কারিপাতার গুণ

প্রকাশিত: ১২:১২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২০

কারিপাতার গুণ

অনলাইন ডেস্ক: পরামর্শে বিশিষ্ট আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডাঃ লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য।
ভারতীয় উপমহাদেশের, বিশেষত দক্ষিণ ভারতীয় রান্নায় ব্যবহৃত মশলার মধ্যে কারিপাতা অন্যতম। ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের যত্রতত্র এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ছোট বৃক্ষ জাতীয় গাছ। অনেক দিন বাঁচে। দেখতে অনেকটা নিমপাতার মতো। তবে খাঁজ কাটা নয়। গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম মুররায়া কোয়েনিগি । গুণের আধিক্যের জন্য একে ‘মিঠা নিম বাবার সুঙ্গা’ বলা হয়। ভারতে অনেক রান্নাতে স্বাদ ও গন্ধ বাড়াতে এর প্রচলন বহু যুগ ধরে। আয়ুর্বেদে একে কৃষ্ণ নিম্ব বা গিরি নিম্ব বলা হয়েছে। মাংসপেশি, অস্থিসন্ধির সমস্যায় তথা সাপের বিষের প্রতিষেধক হিসেবে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এটি দেহে বায়ু, পিত্ত, কফের ভারসাম্য বজায় রাখে। তামিল শব্দ ‘কড়ি পট্ট’ থেকে কারিপাতা নাম হয়েছে।

কারিপাতার গুণ
এর পাতা, বাকল, শিকড়, ফল সবই কাজে লাগে। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এর জুড়ি মেলা ভার। একাধিক মারণ রোগ দূরে তো রাখেই, সুন্দর আকর্ষণীয় চেহারা পেতেও সাহায্য করে।
 এর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ক্যান্সারাস গুণ আজ প্রমাণিত।

 এর সুগন্ধ খাবারে অন্য মাত্রা এনে দেয়।
 এতে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি, বি, এ, ই রয়েছে।
 শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমায়। উপকারী কোলেস্টেরল এইচডিএল বাড়ায়।
 পাকস্থলীর দূষিত পদার্থ দূর করে। পাচনক্ষমতা বাড়ায়।
 ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
 এর আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড অ্যানিমিয়া কমায়।
 কারিপাতা অল্প মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি, কাশি, সাইনুসাইটিস, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
 কারিপাতার অ্যান্টি-ক্যান্সার গুণ প্রস্টেট, রেকটাম, কোলন ক্যান্সারের আশঙ্কা কমায়। রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির ক্ষতিকর প্রভাব কমায়।
 লিপিড প্রোফাইল ঠিক রাখে। হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
 নিমের বিকল্প হিসেবে কারিপাতার ডালও দাঁতন হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই পাতার পাউডার টুথ পাউডার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
 মস্তিষ্ক সতেজ রাখতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, অ্যালজাইমার্স প্রতিরোধ করে।
 স্ট্রেস কমাতে এর ভূমিকা রয়েছে।
 কারিপাতার অ্যান্টি ডায়ারিয়াল গুণ আছে। বদহজম, বমিভাব কমায়। সেজন্য সামান্য মধু ও চিনি মিশিয়ে খেতে হবে অল্প পরিমাণে বারবার।
 প্রচুর ভিটামিন এ থাকায় দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ও ছlনিপড়া কমাতে খুব উপকারী।
 কারিপাতা বাটা সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে ওজন কমে।
 এর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণের জন্য জীবাণু সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কমে।
ত্বক ও চুলের রোগ বিনাশ
 চুলের যত্নে কারিপাতার ভূমিকা সর্বজনবিদিত। দক্ষিণ ভারতীয়রা প্রায় সব খাবারে এটি ব্যবহার করে তাই তাঁরা ঘন, কালো একঢাল চুলের অধিকারী হয়।
 চুল পড়া রোধ করে। চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রাচীনকাল থেকে চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় এর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। কারিপাতা, নিমপাতা, মেথি, কেশুত পাতা বেটে পেস্ট করে মাথায় লাগালে চুলওঠা বন্ধ হয়।
 অকালপক্বতা রোধ করে।
 কারিপাতার অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ মাথার খুশকি, র‌্যাশ, ফোঁড়া, ইনফেকশন থেকে স্ক্যাল্পকে সুরক্ষিত রাখে। কারিপাতা টকদই-এ মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
 চুলের ক্ষতি সারায়। দূষণ, রোদ, হাওয়া, জল ইত্যাদির কারণে চুলের লাল হওয়া, ভেঙে যাওয়া, শুষ্ক হওয়া খুব সাধারণ সমস্যা। কারিপাতার নিয়মিত ব্যবহার এইসব সমস্যা মেটায়। ত্বকের নানা সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
বিষাক্ত পোকাকামড় কামড়ালে কারিপাতা থেঁতো করে লাগাতে হয়। এর বীজের তেল ত্বক ঠান্ডা রাখতে ব্যবহার করা হয়।
লিখেছেন দেবযানী বসু


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest