নওগাঁ সহ প্রায় সারাদেশে হারিয়ে যাবার পথে চিরচেনা ডাকবাক্সগুলো

প্রকাশিত: ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০

নওগাঁ সহ প্রায় সারাদেশে হারিয়ে যাবার পথে চিরচেনা ডাকবাক্সগুলো

মোঃ ফিরোজ হোসেন নওগাঁ প্রতিমিধি :- নওগাঁর আত্রাইয়ে আধুনিকতার ছোঁয়াই ডাকবাক্সের কদর দিন দিন কমেই যাচ্ছে, চিঠি দিও প্রতিদিন, চিঠি দিও। নাই টেলিফোন নাই রে পিয়ন নাই রে টেলিগ্রাম বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম ’চিঠি নিয়ে এক সময় এমন কত গান বাজতো বেতার-টিভিতে। এখন তা শুধুই স্মৃতির পাতার অংশ। আগে যখন ডাকেরই প্রচলন হয়নি, তখন পোষা পায়রার পায়ে বেঁধে প্রিয়জনের কাছে বার্তা পাঠাতো মানুষ। এরপর এলো ডাক যুগ। প্রিয়জনের চিঠি আদান প্রদানের আশায় ডাক পিয়নের পথ চেয়ে থাকার দিন হলো শুরু। সে যুগও আর নেই। ডিজিটাল যুগে সব যোগাযোগই হয় এখন এক নিমিষে। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ই-মেইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, মেসেঞ্জারসহ প্রযুক্তির কত রকমের সুবিধা এখন সবার জন্য। শহরের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই গ্রাম অঞ্চলগুলোও। গ্রামের মানুষের অনেক কাছে এখন আধুনিক সুবিধা পৌঁছে গেছে। যখন ইচ্ছে প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগটা তারাও উপভোগ করছে। বার্তা আদান-প্রদানে চিঠির বদলে সবার ভরসা এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি। এখন শহর থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট ও ই-মেইল সেবা। তাই ডাক ঘরের মাধ্যমে মান্ধাতা যুগের চিঠি, টেলিগ্রাম সেবার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ডাকবাক্স এখন থাকে ফাকা। চিঠির পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে ময়লা-আবর্জনায় প্রায়। এক সময় এ ডাকঘরগুলো সব সময় মুখরিত থাকতো রানার কিংবা ডাক পিয়নের পদচারণায়। মানুষ ডাকঘরের সামনে অপেক্ষা করতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আসবে তাদের প্রিয়জনের চিঠি। আত্রাই উপজেলায় অধিকাংশ ডাকঘরের পাকা ভবন, সোলার প্যানেল স্থাপন ও আসবাবপত্র নতুন করে তৈরি করা হলেও দাফতরিক কোনো কাজকর্ম নেই বললেই চলে। প্রতিটি ডাকঘরে একজন ডাক বিলিকারী রয়েছেন। তবে তারা যে বেতন পান তা দিয়ে চলতে পারেন না তাদের সংসার। নওগাঁ জেলা ডাকঘর ও আত্রাই উপজেলা সদর ডাকঘরগুলো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম। এখানে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।তথ্য প্রযুক্তির নিত্য নতুন আবিস্কারের প্রভাবে নওগাঁ সহ প্রায় সারাদেশে হারিয়ে যাবার পথে চিরচেনা ডাকবাক্সগুলো। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে ডাক বিভাগের পোস্টাল সার্ভিস বা ডাকসেবা। রাস্তার পাশে পড়ে থাকে ধুলো জমা ডাকবাক্সগুলো। আর এভাবেই দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে চিঠির চিরায়ত চিত্র। একসময়ের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল ডাক বিভাগ বা পোষ্ট অফিসের ডাক বাক্স। ডাকঘর ছাড়াও মানুষের সুবিধার্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে দেখা যেত এই ডাকবাক্স। সাধারন থেকে গুরুত্বপূর্ন সকল প্রয়োজনে ব্যবহার হত এ ডাকবাক্সগুলো। কিন্তু বর্তমানে সরকারি ও অফিসিয়াল কাজে ছাড়া এর ব্যবহার নেই বললেই চলে।তাই শহর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর সামনে এগুলো থাকলেও হচ্ছেনা এর ব্যবহার, পরে রয়েছে অবহেলিতভাবে । খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, প্রায় এক দশক আগেও নওগাঁ সহ পাশের জেলায় ডাক বিভাগের ডাকবাক্স ছিল জীবনের অপরিহার্য অংশ। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ বিভিন্ন প্রয়োজনের চিঠিপত্র পাঠাতে ব্যবহৃত হত এ মাধ্যমটি। এখন আর চিঠি লেখা হয়না। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নে নতুন সব মাধ্যম এসেছে। এখন যোগাযোগের জন্য আগের মত আর পোষ্টাল ঠিকানা না, চাওয়া হয় মোবাইল নাম্বার, ফেইসবুক, টুইটার, ইমো, ভাইভার, হোয়ার্টাসঅ্যাপসহ বিভিন্ন ওয়েব সাইটের ঠিকানা। তাই তথ্য আদান প্রদানসহ ব্যবহারিক জীবনে এখন আর তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না এ বাক্স। আর সে কারনে এক প্রকার অচল হয়ে পরে আছে ডাক বিভাগের এসব ডাকবাক্সগুলো। উপজেলার রঘুরামপুর ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার আব্দুল বারিক জানান, উপজেলা সদরের ডাকঘরগুলো বেশ ভালো চলছে। কাজের পরিধিও বেড়েছে। আত্রাই উপজেলার প্রধান ডাকঘর থেকে গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ’ চিঠি এবং অনলাইনের মাধ্যমে টাকা-পয়সা আদান-প্রদান হয়। আগে ডাকবাক্সগুলোতে ৫০ থেকে ১০০টি চিঠি পাওয়া যেতো। আর এখন ১৫-২০টি চিঠি পাওয়া যায়। আবার কোনো কোনো সময় থাকে না। কারণ এখন সবকিছুই ডিজিটাল হয়েছে।উপজেলার সিংসাড়া ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার মোঃ আব্দুল লতীফ জানান, কিছুটা খুঁড়িয়ে চলছে উপজেলার শাখা ডাকঘর গুলো। সরকারি কিছু চিঠি পত্র ছাড়া তেমন চিঠি পত্র আর ডাকে আসে না। যুগের সাথে মানুষের মন মানসিকতা যেমন বদলে গেছে তেমনি ডাকঘর গুলো ও তাদের জৌলুসতা হারিয়েছে। দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ হাতের কাছে অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। সরকারি ডাক বিভাগের পাশাপাশি বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসে চিঠিপত্র ও টাকা-পয়সা আদান-প্রদান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।


মুজিব বর্ষ

Pin It on Pinterest