ওমর ফারুক, রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহী মহানগর ও আশেপাশের উপজেলাসহ পৌর এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে মরণঘাতি করোনা ভাইরাস। এখন প্রতিদিনই ৮/১০ জনের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। তারপরও এখনো রাজশাহী মহানগর ও জেলায় চলাচলকারী অটোরিক্সায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত হয়নি। অটোরিক্সায় আগের মতোই গাদাগাদি করে বসে চলাফেরা করছে যাত্রীরা। আর অটোরিক্সা চালকদেরও সচেতন হতে দেখা যায়নি। কিছুদিন নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে কিছুটা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে দেখা গেলেও এখন স্বাস্থ্যবিধি বা শারীরিক দূরত্ব মানার কোন বালাই নেই। এ জন্য করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েই চলছে। জেলা এখন মোট ১১৬ জন করোনা সংক্রমিত রোগী রয়েছে। এরমধ্যে ৪ জনের মৃত্যু ও ১৮ জন সুস্থ্য হয়েছেন। বাকিরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে করোনা রোগীদের খোঁজ-খবর নেয়া হয়। লকডাউন শিথিল করার পর রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। খুলে দেয়া হয় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকেই সারাদেশের মত রাজশাহীতেও করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সেই সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। যদিও রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত বুধবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক না পরলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা শুরু হয়েছে। শুধু একদিনেই ৬২ জনকে ৩৪ হাজার ১৭০ টাকা জরিমানা করা হয়। জেলা প্রশাসক হামিদুল হক রাজশাহীবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ করেন। বৃহস্পতিবার মাস্ক না পরাসহ অন্যান্য অপরাধে ১৬৫ মামলায় ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল প্রথম নারায়ণগঞ্জ ফেরত করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে রাজশাহী জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকেই নগরে চলাচল ও অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন শুধু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ফার্মেসী একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা ছিল। ঈদে মার্কেট খুলে দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে সব বন্ধ ছিল। কিন্ত পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর সারাদেশেই লকডাউন শিথিল করা হয়। লকডাউন শিথিলের পর রাজশাহীজুড়ে গণপরিবহন ও ট্রেন চলাচলসহ স্থানীয় রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আর নগরজুড়ে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে অটোরিক্সা। কিন্ত কোন অটোরিক্সাকেই শারীরিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যাচ্ছে না। অটোরিক্সায় পূর্বের মতোই যাত্রী প্রায় ৫/৬ জন বসছে। এতে এক যাত্রীর শরীরের সাথে অন্য যাত্রীর শরীর ঠেকে যায়। এতে দূরত্ব বজায় থাকে না। এ কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে। এতো প্রচারণার পরও অটোরিক্সা চালক ও যাত্রীরা শারীরিক এবং স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে যাত্রীসহ তার পরিবারের সদস্যরা। সরজমিনে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিকে, রাজশাহী মহানগরীর কাঁচা বাজারগুলোতে ক্রেতারা একসাথে জটলা করে কেনাকাটা করছেন। প্রতিদিনই প্রায় নগরীর সব বাজারেই এমন চিত্র দেখা গেছে। কিছু ক্রেতার মুখে মাস্ক পরে থাকতে দেখা গেলেও বেশিরভাগ ক্রেতা বা বিক্রেতার মুখে মাস্ক থাকে না। অথচ রাজশাহীজুড়ে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, আমরা অটোরিক্সা চালকদের স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী উঠানোর ব্যাপারে বার্তা দিয়েছি। তাদের একাধিকবার বলা হচ্ছে। কিন্ত অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা। আমাদের সামনে পড়লে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার বিকল্প নেই। যারা মানবেনা তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।