টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারেনি দুই বোন

প্রকাশিত: ১০:২৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০

টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারেনি দুই বোন

সিদ্ধিরগঞ্জ(নারায়ণগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত দুই বোন হাবিবা আক্তার ও সুমাইয়া আক্তারের।

হাবিবা ও সুমাইয়া সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি আব্দুল আলী পুল এলাকায় নানাবাড়িতে বসবাস করেন। বাবা আব্দুল করিম মিয়া গরুর দুধ বিক্রি করেন। মা আসমা বেগম ১০ হাজার টাকা বেতনে আদমজী ইপিজেডের বেকা গার্মেন্টেসে চাকরি করেন।

আব্দুল করিম মিয়া ২০১৭ সালে আরেকটি বিয়ে করার পর তাদেরকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়। অভাবের মধ্যে থেকেও মিজিমিজি পশ্চিমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে হাবিবা(জিপিএ-৪.৫২) ও সুমাইয়া(জিপিএ-৪.৭১) এসএসসি পাশ করেছেন। অনলাইনে আবেদন করে সরকারি তোলারাম কলেজে ভর্তির জন্য বিবেচিত হয়েছেন তারা দুই বোন। গত রবিবার থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও ৫ হাজার টাকার জন্য তারা দুই বোন এখন পর্যন্ত ভর্তি হতে পারেননি।

হাবিবা আক্তার জানায় , তারা মোট ৬ বোন। ৪ বছর আগে বড় বোনের বিয়ে হয়। বাকি ৩ বোনের মধ্যে দুইজন পঞ্চম শ্রেণীতে ও আরেকজন শিশু শ্রেণীতে পড়ে। মা আছমা বেগম বেশ টানাপোড়েনের মধ্যে থেকেও সংসার পরিচালনা করছেন। হাবিবা ও সুমাইয়ার মামারা গার্মন্টসে চাকরি করায় নিজেদের সংসারের খরচ বহন করতেই হিমশিম খায়। সেজন্য চাইলেও তারা সহযোগিতা করতে পারেন না।

হাবিবা বলেন, আমাদের কোন ভাই নেই বলে আমার বাবা আমার মা’কে নিয়মিত অনেক নির্যাতন করতেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে আমার মায়ের অনুমতি ছাড়া আমার বাবা আরেকটি বিয়ে করার পর সংসারে কোন খরচ না দেয়ায় আমি দেড় বছর গার্মেন্টসে চাকরি করে সংসারের খরচ বহন করি।এজন্য আমি স্কুলে কোন ক্লাসও করতে পারিনি।তারপর আমার মা চাকরি পেলে আমি চাকরি ছেড়ে আবারো লেখাপড়ায় মন দেই।
তিনি বলেন, আমরা লেখাপড়াটা করতে চাই। আমরা সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই ,আমরা মেয়ে বলে ফেলনা না।
আরেক বোন সুমাইয়া আক্তার জানান, তারা দুই বোন যখন পঞ্চম শ্রেনীতে পড়তেন তখন বাবার অবহেলার কারণে আমরা প্রথমবার পিএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি।
সুমাইয়া বলেন,আমরা লেখাপড়া করে ভালো একটা চাকরি করতে চাই। সমাজে আমাদের মতো যারা টাকার অভাবে লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত তাদের জন্য ভবিষ্যতে কিছু একটা করতে চাই।
যদি ভর্তি হতে পারেন তাহলে কিভাবে লেখাপড়া করবেন জানতে চাইলে সুমাইয়া আক্তার বলেন, কলেজে পড়ার পাশাপশি পার্টটাইম কাজ করবো। তাছাড়া আগামী জানুয়ারি থেকে টিউশনি করার চেষ্টা করবো।

মা আছমা বেগম জানান,তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তিনি প্রথমে চাকরি জোগাড় করতে পারেননি। এজন্য তার মেয়ে হাবিবাকে গার্মেন্টসে চাকরি করতে হয়। আছমা বেগম বলেন,আমি চাই আমার মেয়েরা লেখাপড়াটা করুক। আমার মেয়েদের লেখাপড়ার আগ্রহ আছে।

মিজমিজি পশ্চিমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান বলেন, সুমাইয়া ও হাবিবার লেখাপড়ার জন্য আগ্রহ আছে। অভাবে থাকা সত্যেও ওরা এসএসসি পাশ করেছে। আমার বিশ্বাস লেখাপড়ার জন্য ওদেরকে কেউ সহায়তা করলে ওরা ভবিষ্যতে আরো ভালো করবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest