বরিশালে ডিজিটাল বাংলাদেশ এ ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের গুরুত্ব শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত l

প্রকাশিত: ৯:১০ অপরাহ্ণ, জুন ৬, ২০২১

বরিশালে ডিজিটাল বাংলাদেশ এ ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের গুরুত্ব শীর্ষক সেমিনার  অনুষ্ঠিত l

পারভেজ,বরিশাল প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এই মানুষদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) অবদান রাখতে পারছে না। মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। আমাদের দেশের কর্মক্ষম বেকার মানুষদের যদি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ করে গড়ে তোলা যায় তবে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের এই মোহনায় নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) বরিশাল কার্যালয়ে আজ রোববার সকালে অনুষ্ঠিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের গুরুত্ব’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। এ সময় তারা বলেন, ‘বর্তমান সময়ে মানুষের কর্মক্ষেত্র মূলত তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। তাই এই খাতে দক্ষ মানুষদের চাহিদা চাকরির বাজারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
এছাড়া উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে কেউ যদি পরিচিত করতে চায় তার জন্য তথ্য – প্রযুক্তিখাত অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। কারণ এই খাতে মূলধন কিংবা অবকাঠামোর প্রয়োজন খুব বেশি প্রয়োজন নেই।শুধুমাত্র দক্ষতা এবং মেধা কাজে লাগিয়ে যেকেউ এ খাতে নিজেকে দাঁড় করাতে পারছে।

বিশেষ অতিথি স্থানীয় সরকারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্বের দেশসমূহ অনেক কঠিন কাজকে সহজ করে নিয়েছে যেমন-কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা কিভাবে বাড়াতে হবে,শরীরের রোগ নির্ণয়ে মেশিন বলে দিচ্ছে কি করতে হবে এবং কি করব। তিনি আরো বলেন ,যে বর্তমান ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে টিকে থাকতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী করতে হবে। যাহাতে Automation পদ্ধতি সমূহকে চালনা করা সম্ভব হয়।

এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে নতুন নতুন গবেষণা ও জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে যে সকল জনবল আছে ৪র্থ শিল্পবের কারণে তখন এই সকল জনবলগুলো প্রয়োজন হবে না তখন টেকনিক্যাল নলেজ সম্পর্কিত ব্যক্তির প্রয়োজন বেশি দেখা দিবে তাহলে এ সকল জনবল গুলোকে প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। যদি আমরা এ কাজগুলো করতে পারি তাহলে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারব। উক্ত সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলজী বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাঃ আব্দুল মাসুদ। তিনি ৪র্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে বলেন, তার ধারনায় ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে Skilled manpower যারা হবে তারা Jobless হবে না এবং তাদের salary অনেক উচ্চ হবে এবং বাহিরেও তাদের Skilled কে কাজে লাগাতে পারবে। সেজন্য আমাদের একাডেমিয়ায় এ সকল Skill manpower তৈরী করতে হবে ও প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে এবং কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। এ সকল বিষয়ে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা থাকতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ IT enable দক্ষ জনশক্তি তৈরী করতে পারব বলে আশা করা যায়। তার বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় সেমিনারে যুক্ত বিভিন্ন অফিস এর কর্মকর্তাগণ এবং শিক্ষকবৃন্দ উম্মুক্ত আলোচনা করেন। উক্ত আলোচনায় ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের গুরুত্ব নিয়ে বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাদের সামনের দিনগুলোতে কি করণীয় তা উঠে আসে। আসন্ন ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে চাইলে তথ্য- প্রযুক্তিগত জ্ঞান আহরণের কোনো বিকল্প নেই। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, উদীয়মান প্রযুক্তির সংমিশ্রণ এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট এই তিন বিষয়ে দক্ষতা যেকোনো রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে দেওয়া শুরু করেছে।

সেক্ষেত্রে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রয়োজন এবং ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞানার্জন গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার নিজ মেয়াদের একদম শুরু থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মাধ্যমে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে এবং রাজশাহী, খুলনা, সিলেট,চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, রংপুর ও বরিশালের আঞ্চলিক কার্যালয়ে নিয়মিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম রাখা হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে নিজেদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে।

কম্পিউটার কাউন্সিল আঞ্চলিক কার্যালয়, বরিশাল এর হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও সেন্টার ইন চার্জ মোহাম্মদ জসীম ডিজিটাল বাংলাদেশে-৪র্থ শিল্প বিপ্লবের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারনা করেন তিনি বলেন,বিসিসি,বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরেন- তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর মানব সম্পদ উন্নয়ন, এই কার্যালয় কি কি ভূমিকা রেখেছে তা তুলে ধরেন এছাড়া মাঠ পর্যায়ে স্থাপিত নেটওয়ার্ক ও বর্তমান কোভিড-১৯ অবস্থায় ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে পরস্পর বিভিন্ন অফিস যোগাযোগ স্থাপনে বিভিন্ন প্রকার সহায়তা প্রদান করে আসছে বলে তিনি জানান। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অকেজো ঘোষণা করন সহ, জনবল নিয়োগে সহায়তা প্রদান এবং বিসিসির প্রকল্প সমূহ বাস্তবায়নে সহায়তা করণসহ আরো বিভিন্ন কাজ তুলে ধরেন।

বিসিসি বরিশাল কার্যালয়ের সেন্টার ইনচার্জ মো.জসিমের সভাপতিত্বে উক্ত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিসি সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মো. রেজাউল করিম, বিশেষ অতিথি স্থানীয় সরকারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম, কম্পিউটার কাউন্সিল আঞ্চলিক কার্যালয়, বরিশাল এর হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও সেন্টার ইন চার্জ মোহাম্মদ জসীম ,মুখ্য আলোচক হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বিসিসি পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) মো. এনামুল কবির, আলোচক পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহা.আব্দুল মাসুদ, সেমিনারে বিসিসি কার্যালয়ের ভার্চুয়াল জুম প্লাটফর্মে যুক্ত ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন একাডেমিয়া ও কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধিবৃন্দ,প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest