ঢাকা ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:৩৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
ইসমাইল হোসেন মিলন, সিদ্ধিরগঞ্জ,নারায়ণগঞ্জঃ
দেশজুড়ে করোনার রাজত্ব শুরু হওয়ার আগে আয়েশা আক্তারের পরিকল্পনা ছিল এসএসসি পাশ করে ভালো একটি কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন। সিদ্ধিরগঞ্জের রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়ে চলতি বছর জিপিএ-৪.৬৫ পেয়ে এসএসসি পাশও করেন। অথচ করোনা মহামারীতে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট! কলেজে নয়, আয়েশা আক্তারকে এখন একটি গার্মেন্টে ভর্তি (চাকরি করে) হয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। ছোট বোন মরিয়ম আক্তার তৃতীয় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত।
টাঙ্গাইল সদর থানার বিন্নীপুরে তাদের দাদার বাড়ি। সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি নাসিক ১ নং ওয়ার্ডের পিএম একাডেমী মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় তাঁর পরিবারের বসবাস। মা রওশন আরা আগে আদমজী ইপিজেডের ইউনেসকো গার্মেন্টসে সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতনে ফিনিশিং অপারেটরের চাকরি করতেন। বাবা মাসুদ রানা করতেন রড মিস্ত্রীর কাজ। সব কিছু ঠিক ভাবেই চলছিলো। কিন্তু তার মা ২০১৮ সালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় চাকরি ছেড়ে দেন। সেই থেকেই তাদের পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসতে শুরু করে। যার শেষ পরিণতি ডেকে আনে করোনা। সেই বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাড়াতে ইচ্ছে থাকা সত্বেও কলেজে ভর্তি না হয়ে পরিবারের হাল ধরতে তাকে চাকুরী নিতে হয় গার্মেন্টে।
জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট আয়েশার বাবা কাঁচপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফিরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে আয়েশার মা রওশন আরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-১১৩২, তারিখ-২৮-০৮-২০২০) করেন। করোনার প্রভাবে তাঁর বাবার কাজ বন্ধ থাকায় গত চার মাসের বাসা ভাড়া জমে গেছে। উপার্জন না থাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার করে আয়েশার বাবা-মা সংসার পরিচালনা করতেন। গত পাঁচ মাসে প্রায় এক লক্ষ টাকা ঋণ হয়েছে তাদের। এজন্য আয়েশা আক্তার গত দু মাস আগে ৯ হাজার টাকা বেতনে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের ইউনেসকো গার্মেন্টসে চাকরি নেয়।
একদিকে আয়েশার বাবা নিখোঁজ, আরেক দিকে ঋণের বোঝা। দুইয়ে মিলে মা রওশন আরা মানসিকভাবে ভারাক্রান্ত, বিপর্যস্ত। এমতাবস্থায় আয়েশার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কেননা গার্মেন্টসে চাকরি করার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে কঠিন ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। তারপরও আয়েশা নিয়মানুযায়ী অনলাইনের মাধ্যমে সিদ্ধিরগঞ্জের সরকারী এমডব্লিউ কলেজে ভর্তি নিশ্চায়ন করেছেন। এ বিষয়ে আয়েশা আক্তারের ভাষ্য, আমি লেখাপড়াটা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। লেখাপড়া শেষ করে আমি ভালো একটা চাকরি করে আমার অসুস্থ মাকে সুস্থ করতে চাই এবং আমার ছোট বোনকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। করতে চাই বাবার সন্ধানও।
আমি যদি অর্থনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে পড়ালেখা করতে পারি, তাহলে সমাজের যারা অর্থের অভাবে পড়ালেখা করতে পারছে না, তাদেরকে আমি আর্থিক সাপোর্ট দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করবো।
গার্মেন্টসে চাকরির ব্যাপারে আয়েশা বলেন, আমি আসলে চাকরি করতে চাই না। আমি যদি চাকরি না করি তাহলে আমাদের সংসারের খরচ বহন করবে কে? আমার তো বড় ভাইও নাই।
এদিকে আয়েশার মা রওশন আরা জানান, প্রায় ২০ দিন যাবত আমার স্বামী নিখোঁজ। আশপাশের এলাকাসহ গ্রামের বাড়িতেও খোঁজ করে তাঁর কোন সন্ধান পাই নাই।
বড় মেয়ে আয়েশাকে লেখাপড়া করানোর ইচ্ছে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়েকে লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা আমার এখনো আছে। সংসারে অভাব থাকায় সে এখন চাকরি করছে। গত কয়েক মাসে আমাদের এক লক্ষ টাকার মতো ঋণ হয়ে গেছে। আমার মেয়ে চাকরি না করলে আমাদের রাস্তায় নামতে হতো।
রেকমত আলী স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, আয়েশা মানবিক বিভাগ থেকে ভালো ফলাফল করেছে। আমার বিশ্বাস লেখাপড়ার ব্যাপারে কেউ তাকে সহযোগিতা করলে সে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। #
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST