৯ম বঙ্গবন্ধু গেমসের উদ্বোধনী বার্তায় ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ মানার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর |

প্রকাশিত: ৩:৪৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০২১

৯ম বঙ্গবন্ধু গেমসের উদ্বোধনী বার্তায় ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ মানার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর |

মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান |
ঢাকা |

সারা দেশ থেকে আসা অ্যাথলেটর কলরব, মূল মশাল প্রজ্জ্বলন, লেজার শো, দেশের খেলাধুলার সাফল্যগাঁথার অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনী, আতশবাজির মধ্য দিয়ে পর্দা উঠল বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমসের। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গেমস সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানার বার্তাও দিলেন তিনি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বাড়তে থাকায় ছিল বাড়তি সতর্কতা।


বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি ক্রীড়াপ্রেমীদের উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার সীমিত সংখ্যাক দর্শক পেয়েছেন মাঠে বসে বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ। ৩১টি ডিসিপ্লিনে সারা দেশের ৫ হাজার তিনশ অ্যাথলেট অংশ নিচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে হওয়া এই প্রতিযোগিতায়। উদ্বোধন করতে মাঠে আসতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


“এই আয়োজন ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালে। কিন্তু করোনাভাইরাস এমনভাবে দেখা দিল, আমরা বাধ্য হয়ে প্রতিযোগিতা স্থগিত করলাম। যদিও এবার নতুনভাবে করোনাভাইরাস দেখা দিয়েছে, আমি এটুকু চাইব, আপনারা সকলে স্বাস্থ্যের দিকটা নজরে রেখে সমস্ত খেলাগুলো অনুষ্ঠিত করবেন।” “যেকোনো দেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষকে উন্নতি করতে হলে সবদিকে উন্নতি হওয়া দরকার। বিশেষ করে খেলাধুলা একান্তভাবে অপরিহার্য। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে যুবক, তরুণ তাদের জন্য অপরিহার্য। খেলাধুলার প্রতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবসময় আন্তরিকতা ছিল।


তিনি সবসময় উৎসাহিত করতেন, নিজে তিনি খেলতেন, আমার দাদাও খেলতেন, আমার ভাইয়েরা, এমনকি ভ্রাতৃবধুরাও খেলতেন।”
“আমরা চেষ্টা করেছি, কীভাবে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করা যায় এবং সব ধরনের খেলাধুলার দিকে আমরা নজর দিয়েছি। দেশীয় যে খেলাধুলা, সেগুলোও বাদ দেইনি। একটাই লক্ষ্য, আমাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলার মধ্যে থাকুক। আমরা প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করে দিয়েছি।”


“আজকে আমার সবচেয়ে খারাপ লাগছে যে, করোনার কারণে আমি মাঠে উপস্থিত থেকে সবাইকে দেখতে পারলাম না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব, এই কথা দিয়েছিলাম, বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ। যেকারণে আজকে ভার্চুয়ালি আজ আপনাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকছি। আমাকে এভাবেই উদ্বোধন করতে হচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া অ্যাথলেটদের শপথ বাক্য পাঠ করান বাংলাদেশকে টোকিও অলিম্পিকের টিকেট এনে দেওয়া আর্চার রোমান সানা। আনন্দে ভাষা হারিয়ে ফেলেন তিনি। “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই আয়োজনের শপথ বাক্য পাঠ করাতে পেরে আমি গর্বিত।


এই আনন্দ আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এতটা সম্মান এবং ভালোবাসা যে পাব, তা আমি কখনই চিন্তা করতে পারিনি। এ জন্য বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে (বিওএ) ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা। এভাবে ক্রীড়াঙ্গনের মানুষের সম্মান পেলে তাদের মধ্যে আরও ভালো কিছু করার এবং দেশকে আরও বেশি সাফল্য এনে দেওয়ার অনুপ্রেরণা পায়।” উদ্বোধনের পর তারকা গলফর সিদ্দিকুর রহমান ও ২০১৬ দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে দুটি সোনা জেতা সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শীলা স্টেডিয়ামের মূল মশাল প্রজ্জ্বলন করেন। এমন সম্মান পেয়ে আপ্লুত সিদ্দিকুর।

“বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের নবম আসরে মশাল প্রজ্জ্বলন করলাম। এটা অনেক আনন্দের বিষয়। আমি কখনও ভাবিনি এমন সুযোগ পাব। আসলে সত্যি আমি কৃতজ্ঞ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কাছে। এতো বড় সম্মান আমাকে দেওয়ার জন্য। আমার কাছে আসলে খুব ভালো লাগছে। ক্রীড়াবিদদের প্রতিনিধি হয়ে মশাল প্রজ্জ্বলন করতে পেরে।” “এর আগে দেশের বাইরে বাংলাদেশের পতাকা আমার হাতে ছিল। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে মার্চ পাস্টে লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলাম। এখন দুই গেমসের অনুভূতি আসলে অন্যরকম। আগে দেশের হয়ে বিদেশের মাটিতে অলিম্পিক গেমসের মার্চপাস্টে অংশ নিয়েছি।আর এবার দেশের মাটিতে বাংলাদেশ গেমসে মশাল প্রজ্জ্বলন করলাম। এটা অনেক গর্বের বিষয়।” নেপালের কাঠমান্ডু-পোখারায় হওয়া সবশেষ দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে দেশের পতাকা ছিল শীলার জাতে। বঙ্গবন্ধু গেমসের মশাল প্রজ্জ্বলন করতে পেরে গর্বিত এই সোনাজয়ী সাঁতারু।

“জাতির জনকের নামে এই গেমসে মশাল প্রজ্বলনের মাধ্যমে আমাকে সম্পৃক্ত করায় আমি বাংলাদেশ অলিম্পিকের কাছে কৃতজ্ঞ। এটা আমার জন্য অনেক সম্মানের। এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে এই দেশের জন্য আমি কিছু করতে পেরেছি। যার সম্মান আমি পাচ্ছি। খেলোয়াড়রা এভাবে সম্মান পেলে বর্তমানে যারা আছে, তারা তো বটেই, আগামীতেও ক্রীড়াঙ্গণে যারা আসবে, তারা ভালো করার অনুপ্রেরণা পাবে।” অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনীর মাধ্যমে পর্দায় তুলে ধরা হয় দেশের খেলাধুলার উল্লেখযোগ্য সাফল্য গাঁথা। মাসকট পায়রার মাঠ প্রদক্ষিণ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে নিয়ে প্রদর্শনী, স্টেজ শো, লেজার শো, শিবলী সাদিক ও শামীম আরা নিপার নৃত্য প্রদর্শনী, সাবিনা ইয়াসমিনের দেশাত্মবোধক সঙ্গীত, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গীতের মূর্ছনা এবং সবশেষ আতশবাজির প্রদর্শনী দিয়ে শেষ হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest