রাজশাহীর চাষীদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে পাট

প্রকাশিত: ১:২১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২০

রাজশাহীর চাষীদের স্বপ্ন  দেখাচ্ছে পাট

ওমর ফারুক, রাজশাহী:
পাটকে বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হয়। পাট চাষীরা এক সময় পাট চাষ করে ভালে আয় রোজগার করলেও এখন আর সেই অবস্থা নেই। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে দেশের সোনালী আঁশ খ্যাত পাট। ভালো দাম ও অনুকুল পরিবেশ না পাওয়ায় অনেক চাষী এখন পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তবুও কিছু চাষী ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিয়মিত প্রতি বছর পাট চাষ করেন। আবহাওয়ার কারণে রাজশাহীতে তোষা পাট বেশি চাষ হয়। অন্যান্য বছর তেমন লাভের মুখ না দেখলেও এবার অনুকুল পরিবেশ ও দাম ভালো থাকায় বিগত বছরগুলোর লোকশান পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা কৃষকদের। কৃষকদের ন্যায্য দাম পাইয়ে দিতে অনেক কৃষক পাটের দাম নির্ধারণের দাবি তুলেছেন। যাতে মধ্যস্বত্বভোগীরা তেমন সুবিধা করতে না পারে। কারণ কষ্ট করে পাট চাষ করেন কৃষক আর মধ্যস্বত্বভোগীরাই এর ফায়দা লুটে। এবার কৃষকদের শ্রমের বিনিময়ে ভালো ফলন
হওয়া পাটের ভালো দাম পেতে তারা সরকারের পক্ষ থেকে দাম নির্ধারণের করছেন।
বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কারণে ফলন কিছুটা কমলেও পাটের মান ভালো হয়েছে বলে
জানান কৃষকরা। জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় চলতি বছর অনুকুল পরিবেশ থাকায় ১৪ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। যা গত বছরের তুলনায় ১ হাজার হেক্টর বেশি। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। শুরু থেকেই পাটের অবস্থা ভালো ছিল। দুঃশ্চিন্তা ছাড়াই পাট চাষ করতে সমর্থ্য হন কৃষকরা। প্রতি বিঘা

পাট আবাদের জন্য প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করতে হয় কৃষকদের। চাষীদের
পাটের বীজ বোনা, সেচ দেয়া, কাটা, জাগ দেয়া, শুকানো ও বাজারে বিক্রি করতে হয়। এরপর কৃষকরা দুই পয়সার মুখ দেখতে পান। চলতি বছরে রাজশাহীতে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে পাটচাষীদের জন্য আবহাওয়া অনুকুলেই রয়েছে। ঘন ঘন ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে এখন রাজশাহীর খাল, বিল, নদী ও নালা পানি ভরে থৈ থৈ করছে। পাট কাটার পর জাগ দেয়ার জন্য তেমন চিন্তা করতে হয়নি। বেশি পানি থাকায় পরিস্কার পানিতে জাগ দিয়ে ভালো আঁশ হওয়ার পাশপাশি পাটের মানও ভালো হয়েছে। রাজশাহীর ৯টি উপজেলার কম বেশি সব উপজেলাতেই পাট চাষ হয়। তবে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট ও পবা উপজেলায় বেশি পাট চাষ হয়। আর এসব উপজেলার মাটি পাট
চাষের জন্য বেশি উপযোগি থাকে। গত বছর প্রতি হেক্টরে ২.৯২ টন ফলন হয়েছিল।
কিন্ত এ বছর বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় ফলন কিছুটা কমে ২.৭ ফলন হয়েছে। জেলার বিশেষ করে তিনটি উপজেলা বাঘা, চারঘাট ও পবায় অধিকাংশ পাট চাষ হয়ে থাকে।

ইতিমধ্যেই ৮৫ শতাংশ পাট কাটা হয়ে গেছে। এখন চলছে জাগ দেয়া, শুকানো ও বাজারে বিক্রি করার পালা। অনেক চাষী ইতিমধ্যেই পাট বাজারে বিক্রি করেছেন। এবার প্রতি মন ভালো মানের পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা মন। আর মাঝারি পাট বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা মন। দাম ভালো পাওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় এবার খুশিতেই রয়েছেন পাট চাষীরা।

পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের রবু নামের এক পাট চাষী বলেন, অন্য বছরগুলোতে
তেমন পাটের দাম পায়নি। এবার কিছুটা দাম আছে। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য আমরা ন্যায্য দাম পাইনা। তাই সরকার যদি দাম নির্ধারণ করে দিতো তাহলে আমরা ন্যায্য দাম পেতাম। ফলনও এবার ভালো হয়েছে। পানি থাকায় পাট কেটে জাগ দেয়া নিয়েও তেমন চিন্তা করতে হয়নি। আমি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। দামও এখন পর্যন্ত ভালো রয়েছে। প্রতি মন পাট ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই উপজেলার সাইফুল নামের আরেক পাট চাষী বলেন, আবহাওয়াটা এবার মোটামুটি পাট চাষের জন্য উপযোগি ছিল। জাগ দেয়ার জন্যও চিন্তা করতে হয়নি। দাম ভালো পেলে অন্য বছরের
লোকশান পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

আরেক পাটচাষী বলেন, আমরা এখন যারা পাট চাষ করি তারা এক রকম ঐতিহ্য ধরে রাখতেই পাট চাষ করি। পাটের তেমন দাম পাওয়া যায়না। এ বছর মনে হচ্ছে পাট বিক্রি করে কিছু অর্থ পাবো। সরকারের পক্ষ থেকে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলে আরো বেশি ভালো হতো। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক বলেন, এবার পাট ভালো হয়েছে। বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় জাগ দেয়া নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হয়নি কৃষকদের। আঁশও ভালো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৯৫ শতাংশ পাট কাটা হয়ে হয়েছে। কৃষকরা দামও ভালো পাচ্ছে। তবে বেশি পানি হওয়ার কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে। বেশি পানি হলে পাটের ফলন ভালো হয়নি। দাম নির্ধারণের ব্যাপারে বলেন, এটা নিয়ে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। কারণ আলাদা পাট অধিদপ্তর রয়েছে। বেসরকারী সংস্থাগুলোই বেশি পাট কিনে থাকেন।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest