্ডার সুয়া চন্দন ইত্যাদি প্রজাতির কবুতর রয়েছে। এছাড়া লাভবার্ডর, কোকাটেল, জাভা, বাজরিগার পাখি রয়েছে।

মন্নাফ এর কবুতরের খামারের নাম ‘’মন্নাফ-শারমিন পিজিওন এন্ড বার্ড গার্ডেন’’। তিনি বাগানের পাশে একটি বড় ঘরে খাঁচায় কবুতর পালন করেন। কিছু কবুতর ছেড়েও পালন করেন। তিনি বলেন, ‘দেশে অসংখ্য ছাদ ফাঁকা পড়ে আছে। এসব ছাদে ঘর তুলে যে কেউ অনায়াসে কবুতর পালন করতে পারে। তার মতে, অনেকেই হতাশ হয়ে মাদক, নেশায় জড়িয়ে পড়ে। তারা দু-এক জোড়া কবুতর দিয়ে শুরু করতে পারেন। কবুতর বিনোদনের অন্যতম উৎস। এরা খুব শান্ত ও মায়াবী পাখি। মানুষের সহচার্য খুব পছন্দ করে। যুবসমাজ অবসরে বাজে নেশায় না জড়িয়ে কবুতর পালন করতে পারে।

আব্দুল মন্নাফ জানান, বাণিজ্যিকভাবে এই কবুতর পালন করা সম্ভব। বেকার যুবকরা কবুতর পালন করে স্বর্নিভর হতে পারে। তবে এজন্য একটু জেনেশুনে নেওয়া ভালো। ভালো কোয়ালিটির লাহোর বা ফান্টেল কবুতর বেশ লাভজনক। সব সময় এসব প্রজাতির চাহিদা থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোতে আমাদের দেশের কবুতরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই সরকারি সহযোগিতা পেলে কবুতর রফতানি করে বছরে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কবুতরের অসুখ হলে তিনি নিজেই চিকিৎসা করেন। মন্নাফের স্ত্রী শারমিন জাহান ও বাবা-মা তাকে কবুতর পালনের কাজে সহায়তা করে। তার মতে, ফেঞ্চি কবুতর পালনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এস এম খুরসিদ আলম জানান, আব্দুল মন্নাফ একজন সফল খামারি। শখের বসে শুরু করলেও এখন সে সফল। এছাড়াও এ উপজেলায় শতাধিক কবুতর খামারি রয়েছে। তাদেরকে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি। খামারিরা চাইলে আমরা সকল রকম পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে আগ্রহী।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest