বেলতলা খেওয়া ঘাটের দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ৪:০৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০

বেলতলা খেওয়া ঘাটের দুর্ভোগ
শফিউর রহমান কামাল বরিশাল ব্যুরো ঃবরিশাল নগরীর ৫ নং ওয়ার্ডস্থ বেলতলা খেয়া পারাপারে যেন অনিয়ম বাঁধ ভেঙেছে। বাঁধ ভাঙা অনিয়মের সাথে সাথে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে নানা দুর্ভোগ। দুর্ভোগের সাথে সাধারণ মানুষকে গুনতে হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া। ফলে চরমোনাই ইউনিয়নের হাজারো মানুষকে প্রতিনিয়তই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ নিয়ে যাত্রীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও হয়রানির ভয়ে নিশ্চুপ থাকতে হচ্ছে তাদের। দুর্ভোগের কারণে চরমোনাই ইউনিয়নের নিয়মিত যাত্রীরা বিকল্প পথে যাতায়াত করছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, বেলতলা খেয়াঘাটে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে চরবাড়িয়ার প্রায় শেষ সীমানা পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ সিসি বøক তৈরি এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তনে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। এ কারণে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ফেরির টার্মিনাল। ফলে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রয়েছে ফেরিচলাচল। এদিকে চরমোনাই ঘাটে টার্মিনাল থাকলেও বেলতলা ঘাটে টার্মিনাল না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ট্রলারে পারাপার হওয়া হাজারো যাত্রীদের। বেলতলা ঘাটে টার্মিনালের পাশে কোন রকম দায়সারা ভাবে ট্রলার নোঙর করেন ইজারাদাররা। ফলে ট্রলার থেকে ওঠানামার সময় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়াও সাধারণ মানুষ, মোটরসাইকেল, সাইকেলসহ মালামাল পারাপারে বাড়ছে ঝুঁকি। ইশাতুল ইসলাম মডেল মাদরাসার শিক্ষক মো: লিয়াকত আলী জানান, কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ সিসি বøক তৈরি এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তনে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকায় চলতি মাসে টার্মিনাল সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। চরমোনাই ঘাটে টার্মিনাল থাকায় আমাদের উঠতে ও নামতে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু নদীর ভাঙন প্রতিরোধে কাজ চলায় বেলতলা ঘাটে টার্মিনাল নেই। তাই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ট্রলার পারাপারে কি ধরনের অনিয়ম হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি এ সম্পর্কে কোন উত্তর দিতে রাজি হননি। এদিকে বেলতলা ঘাট এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছেন ট্রলার পারাপারের ইজারাদার। কিন্তু সরকারি ফান্ডে যাচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার টাকা। জনপ্রতি ৫ টাকা করে তোলা হয় ঘাটে। এবং মোটরসাইকেল প্রতি ২০ টাকা তোলা হয়। এছাড়া রাত ১১ টা থেকে সকাল ৭ টা অবধি চলে অনিয়মের মহা উৎসব। এ সময় জনপ্রতি ১০ টাকা এবং মোটরসাইকেল প্রতি ৫০ টাকা নেয়া শুরু হয় যা রাত বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে দাঁড়ায় জনপ্রতি ৫০ টাকা এবং মোটরসাইকেল প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকায়। এছাড়া শিক্ষার্থী এবং প্রতিবন্ধীদের ভাড়া মওকুফের নিয়ম থাকলেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না তাদেরকেও। অন্যদিকে যাত্রীর সাথে থাকা ১৫ কেজি পর্যন্ত মালামাল ফ্রি বহন করার নিয়ম থাকলেও ২ থেকে ৫ কেজি মালামালের ক্ষেত্রেও ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ সম্পর্কে ট্রলার ঘাট ইজারার অংশীদার সোহরাব এর কাছে জানতে চাইলে তিনি টেলিফোনে জানান, খবিরের বাবা বেলায়েত হোসেন কালুর নামে ঘাট ইজারা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বেশি কিছু জানতে চাইলে আপনি তালুকদার প্রেসে যেতে পারেন। সোহরাব বরিশালের এক স্থানীয় সাংবাদিকের বরাত দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে তার কাছে যেতে পারেন। সোহরাব এর কাছে ঘাট ইজারাদার বেলায়েত হোসেন কালুর মুঠোফোন নম্বর চাইলে তিনি কিছুক্ষণ পরে দিবেন বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এ সম্পর্কে ট্রলার ঘাট ইজারার অংশীদার মোকলেছ টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা মোট ৩ জন ঘাটের ইজারা নিয়েছি। আমি, সোহরাব এবং কালু। কাগজপত্রে বেলায়েত হোসেন কালুর নামে ঘাট ইজারা নেওয়া। জনপ্রতি ৪ টাকা এবং মোটরসাইকেলের ভাড়া ১২ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও জনপ্রতি ৫ টাকা এবং মোটরসাইকেলের ভাড়া ২০ টাকা করে কেন আদায় করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনপ্রতি ৫ টাকা রাখি কারণ ১ টাকা কেউ খুচরা নেয় না। এছাড়া একটা মোটরসাইকেল ওঠাতে-নামাতে যে কষ্ট হয়, তাতে ১২ টাকার ভাড়া ২০ টাকা নিলেও সেটা খুব বেশি নয়। বেলতলা ঘাটে টার্মিনাল না থাকায় জনগণের যে দুর্ভোগ হচ্ছে সে ব্যাপারে আপনারা কি ব্যবস্থা নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এটা স্বীকার করছি যে এতে জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে। এছাড়া যেহেতু বেলায়েত হোসেন কালুর নামে ইজারা নেয়া, আমি তাকে জেলা পরিষদ বরাবর দরখাস্ত দিতে বলেছি। তবে তিনি এখনও দরখাস্ত দেননি। তাছাড়া আমরা বেলতলায় কোন নির্দিষ্ট স্থান পাচ্ছি না ট্রলার নোঙর করার জন্য। আজ এখানে কাল ওখানে নোঙর করতে হচ্ছে। যদি নির্দিষ্ট স্থান পেতাম তাহলে যা করা লাগে তাই করতাম। রাত ১১ টা থেকে সকাল ৭ টা অবধি ঘাটে বেশি অনিয়ম হয় এমন প্রশ্নের জবাবে মোকলেছ বলেন, আমরা সকাল ৭ টা থেকে রাত ১১ টা অবধি ইজারার কার্যক্রম চালাই। এরপর ট্রলার চালকরা যে যার মত ব্যক্তিগতভাবে চালান। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, খেয়াঘাটের ইজারাদাররা ইচ্ছে করেই বছরের শেষ সময়ে যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলছেন। কারণ খুব শীঘ্রই ঘাটের পুনরায় ইজারা (ডাক) দেয়া হবে। (প্রতি বছরই নতুন করে ঘাটের ইজারা দেয়া হয়)। বর্তমান ইজারাদাররা আবারও ঘাটের ইজারা নেয়ার জন্য কৌশলে যাত্রী কম দেখানোর চেষ্টা করছেন। যাত্রী কম দেখিয়ে তারা ইজারা কমানোর চেষ্টা এখন থেকেই শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে যদি ইজারা কমানো হয় তাহলে লোকসানে পড়বে রাষ্ট্রীয় কোষাগার। আর লাভবান হবেন অসাধু ইজারাদাররা। ফলে এসকল ইজারাদারদের কাছ থেকে ঘাট মুক্ত করার দাবি খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সকল বিষয়ে বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মানিকহার রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১ পয়সাও বেশি নিতে পারবেন না কোন ইজারাদার। এ সকল ইজারাদারদের কঠোর ভাবে দমন করা হবে। বেলতলা ঘাট আমি নিজে পরিদর্শন করবো। এমন হলে প্রয়োজনে তাদের ইজারা বাতিল করা হবে। এছাড়াও প্রয়োজনে বেলতলা ঘাটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি। (এই ঘাটের অনিয়ম ও যাত্রীদের দুর্ভোগের আরও তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন থাকছে পরবর্তীতে)।
Chat Conversation End

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest