লালপুরে এবার ৩ লক্ষ ২৫ হাজার খাজুর গাছ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

প্রকাশিত: ৩:২১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২০

লালপুরে এবার ৩ লক্ষ ২৫ হাজার খাজুর গাছ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

এস ইসলাম, নাটোর জেলা প্রতিনিধি।

লালপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক খেজুরের পাটালি গুড় সমগ্র বাংলাদেশ ছড়িয়ে দিতে চলছে গাছিদের মাঝে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। অনেকের কাছে এটা মধু বৃক্ষ রস নামেও পরিচিত । খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য দা ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছের ছাল তোলা, চাঁছা ও নলি বসানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আবার কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে রস সংগ্রহের কাজ।

এক সময় রস সংগ্রহের জন্য বাঁশের চোং বা নলি, কাঠি, দড়ি, ভাঁড় ইত্যাদি ব্যবহার হলেও সম্প্রতি আধুনিক পদ্ধতিতে খেজুরের গাছ প্রস্তুত করতে দেখা গেছে নাটোরের লালপুরের উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ৩৩ হাজার কৃষকের ৩ লক্ষ ২৫ হাজার খাজুর গাছ রয়েছে। গাছিরা এসব খাজুুর গাছ প্রস্তুত করতে বাঁশের নলি, কাঠির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে টিনের তৈরি নলি ও লোহার পেরেক। এছাড়া বড় গাছগুলোতে গাছে উঠে রসের হাড়ি লাগানো ও নামানোর ঝামেলা এড়াতে নলি থেকে লোহার চিকন তারের মাধ্যমে বিশেষ পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় মাটির হাড়ি রেখে রস সংগ্রহ করার প্রস্তুতি চলছে।

এবিষয়ে স্থানীয় গাছি বাবলু জানান, খেজুরের রস সংগ্রহের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গাছ ঝুড়ার কাজ শুরু করেছেন তিনি। তবে তিনি বাঁশের কাঠি ও নলি তৈরি করা বেশি পরিশ্রমের ও সময় সাপেক্ষ হওয়ায় সহজ প্রাপ্ত টিন ও লোহার পেরেক ব্যবহার করছেন৷ এতে পরিশ্রম ও সময় দুটোই কম লাগে বলে জানান তিনি।

পালিদেহা গ্রামের বাবু খাঁ গাছি বলেন, বড় গাছ গুলোতে বার বার উঠা নামা এড়াতে নলি থেকে লোহার চিকন তারের মাধ্যমে গাছের গোঁড়ায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে মাটির হাড়ি রেখে রস সংগ্রহ করা সুবিধা হওয়ায় গত কয়েক বছর যাবৎ এই পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ করছেন বলে জানান তিনি।

এব্যাপারে বুধপাড়া গ্রামের বুড়া ও কালু গাছি জানান, এই পদ্ধতি রস সংগ্রহ সহজ হলেও গাছের গোঁড়ায় রসের হাড়ি থাকায় রস চুরির শঙ্কা থাকে। তাই এই পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ এখনো জনপ্রিয় হয়ে উঠে নি ।

স্থানীয় বৃক্ষপ্রেমী আব্দুর রশিদ মাষ্টার বলেন, একসময় গ্রামীণ জনপদে খেজুর রস নিয়ে পায়েস পিঠার উৎসব, রাত জেগে সিন্নি রেঁধে খাবার উৎসব, খেজুর রসের মৌ মৌ গন্ধ অম্লান স্মৃতি হয়ে আছে আজো। গ্রামীণ মেঠোপথ আর খেজুর গাছের সারির সেই মুগ্ধতাও আজ বিলীন হবার পথে।

খেজুর গাছের গুরুত্ব থাকলেও কৃষি বিভাগের নজর না থাকায় অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ ক্রমেই বিলুপ্ত হতে চলেছে । অল্প জমিতে অধিক খেজুর গাছ চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়া সত্ত্বেও সময়ের পরিক্রমে খেজুর গাছ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এই বৃক্ষটির বিলুপ্তির শঙ্কা রয়েছে। তাই ঐতিহ্যবাহী এই বৃক্ষটি রোপণ ও সংরক্ষণের বিষয়ে কৃষি বিভাগের কার্যকারী পদক্ষেপ জরুরি মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।

এব্যাপারে লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, কৃষি অফিস থেকে গাছিয়াদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, জরীপ অনুযায়ী গত বছর উপজেলায় ৩ লক্ষ ১৪ হাজার পাঁচশত (৩,১৪,৫০০) খাজুর গাছ থেকে গুড় উৎপাদন হয়েছিল ৩ হাজার দুইশত মেট্রিক টন। এবার ৩৩ হাজার কৃষকের প্রতি গাছ থেকে ২৫-৩০ কেজি হিসাবে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার খাজুর গাছ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest