হারিয়ে যাচ্ছেন রং তুলির জাদুকররা

প্রকাশিত: ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০২৩

হারিয়ে যাচ্ছেন রং তুলির জাদুকররা

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ

অক্ষরেই জাদু,অক্ষরেই আবেগের সম্মিলন। লেখায় সৌন্দর্য আনাই কারো নেশা কারও আবার পেশা। কালের বিবর্তনে একসময় এটি জনপ্রিয় পেশাতে রুপ নেয়। তবে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ডিজিটাল সাইনবোর্ড ও ব্যানারের প্রভাবে কদর কমে যাচ্ছে মূল ধারার এই শিল্পিদের। তাই হারিয়ে যাচ্ছে একটি পেশা।
সারা বছর টুকটাক ব্যস্ত সময় পার করলেও জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে ব্যানার ফেস্টুন তৈরিতে যারা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করতেন তারা আজ কাজের অভাবে নিজ পেশা ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। নলছিটিতে বর্তমানে কয়েকজন নামে মাত্র টিকে আছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশে কাপড়ের উপর হাতের লেখা সেই নিপুন ব্যানার এখন অতীত হয়ে গেছে। একসময় যাদের রং তুলির আঁচড়ে নানা ধরনের ব্যানারের লেখা শোভা পেত শহরের সড়কের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আবার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড থেকে শুরু দেয়ালিকায় শোভা পেত বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা তারা আজ হারিয়ে যেতে বসেছেন। যান্ত্রিকতার এই যুগে হারিয়ে যাচ্ছে রং আর তুলির কারুকাজ ও এর সাথে জরিত শিল্পিরা। এখন অল্প টাকায় স্বল্প সময়ে প্যানাপ্লেক্সের তৈরি বিভিন্ন ধরনে ব্যানার ফেস্টুন পাওয়া যাচ্ছে। আবার ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ঝুঁকছেন ডিজিটাল ব্যানারে দিকে।
উপজেলার মোবাইল ব্যবসায়ী নয়ন হোসেন জানান, আমি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল সাইনবোর্ড ব্যবহার করি। তাতে আমার খরচ বেশি পরে এবং বিদ্যুৎ বিলও গুনতে হয়। তবে এটা রং তুলি দিয়ে তৈরি কাজের চেয়ে অনেক চকচকে তাই সহজেই সবার দৃষ্টি কারে তাই এটা ব্যবহারকেই ব্যবসায়ীরা এখন বেশি প্রধান্য দিচ্ছেন।
নলছিটি উপজেলার পরিচিত মুখ শিল্পি শাহিন আহমেদ জানান, একসময় সারাবছরই অল্প হলেও ব্যস্ততা থাকতো আবার নির্বাচনকালীন সময়ে কাজের প্রচুর চাপ থাকতো তখন বিভিন্ন প্রার্থীর ব্যানার, ফেস্টুন, দেয়াল লিখনের মাধ্যমে খুবই ব্যস্ত সময় পার করতাম তখন আমাদের কদরও ছিল অনেক। তবে বর্তমানে রং তুলির শিল্পিদের সেই রমরমা অবস্থান আর নেই। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যানার ফেস্টুন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণার কারনে শিল্পিদের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে গেছে। প্রযুক্তির সাথে আমরা পেরে উঠছি না মানুষজনও টাকা ও সময়ের কথা চিন্তা করে প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি প্যানাপ্লেক্সের বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ফেস্টুন করে তাদের প্রয়োজনীয়তা মিটাচ্ছেন। আবার অনেকে ইলেকট্রিক ডিজিটাল ব্যানার ব্যবহার করছেন।
ইউনুচ আলী হাওলাদার জানান, আমি নলছিটিতে অনেক আগ থেকেই আর্ট পেশার সাথে জরিত মূলত বিভিন্ন দোকানের সাইনবোর্ড ও ব্যানার লিখতাম। তবে এখন কাজের সংখ্যা খুবই কম এখন সবাই তিন থেকে চারশ টাকার মধ্যে একটা প্যানাপ্লেক্সের ব্যানার লিখে এনে সহজেই দোকানের সামনে সাটিয়ে দিচ্ছেন। ঠিক একই কাজ আমাদের দিয়ে করাতে রং ও মজুরিসহ কম করে হলেও একহাজার টাকা দিতে হবে। তাই অনেকেই খরচ ও সময় বাঁচানোর জন্য আমাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন না। যদিও আমাদের রং দিয়ে তৈরি কাজের স্থায়িত্ব অনেক বেশি ও পরিবেশবান্ধব। আর প্যানাপ্লেক্সের তৈরি সাইনবোর্ড ও ব্যানারে যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এর স্থায়িত্বও তুলনামূলক কম। সবমিলিয়ে আমাদের আর্ট শিল্পিদের খারাপ সময় যাচ্ছে। তাই এই পেশার সাথে জরিত মানুষের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
সাংস্কৃতিক কমী মাইনুল ইসলাম সুজন বলেন, রং তুলির শিল্পিরা বাঙালি ঐহিত্যের ধারক ও বাহক বর্তমানে তারা এই পেশায় নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারছেন না। তারা শুধু ব্যানার ফেস্টুন তৈরি না বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাঙালির কৃষ্টি কালচারকে রং তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন। প্যানাপ্লেক্স দিয়ে যেসব জিনিস তৈরি করা হচ্ছে সেগুলো পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরও বটে। তাই সরকারের উচিত এসব শিল্পিদের টিকিয়ে রাখতে প্যানাপ্লেক্সের তৈরি ব্যানার ফেস্টুনের ব্যবহার সীমিত করা বা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেয়া।
নলছিটি পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ওয়াহেদ খান বলেণ, একসময় আমরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে হাতে লেখা ব্যানার ব্যবহার করতাম তখন তাদের সুদিন ছিল। বর্তমানে এখন আর তাদের দিয়ে কেউ লেখালেখির কাজ করাতে চান না। তাই তাদের এখন দূর্দিন যাচ্ছে। সমাজের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকাই সবচেয়ে ভালো তাই তাদের নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে। তাদের ব্যাপারে করনীয় ঠিক করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest