ঢাকা ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২২
সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রাম।।নির্মাণের তিন মাসের মধ্যেই উল্টে গেছে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতু। গত তিন বছরে প্রশাসন থেকে একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন, প্রশাসন ও দুদক থেকে তদন্তের কথা বলা হলেও গ্রামের মানুষের ভোগান্তির সমাধান হয়নি। মেলেনি প্রতিকার। ফলে নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করেই ড্রামের ভেলা তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছে মানুষ।
প্রশাসন বলছে, বড় বাজেট না থাকায় নতুন করে ব্রিজ নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় সব বয়সী মানুষজনের ভোগান্তির চিত্র। দড়ি দিয়ে ড্রামের ভেলা টেনে খাল পারাপার করছে তারা। এখন পানি কম থাকায় পারাপারে সমস্যা কম হলেও বর্ষা মৌসুমে ভীষণ ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। খালে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় ড্রামের ভেলা ভেসে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। তখন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে পারাপার করতে হয়। অনেক সময় পানিতে পড়ে যায় তারা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষিকাজে জড়িত মানুষ এবং গুরুতর রোগীদের এসময় ভীষণ সমস্যায় পরতে হয়। নির্মাণের তিন মাসের মধ্যেই সেতুটি দেবে যাওয়ায় এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয় গ্রামবাসী। বড় ধরনের অনিয়ম হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা করা হয়নি। সাজা হয়নি দায়ী ব্যক্তিদের। ফলে হতাশ এই এলাকার মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে খালের উপর দিয়ে আবাসনে যাওয়ার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অধীনে ৩০ লক্ষ ৭৭ হাজার ৬৫৬ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতু। ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাজটির তদারকি করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটিএম দেলোয়ার হোসেন টিটু সেতুটি নির্মাণ করেন। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মাত্র দুইতিন মাসের মধ্যে সেতুটি দেবে গিয়ে উল্টে যায়। পরে বন্যার পানির চাপে সেতুর সংযোগ সড়কও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে স্বপ্নের সেতুর এমন পরিণতিতে পূর্বের ভোগান্তিতে পরেছে এলাকার মানুষ। প্রতিদিন এই খালের উপর দিয়ে পারাপার করা শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাষাবাদকারী, অসুস্থ রোগী ও সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। গত তিন বছর ধরে দেনদরবার করেও মেলেনি সমাধান। ফলে নিজেদের উদ্যোগে ড্রামের ভেলা করে ঝুঁকির মধ্যে পারাপার হচ্ছেন তারা। এই খালে টেকসই ব্রিজ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।
স্থানীয় অধিবাসী কামরুল, হাসান আলী ও মজিবর রহমান জানান, নিম্ন মানের কাজের ফলে ব্রিজটি ভেঙে দেবে গেছে। অথচ অফিস বলছে বন্যায় ভেঙে গেছে।
ওই এলাকার শিক্ষার্থী নুশরাত, হামিদা ও জান্নাতী জানায়, ইদের আগের দিন ব্রিজটি ভেঙে যায়। আমাদের সব আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। এখন আমাদের কষ্ট করে খাল পারাপার হতে হচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও গ্রামবাসীর কষ্ট দূর করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে দায় এড়িয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত জানান, বন্যার কারণে ব্রিজটি ভেঙে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও দুদক থেকে তদন্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনারা খোঁজখবর নিতে পারেন। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তীতে বড় ধরনের কোনো প্রকল্প প্রস্তাবনা নেওয়া হলে আমরা উক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানে পদক্ষেপ নিব।
ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে বাঁশের সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST