গুমের অব্যাহত পরিস্থিতিতে ঘন অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ৪:৩৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০২১

গুমের অব্যাহত পরিস্থিতিতে ঘন অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে দেশ

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশ এখন দুঃশাসনে ডুবে গেছে। আন্দোলন ছাড়া চোখের জল এই সরকারের গদি নড়াতে পারবে না। প্রতিবছরই এখানে আসলেই স্বজনদের কান্না দেখি। কান্না কোন সমাধান নয়। আন্দোলনই এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে পারে। দুর্নীতিতে সারাদেশ ছেয়ে গেছে। করোনা কালীন সময়েও যারা দুর্নীতি করেছে তাদের সেভাবে বিচার করতে পারছে না। কারণ দুর্নীতির উপর ভর করেই জনগণের ভোট ছাড়া এই সরকার ক্ষমতায় রয়েছে।

৩০ আগস্ট, ২০২১ সোমবার গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে মায়ের ডাক এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেস অডিটোরিয়ামের আলোচনা সভায় গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের উপস্থিতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

মায়ের ডাক এর সভাপতি হাজেরা খাতুনের অসুস্থ্যতার কারণে তার বড় মেয়ে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসির সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, মানবাধিকার নেতা নুর খান লিটন, বিএনপি’র মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এড. আসাদুজ্জামান, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, অধিকার’র পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ কমিটির সম্পাদক হাসিবুর রহমান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া, মাইকেল চাকমার পক্ষে সুভাশীষ চাকমা, সাজেদুল ইসলাম সুমনের মেয়ে হাফসা ইসলাম রাইতা, আনোয়ার হোসেনের মেয়ে রাইসা, গুম থেকে ফেরত আসা মেহেদী হাসান রুয়েল, লক্ষীপুরের গুম ওমর ফারুকের ছেলে ইমন ওমর, কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল আলী বাতেনের মেয়ে ইনশা, গুম আব্দুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী, গুম মনির হোসেনের ভাই শহীদ হোসেন, গুম নুর আলমের ছেলে প্লাবন, সাইফুর রহমান সজীবের পিতা শফিকুর রহমান, ইসমাইল হোসেনের মা শিরিন আক্তার, মো. হাবিবুর রহমানের মেয়ে জেসমিন বেগম, বাপ্পির বোন ঝুমুর আক্তার, তপন দাসের স্ত্রী সুমি রানী দাস, ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী নাসিমা আক্তার স্মৃতি, মনির হোসেনের ভাই শহীদুল্লাহ, ড্রাইভার কাউসারের মেয়ে লামিয়া মীম, গুম হওয়া সেলিম রেজা পিন্টুর বড় বোন রেহেনা বানু মুন্নি-সহ প্রায় গুম হওয়া শতাধিক পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। এসময় সূচনা বক্তব্য রাখেন মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখি।

এসময় গুম সদস্যদের পরিবারের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সানজিদা ইসলাম তুলি, আনোয়ার হোসেন মাহবুবের স্ত্রী রিনা ও তার মেয়ে রাইসা, পল্লবীর নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম, এস.এম সানাউল্লাহ সানার স্ত্রী নাজনীন, তরিকুল ইসলাম তারার স্ত্রী বেবী আক্তার, ছেলে ওয়াজিদ ইসলাম তাহসিন, আল আমিনের ভাই রুহুল আমিন, জাহিদুল করিম তানভিনের বোন আফরোজা ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের ভাই মো. ইমদাদ, মো. আদনান চৌধুরীর মা কানিজ ফাতেমা, নুর হোসেন হিরুর ভাই আমজাদ হোসেন, এরশাদ আলীর স্ত্রী নাসরিন বেগম, মো. জাকির হোসেনের ভাই ইকবাল হোসেন, নিজাম উদ্দিন মুন্নার ভাই রাজু, কাজী ফরহাদ হোসেনের ভাই আমানসহ প্রমুখ।

রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তপু’র মা খুব অসুস্থ থাকায় উপস্থিত হতে পারেনি। তার ভাই কামাল হোসেনকে অনুষ্ঠানস্থলে পাঠালে পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।

বক্তারা বলেন, ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া থেকে সমস্ত ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। এই দিনকে সামনে রেখে আজ গুম হওয়া ব্যক্তিদের প্রায় শতাধিক পরিবারের স্বজনরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন এবং আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠানে তারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ করে এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবির পাশাপাশি বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের নামে নাগরিকদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা ও হেফাজতে নির্যাতনসহ সকল রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানায়।

রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কর্তৃক গুম ও বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা হলো রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের চরম বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু নিপীড়নকারী রাষ্ট্র শুধু গুম বা ক্রসফায়ারের মতো হত্যাকাণ্ডই ঘটায় না। সমাজের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ভিন্নমত ও শাসকচক্রের স্বার্থবিরোধীতাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এমন কোন কাজ নেই, যা তারা করে না। একটি জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কারণে গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার শিকার ব্যক্তিদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলো রাষ্ট্রের রোষানলে পড়ছেন। তাই একটি জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সবধরনের অন্যায়-অবিচারের প্রতিকার করে ন্যায়ভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভিক্টিম পরিবারগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

গুমের শিকার ব্যক্তিদের প্রতিটি পরিবারের গল্পই প্রায় এক। সবার একটিই চাওয়া- ফিরে আসুক তাদের প্রিয় স্বজন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের কাউকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকে, আবার কাউকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে পরিবারগুলো।

এবং তদন্ত কমিশন গঠন করে গুমের প্রত্যেকটি ঘটনার তদন্ত করে এর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মানবাধিকার কর্মীদের মতে গুমের শিকার ব্যক্তিরা কে কোথায় কি আছেন তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্র যদি সে দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে তা হলে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া এবং একই সাথে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা কঠিন হবেনা।


মুজিব বর্ষ

Pin It on Pinterest