ঢাকা ১২ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৫০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০
মোঃ আরিফুজ্জামান জনি দিনাজপুর প্রতিনিধি ঃ
প্রায় বিপন্ন পেশাগুলোর মধ্যে ঝিনুক পুড়িয়ে চুন তৈরী করা পেশাটি অন্যতম। সেই ঝিনুক পুড়িয়েই এখনো কষ্টের সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন রীনা রানি(৩৫)।বেশি টাকা আয় না হলেও অভাবের সংসারে এটাই অনেক।অনেকটা চুনের চুল্লির সাদাধোঁয়ায় আচ্ছন্ন রীনার অভাবের সংসার। পোড়া ঝিনুকের সাদা চুনের আয় দিয়েই চলে রিনা রানীর সংসার।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নে কেটর বাজারে রীনা রানীর জীর্ণ কুঠির।রীনার স্বামী বিজয় কুমার চন্দ্র আর তিন সন্তান নিয়ে সেখানে চলে ঝিনুক থেকে চুন তৈরীর কর্মযজ্ঞ। নিজ বাড়িতে চুন তৈরীর চুলা বসানোর জায়গা না থাকায় পাকা রাস্তার পাশে চুল্লি বসিয়ে তৈরী করা হয় সাদা চুন।
সরেজমিনে শনিবার সকালে রীনা রানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা হয় চুন তৈরীর কর্মযজ্ঞ।বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তার ওপর চুল্লি জ্বালানোর পুরুস্তুতি চলছে। চুল্লির ভেতর ইট বসিয়ে সেখানে মাটির ভাঙ্গা পাতিল টুকরো।তার ওপর থরে থরে কাঠের টুকরো। সেই কাঠর টুকরোগুলোতে আগুন দিয়ে তার ওপর ঝিনুকের আবরণ দিয়ে আবারো কাঠের টুকরো আবারো ঝিনুক দিয়ে পুরো চুল্লিকে সাজানো হয়।পরে সেগুলোকে ছাকনি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানি মিশিয়ে তৈরী হয় চুন।
জানতে চাইলে রীনা রানী বলেন, এক চুল্লি চুন তৈরীতে ব্যবহার হয় ৫ ডালি ঝিনুকের খোলস সেই ঝিনুক আবার স্থানীয়সহ পাশ্ববর্তী উপজেলায় আদিবাসিগ্রাম গুলো থেকে কিনে আনতে হয়। কখনো কখনো বৃষ্টি আসলে পুরো চুলির চুন নষ্ট হয়ে যায়। যদি ভালো ভাবে এক চুল্লি চুন তৈরী করতে পারে তবে সেখান থেকে ১ মণ চুন উৎপাদন হবে। বর্তমান বাজারে সেই চুনের মূল্য ১৮শ থেকে ২ দুই হাজার টাকা।
কথা হয় রীনা রানীর স্বামীর বিজয় চন্দ্রের সাথে। তিনি বলেন,এক চুল্লী ঝিনুক পুড়িয়ে প্রায় ১ মণ চুন তৈরী হয়। সেই চুন স্থানীয় কয়েকটি বাজার ঘুরে সপ্তাহধরে বিক্রয় করতে হয়। যে পরিমাণ আয় হয় তা দিয়ে কোন মতে সংসার চলছে।
তিনি বলেন,‘ পনের বছর পূর্বে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে এক প্রকার বিপদে পড়েই এখানে এসেছি। চুন তৈরির কলাকৌশল আমার স্ত্রীকে শিখিয়েছি। প্রায় দিন আমি অন্যের জমিতে দিনমজুরি করি। করোনার কারণে এখন ঠিকমত কাজও পাইনা। চুন ব্যবসার মূলধন বাড়ানোর জন্য সরকার থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেলে আমরা খুব উপকৃত হব।
জানতে চাইলে ৬ নং জোতবানী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রীনা-বিজয় দম্পতি অনেক ভালো মানুষ। তাদের ব্যবসায়ীক মূলধন বৃদ্ধিতে ব্যাংক লোনের দরকার হলে আমার পক্ষ থেকে তাদের সবধরণের সহযোগিতা করা হবে। সেইসাথে ইউপি থেকে তাদের জন্য সুযোগসুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও)পরিমল কুমার সরকার বলেন,আমরা ওই পরিবারটির প্রতি খেয়াল রাখব এবং সরকারি সকল সুযোগসুবিধাগুলো তাদের দেওয়ার জন্য চেষ্ঠা করব।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST