করোনাভাইরাস: মানুষ ও অর্থনীতি দুই–ই বাঁচাতে ভারতের লড়াই

প্রকাশিত: ৯:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০২০

করোনাভাইরাস: মানুষ ও অর্থনীতি দুই–ই বাঁচাতে ভারতের লড়াই
আলোকিত সময় আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথমে ‘জনতার কারফিউ, পরে লকডাউনের পথে হেঁটেছে ভারত। এরপরও বেড়েই চলেছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। এদিকে পুরো দেশ অবরুদ্ধ করার কারণে থেমে গেছে অর্থনীতির চাকা। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সংক্রমণ মোকাবিলায় অভিনব এক পথে হাঁটার কথা ভাবছে ভারত। লাল, কমলা আর সবুজ রং দিয়ে সংক্রমিত-অসংক্রমিত এলাকা চিহ্নিত করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এদিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনা মোকাবিলায় লকডাউন করা না হলে ১৫ এপ্রিল নাগদ দেশটিতে আট লাখের বেশি রোগী থাকত। ভারতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত ৩০ জানুয়ারি, কেরালা রাজ্যে। এরপর ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি কেরালাতেই শনাক্ত হয় আরও দুজন। এই তিনজন শনাক্ত হওয়ার পর এক মাসের মধ্যে ভারতে রোগী বাড়েনি। কিন্তু গত ২ মার্চ দিল্লি ও হায়দরাবাদে একজন করে রোগী শনাক্ত হয়। গত ১২ মার্চ করোনার সংক্রমণে প্রথম মৃত্যু দেখে ভারত। এরপর ক্রমেই রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত ভারতে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ১৫২। মারা গেছেন ৩০৮ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮৫৭ জন। রং দিয়ে চিহ্নিত করা হবে এলাকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৩ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে গত শনিবার ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করেন। এ সময় নরেন্দ্র মোদি মানুষ ও অর্থনীত—দুই-ই বাঁচানোর ওপর জোর দেন। পদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভেলু নারায়ণাস্বামীসহ বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, ভারতে এখনো অন্তত ৪০০টি জেলা রয়েছে, যেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেনি। পুরো দেশ লকডাউন করার কারণে ওই ৪০০ জেলার অর্থনীতির চাকাও থেমে গেছে। এ কারণেই রং দিয়ে এলাকা চিহ্নিত করার মাধ্যমে অসংক্রমিত এলাকাগুলোয় অর্থনীতি সচল রাখার কথা ভাবছে সরকার। এনডিটিভি জানায়, ভারতে যে এলাকাগুলোয় এখনো কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি, সেগুলোকে সবুজ রং দিয়ে চিহ্নিত করতে চায় সরকার। যেসব এলাকায় ১৫ জনের কম রোগী রয়েছে এবং সংক্রমণ ছড়ানোর তেমন কোনো প্রবণতা নেই, সেগুলো হবে কমলা রঙে চিহ্নিত। আর ১৫ জনের বেশি রোগী রয়েছে, এমন এলাকাগুলো হবে লাল রং চিহ্নিত। সবুজ রঙের এলাকাগুলোয় জনজীবন একদম স্বাভাবিক থাকবে। কমলা রঙের এলাকাগুলোয় সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচল, খামারসহ কিছু কার্যক্রম চালু থাকবে। আর লাল চিহ্নিত এলাকাগুলোয় বন্ধ থাকবে সব কার্যক্রম। লকডাউন না করলে রোগী হতো ৮ লাখের বেশি টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার বলেছে, সরকার যদি দেশজুড়ে লকডাউন না করত, তাহলে ১৫ এপ্রিল দেশটিতে ৮ লাখের বেশি রোগী থাকত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লাভ আগারওয়াল বলেন, ‘আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি, লকডাউন করা না হলে ব্যাপকভাবে রোগী বেড়ে যেত। ১১ এপ্রিল নাগাদ রোগী থাকত ২ লাখ ৮ হাজার। চার দিনের মাথায়, ১৫ এপ্রিল এ সংখ্যা বেড়ে হতো ৮ লাখ ২০ হাজার।’ তিনি আরও দাবি করেন, দেশ লকডাউন না করে রোগী চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন করার পথে হাঁটলে ভারতে ১১ এপ্রিল নাগাদ রোগী থাকত ৪৫ হাজার ৩৭০, যা ১৫ এপ্রিল নাগাদ বেড়ে হতো ১ লাখ ২০ হাজার। এনডিটিভির তথ্যমতে, ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ও লকডাউনের কারণে ভারতে সংক্রমণ ছড়ানো অনেক ধীর হয়েছে। দেশটিতে প্রতি ৪ দশমিক ৪ দিনে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। মোট জনসংখ্যার সঙ্গে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার তুলনা করলে ভারতে প্রতি ১০ লাখে রোগী রয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৩। সে হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালির চেয়ে ভারতে পরিস্থিতি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে প্রতি ২ দশমিক ৪ দিনে। প্রতি ১০ লাখে সেখানে রোগী রয়েছে ১ হাজার ১২৫ দশমিক ৪ জন। আর ইতালিতে রোগী দ্বিগুণ হচ্ছে ২ দশমিক ৮ দিনে। প্রতি ১০ লাখে রোগীর হার ২ হাজার ১৯৩ দশমিক ৪। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ২৫ মার্চ থেকে ২১ দিনের জন্য গোটা দেশ লকডাউন করার ঘোষণা দেন। এর আগেই অবশ্য দেশের স্থলসীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট। লকডাউনের আগে গত ২২ মার্চ এক দিনের জন্য জনতার কারফিউ ডেকেছিলেন মোদি। তাতে মানুষ সাড়াও দিয়েছিল। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি থেকেই ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করে ভারত। অর্থাৎ দেশটিতে রোগী শনাক্ত হওয়ার ১২ দিন আগে থেকেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ১৭ জানুয়ারি থেকেই নাগরিকদের চীন ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়ে আসছিল ভারত। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চীনা নাগরিকদের জন্য ভিসা দেওয়া স্থগিত করা হয়। করোনা চিকিৎসায় ৫০৮ হাসপাতাল ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, দেশটিতে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ৫০৮টি হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে। এসব হাসপাতালে ৮২ হাজার ৭৯৫টি আইসোলেশন বেড, ৮ হাজার ১৮২টি আইসিইউ বেড ও ৪ হাজার ৯৩৫টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। এর পাশাপাশি ৫ হাজার ১১০টি অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রও প্রস্তুত রয়েছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আইসোলেশন বেড রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩১৫টি, আইসিইউ বেড রয়েছে ২৭ হাজার ৬৪১টি এবং ভেন্টিলেটর রয়েছে ১২ হাজার ৮৬৭টি। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় সরকারি তহবিল পেয়ে গেছে। ভেন্টিলেটর এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) ও এন-৯৫ রেসপিরেটরি মাস্কের চাহিদা মেটাতে সরকার আগেভাগেই পদক্ষেপ নিয়েছে। ৩১ জানুয়ারি থেকে ভারতে প্রস্তুতকৃত পিপিই ও এন-৯৫ মাস্ক রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে ভেন্টিলেটরও তৈরি করা হচ্ছে। জানুয়ারি নাগাদ ভারতজুড়ে করোনা পরীক্ষাগার ছিল ২২৩টি। এর মধ্যে ১৫৭টি সরকারি এবং ৬৬টি বেসরকারি। এসব পরীক্ষাগারে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯০৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত বুধবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সরকারি-বেসরকারি সব

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest