রাজধানী সুপার মার্কেটের আগুন দেড় ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে –

প্রকাশিত: ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০১৯

রাজধানী সুপার মার্কেটের আগুন দেড় ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে –

মাহমুদুল হাসান, বিশেষ প্রতিনিধি-ঢাকাঃ টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটে লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের চেষ্টায় দেড় ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে। শুরুতে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট এলেও শেষ পর্যন্ত আগুনের ভয়াবহতার কারণে নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট কাজ করে। এই রিপোর্ট লেখার সময় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীদের বরাতে জানা গেছে, ৬৫টি দোকান একেবারে ভস্মীভূত হয়ে গেছে ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও জানা গেছে।

এর আগে, বুধবার সন্ধ্যা ৫টা ১৫ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার পলাশ চন্দ্র জানান, যা ৬টা ৩৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ১৮০ কর্মী। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। ফায়ার সার্ভিসের টিটিএল যন্ত্র দিয়ে পানি দেয়া হয়। এই যন্ত্রে চারদিকে ঘুরে ঘুরে ১৬তলা পর্যন্ত ওপর থেকে পানি দেয়া যায়। এই রিপোর্ট লেখার সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে অসার পর ডাম্পিংয়ের কাজ করছিল ফায়ার সার্ভিস। হাজার হাজার মানুষ মার্কেটের চারপাশে অবস্থান নিয়েছে। কারও মার্কেটে দোকান রয়েছে। অথবা কারও স্বজন আটকা পরল কিনা তা জানতেই মানুষে ভিড় ছিল।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, আগুন সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আরও কোথাও লাগার সম্ভাবনা আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনই জানা সম্ভব হবে না। তবে আগুন কোথা থেকে কিভাবে লেগেছে তা জানতে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। কমিটির রিপোর্টেই বিস্তারিত জানা যাবে বলেও জানান মহাপরিচালক। তিনি আরও বলেন, এই আগুনে কমপক্ষে ১৪-১৫টি দোকান সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে।

এদিকে, ডিজি আরও বলেন, এক মাস দশ দিন আগে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে রাজধানী মার্কেটে মহড়ার কাজ হয়েছিল। সে সময় মার্কেটের বৈদ্যুতিক তারসসহ আরও কিছু দুর্বলতা পাওয়া যায়। এসব ত্রুটি সারাতে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে এক মাস সময় দেয়া হয়। মার্কেট কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে দুই মাস সময় চেয়েছিল। তার আগেই অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটল।

এই মার্কেটের পাশেই র‌্যাব-৩ এর অফিস রয়েছে। তবে র‌্যাবের ওই অফিসে কোন ধরনের ক্ষতি হয়নি বলে উপস্থিত র‌্যাব কর্মকর্তার জানান।

এদিকে, সরজমিনে দেখা গেছে, ৪৩/১, ৪৩/২ শহীদ নজরুল ইসলাম রোড টিকাটুলিতে এই মার্কেট অবস্থিত। একই নামে তিনটা মার্কেট। যার পূর্ব দিকেরটি দ্বিতীয় তলা, পশ্চিমেরটিও দ্বিতীয়টা শুধু দক্ষিণের অংশ একতলা। দোকান মালিক হাফিজুর রহমান বলেন, মার্কেটের তিনটি অংশের সব মিলিয়ে তিন মার্কেটে ১৭৮৮টি দোকান রয়েছে। দোকান মালিকদের ধারণা অনুসারে, মার্কেটের পশ্চিম অংশের দ্বিতীয় তলার মাঝামাঝি জায়গা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দোকান মালিকরা জানান, প্রথম যেখান থেকে ধোঁয়া দেখা গেছে তা মনে করছেন ব্রেডিং ও পর্দার দোকান। পাশেই আছে ফোমের দোকান। এই কারণে যতটা আগুন ছড়িয়েছে তার চেয়ে বেশি ধোঁয়া ছড়ায়। চারদিকে ধোঁয়ার কারণে অন্ধকারের মতো হয়ে যায়। নিজেদের জীবন বাঁচানে দোকানের মালিক কর্মচারীরা দ্রুত দোকান ফেলে বাইরে বেড়িয়ে আসে। মার্কেটের মায়ের দোয়া বেডিং স্টোর মালিক সাজ্জাত বলেন, পশ্চিমের দ্বিতীয় তলায় যে দোকানগুলো ছিল তার কোনটি নেই। কমপক্ষে শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে।

মার্কেটের আরেক দোকানদার আব্দুল অজিজ খান বলেন, যা পুড়েছে তার মধ্যে ৬৫টি দোকান সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ভস্মীভূত শুধু ৬৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকা হবে বলেও জানান দোকান মালিক আজিজ খান।

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর পরই ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীস বর্ধণ বলেন, ৬টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সম্পূর্ণ নির্বাপণের কাজ চলছে। পশ্চিম-পূর্ব এবং দক্ষিণের ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট যুক্ত হয় এই আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। তবে কোন হতাহতের তথ্য দেননি তিনি।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত রাজধানী সুপার মার্কেটটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মার্কেটে নিত্যদিনের ব্যবহার্য হাঁড়ি পাতিল, কসমেটিক্স, কাপড়, স্যান্ডেল, শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, ব্যাগ, ঘর সাজানোর জন্য বেডশিট, বালিসের কাভার, পর্দার কাপড়, সোফার ফোম, ইমিটেশন সামগ্রী, শিশুদের খেলনা, গিফট সামগ্রীসহ দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব ধরনের পণ্য এই মার্কেটে বিক্রি হতো।

আশপাশের ভবনের যেন আগুন ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য পাশের ভবনগুলোতেও পানিয়ে দিয়ে ঠা-া করে নেন ফায়ার সার্র্ভিস। তবে ভবনে কোন রিজার্ভ পানির ট্যাঙ্ক ছিল না বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। টিনশেড ভবনগুলোতে টিনের চাল ফুটো করে ভেতরে পানি দেয়া হয়। ভেতরে প্লাস্টিক জাতীয় খেলনা সামগ্রী থাকায় সহজে নেভানো যাচ্ছিল না বলে জানা যায়।

এদিকে, সুপার মার্কেটে অগ্নিকা-ের কারণে অভিসার সিনেমা হল সংলগ্ন রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মার্কেট থেকে চারদিকে প্রায় আধা কিমি পর্যন্ত সড়ক নিয়ন্ত্রণ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ সদস্যরা রাস্তার মোড়ে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন। সাধারণ লোকজনকে দিক-নির্দেশনা দিয়ে আগুন লাগার স্থানে সাবধানে চলাফেরা করার অনুরোধ জানান।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest