নাটোরে ফতোয়ার শিকার মর্জিনা ইউএনওর হস্তক্ষেপে ফিরে পেয়েছে স্বাভাবিক জীবন

প্রকাশিত: ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২০

নাটোরে ফতোয়ার শিকার মর্জিনা ইউএনওর হস্তক্ষেপে ফিরে পেয়েছে স্বাভাবিক জীবন
এস ইসলাম, নাটোর জেলা প্রতিনিধি।
নাটোরের গুরুদাসপুরের উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ তমাল হোসেনের সার্বিক সহযোগীতায় ফতোয়ার শিকার মর্জিনা বেগম(৪০) স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছেন। একই সাথে মর্জিনাকে দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার একটি ঘর নিমার্ন করে দিয়েছেন ইউএনও মোঃ তমাল হোসেন। মর্জিনার পরিবারে ফিরেছে সুখ ও শান্তি। ফিরে পেয়েছেন সম্মান। ক’দিন আগে মর্জিনাসহ তার পরিবারকে অসহনীয় যন্ত্রনায় জীবন কাটাতে হয়েছে। এক ঘরে অবস্থায় দিন কাটাতে হয়েছে কয়েক মাস। স্থানীয় মসজিদের ইমামের দেয়া ফতোয়ার জেরে গ্রাম প্রধান ও মাতব্বররা মর্জিনার পরিবারকে এক ঘরে করে রাখে। উপজেলার উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের দেবোত্তর গরিলা গ্রামের কামরুজ্জামানের স্ত্রী মর্জিনাকে তার জামাতার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে ফতোয়া জারি করা হয়। অভিযুক্ত জামাতার বাড়ি থেকে মেয়েকে তাড়িয়ে মর্জিনার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় গ্রাম প্রধানরা। তাদের অসহায় জীবনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন ইউএনও মোঃ তমাল হোসেন। খাদ্য সহায়তা দেয়া সহ প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় মর্জিনাকে একটি নতুন ঘর নিমার্ণ করে দেন।
স্থানীয়রা জানায়,স্বামী ,এক ছেলে,এক মেয়ে ও পুত্র বধু নিয়ে মর্জিনার সংসার। এক চিলতে জমিতে ছনের ঘরে ছিল মর্জিনাদের বসবাস। অসুস্থতার জন্য স্বামী কামরুজ্জামান কাজ করতে পারতেননা। তার চিকিৎসার খরচ মেটাতেই ছেলে তার দিন মজুরীর সিংহভাগ ব্যয় করতে হয়। মেয়েকে ওই গ্রামেই বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগে । ওই বাড়িই তাদের সম্বল। বহু কষ্টে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে চলছিলো তাদের সংসার। হঠাৎ করেই মর্জিনার সংসারে নেমে আসে কালো মেঘ। গ্রামের কিছু অসাধু লোকের নজর ছিলো তাদের বাড়ির জায়গার ওপর। তাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টাও করা হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হন মর্জিনা।
গত ১০ জুন সন্ধ্যার পর মর্জিনা তার জামাতাকে নিয়ে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন। ওই সময় কিছু অসাধু ব্যক্তি রাস্তার মাঝে তাদের আটক করে জামাই-শাশুড়ীর অবৈধ সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে তাদের দুজনকে আটক করে। এরপর একটি গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয় এবং প্রচার করা হয় শ্বাশুরী -জামাতার অনৈতিক কাহিনী। রাতে তাদের ছেড়ে দেয়া হলেও পরদিন সকালে মসজিদের ইমাম ফতোয়া দিলে গ্রাম প্রধান ও মাতব্বররা সালিশ করে তাদের এক ঘরে করে রাখে। একঘরে হয়ে থাকার কারনে তাদের কাজে নেয়নি কেউ। ফলে তিনদিন তাদের অনাহারে থাকতে হয়। ঘরে কোন খাবার ছিলো না। ঘটনা জানার পর ইউএনও মোঃ তমাল হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে মর্জিনার পরিবারকে উদ্ধার করেন এবং তাদের খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দিয়ে আসেন। এঘটনায় মর্জিনা বাদি হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ সেই ইমাম ও গ্রাম প্রধান সহ মাতবরদের আটক করে। পরবতী’তে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে বিশিষ্টজনদের মধ্যস্থতায় সুরাহা হয়।
মর্জিনা বেগম বলেন,ইউএনও স্যারের জন্য আমরা সব বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি ঘর দিয়েছেন। এখন আমার মেয়ে জামাই বাড়িতেই থাকতে পারছে। স্বামী,ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে আমরা এখন বেশ ভাল এবং শান্তিতে আছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন বলেন,তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। উপজেলা প্রশাসন সব সময় এসব মানুষের পাশে রয়েছে। তারা মাননযি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পাওয়ার যোগ্য ছিল।

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest