ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স অচল আহতকে শেবাচিম পৌঁছে দিলেন পুলিশ সুপার

প্রকাশিত: ১০:৪৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩

ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স অচল আহতকে শেবাচিম পৌঁছে দিলেন পুলিশ সুপার

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ

ঝালকাঠিতে গত ১১ই সেপ্টেম্বর সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় আহত এক যুবককে ঝালকাঠি হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে রেখে পালিয়ে যায় দুই যুবক। দৈনিক ঝালকাঠি বার্তার দৈনিক দূরযাত্রার সংবাদ কর্মী বিষয়টি নিয়ে নিজ নিজ ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করলে কিছুক্ষণ পরে আহতের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। আহত যুবক ঝালকাঠি শহরের সুতালড়ি এলাকার ফারুক মিনার ছেলে রাকিব (২৮) বলে নিশ্চিত করেন আহত যুবকের স্বজনরা। পরিবারের স্বজনরা হাসপাতালে আসার পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

রাত বারোটার সময় এ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফায়ার সার্ভিসের টীম লিডার মো: শহীদুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানাচ্ছি। পরবর্তীতে তিনি ফোন করে আহতের পরিচয় জেনে কোথায় আসতে হবে জানতে চান। আহত ব্যক্তি সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে আছে জানালে তারা বলেন আমরা আসছি।

এদিকে এ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় অসুস্থ যুবককে নিয়ে সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে স্বজনরা। রাত পৌনে ১ টার সময় ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস থেকে জানানো হয় তাদের এ্যাম্বুলেন্স চালু হচ্ছে না। এ্যাম্বুলেন্স না আসায় যুবকের স্বজনরা দিশেহারা হয়ে যান। তারা বলেন, একটি সরকারি হাসপাতালে কোন এ্যাম্বুলেন্স নেই, পাশাপাশি ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের এ্যাম্বুলেন্সটিও বিকল। এসকল বিষয় কি দেখার কেউ নেই?

পরবর্তীতে এ্যাম্বুলেন্স সংকটের কথা পুলিশ সুপারকে জানান সেখানে উপস্থিত থাকা দৈনিক ঝালকাঠি বার্তার সংবাদ কর্মী। বিষয়টি জানার পরপরই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল ঝালকাঠি জেলা পুলিশের এ্যাম্বুলেন্সটি দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে রাত ১টার দিকে আহত যুবককে ঝালকাঠি জেলা পুলিশের এ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের এ্যাম্বুলেন্স এর বিষয়ে জানতে আজ দুপুরে ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ে গেলে উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ ফিরোজ কুতুবী সাংবাদিকদের সাথে দেখা না করে তার ব্যক্তিগত রুম থেকে ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে সাংবাদিককে জানান, ‘আমি এখন সাংবাদিকদের সাথে দেখা করতে পারবো না, বললেই কি সব সময় তাদের সাথে কথা বলতে হবে। আমি খুব ব্যস্ত আছি দরকার হলে তাদেরকে পরে আসতে বলেন।

পরে ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিসের এ্যাম্বুলেন্সগুলো ২০১৪ সালে চীন থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে গাড়ির যন্ত্রাংশের ক্ষয় হয়েছে। এসকল যন্ত্রাংশ সচরাচর বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও জানান, ফায়ার সার্ভিসের জন্য ৩৫৪টি নতুন এ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার বিষয়ে একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসে থাকা পুরোনো এ্যাম্বুলেন্সগুলো জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে চালানো হচ্ছে।

কিছুদিন পূর্বে বৈদারাপুর এলাকায় একটি বাচ্চা পানিতে ডুবে যায়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস এর কাছে এ্যাম্বুলেন্স চাওয়া হলে একই সমস্যার কারণে মেলেনি এ্যাম্বুলেন্স। ছেলেটির পরিবারের অভিযোগ সঠিক সময় এ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় তাকে সময় মত হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। অটো রিক্সায় করে ছেলেটিকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত ছেলেটিকে নিয়ে তার স্বজনরা ফায়ার সার্ভিস কার্যালয় এসে এ্যাম্বুলেন্স না পাঠানোর কারন জানতে চাইলে উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ ফিরোজ কুতুবী ছেলেটির স্বজনদের সাথে অশোভন আচরণ করে তাদেরকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন। বিষয়টি নিয়ে স্বজনরা উত্তপ্ত হলে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এদিকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ রয়েছে। সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহমেদ জানান, তেল সংকটের জন্য এক মাসের বেশি সময় ধরে এ্যাম্বুলেন্স চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত কোন জ্বালানি তেল বরাদ্দ হয়নি। তেল বরাদ্দ পেলেই পুনরায় চালু করা হবে।

জেলা পুলিশের এ্যাম্বুলেন্স পেয়ে আহতের বড় ভাই বলেন, এত রাতে পুলিশের এ্যাম্বুলেন্স না পেলে আমার ভাইকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। এজন্য তিনি জেলা পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

 

 

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় ঝালকাঠি জেলা পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত আছে। যেকোনো সমস্যা বা জরুরী মুহূর্তে জেলা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।

 

উল্লেখ্য, সাগরনন্দিনী-২ জাহাজে অগ্নিকান্ড ও সম্প্রতি ধানসিড়ি এলাকায় ‘বাসার স্মৃতি’ নামের বাস উল্টে পানিতে ডুবে দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ায় আহতদের উদ্ধার ও হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য জেলা পুলিশের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়।


alokito tv

Pin It on Pinterest