পটুয়াখালীতে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে উপকূলের ২১ গ্রাম।

প্রকাশিত: ৫:৩৭ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২১

পটুয়াখালীতে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে উপকূলের ২১ গ্রাম।

বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চ জোয়ারে পটুয়াখালীতে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে উপকূলের ২১ গ্রাম।মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালের জোয়ারে কলাপাড়া ও কুয়াকাটা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে আছে। মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে কুয়াকাটার ৪৮ নম্বর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাঝিবাড়ি পয়েন্ট ও পশ্চিম খাজুরা এলাকা।এখানকার বাঁধের বাইরের পাশের ঢালে যে সিমেন্টের ব্লকগুলো ফেলা হয়েছিল, তা পুরোনো হয়ে যাওয়ায় পানির চাপে ধসে পড়ছে, এবং অনেক দিন বেরিবাদের নতুন মাটি ফেলে রাখায় কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বড় বড় ঢেউ ছুঁয়ে নিচ্ছে বেরিবাধ ঝুঁকির মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা।ইতিমধ্যেই তলিয়ে গেছে, জেলেপল্লী, শুটকি মার্কেট, ঝিনুক মার্কেট, ক্যামেরা পট্টি, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, ডিসি পার্ক, পাবলিক টয়লেট সহ গুরুত্বপূর্ণ দোকানপাট। ইতিমধ্যে আবাসিক হোটেল কিংস ৭০পারসেন্ট সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়েছে।উপকূলীয় কলাপাড়া উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে করণীয় নির্ধারণ করতে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জি এম সরফরাজ কলাপাড়ায় এসেছেন।এদিকে লালুয়া ইউনিয়নের ৬ কিলোমিটার অরক্ষিত বেরিবাঁধ, রাঙ্গাবালী উপজেলার চরআন্ডা, দক্ষিণ চরমোন্তাজ ও চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১০ কিলোমিটার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পরে।এছাড়াও বেড়িবাঁধের বাইরের সকল চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল ৩ থেকে ৪ ফূট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।জেলার কলাপাড়ার লালুয়ায় বিধ্বস্ত বেড়িবাধ দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চ জোয়ারের পানি প্রবেশ করে পশরবুনিয়া, ধনজুপাড়া, চৌধুরী পাড়া, নাওয়া পাড়া, ছোট পাঁচ নং, বড় পাঁচ নয়, ১২ নং হাওলা, হাসনা পাড়া, মঞ্জু পাড়া, মুন্সী পাড়াসহ ১০টি গ্রাম পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। এতে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে এসব গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষ।এছাড়া রাঙ্গাবালী উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরের সকল নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলসহ চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা, নয়াচর, উত্তর চরমোন্তাজ, চরবেষ্টিন, মোল্লা গ্রাম, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চরনজির, কোড়ালীয়া, কাউখালীচর, চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মরাজাঙ্গী, চিনাবুনিয়া, বিবির হাওলা, গোলবুনিয়া, চরলতা প্লাবিত হয়ে সহস্রাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।এদিকে কলাপাড়ার নীলগঞ্জের ইউনিয়নের বিধ্বস্ত নীচকাটা স্লুইজ ভেঙে যে কোন সময় প্লাবিত হতে পারে অন্তত ১২টি গ্রাম। এতে পানি বন্দি হওয়ার আশংকায় রয়েছে ১২ হাজার মানুষ।এসব এলাকার মানুষের রান্নাসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কয়েক’শ পুকুর ও ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। রাতের জোয়ারে আরও পানির চাপ বাড়তে পারে বলে আশংকায় রয়েছেন এ এলাকার মানুষ।লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন জানান, লালুয়া ইউনিয়নের ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন যাবৎ অরক্ষিত অবস্থায় পরে আছে।চালিতাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান জানান, চালিতাবুনিয়া একটি ভাঙন কবলিত এলাকা। অনেক আগেই বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। নতুন করে বেড়িবাঁধ না করায় জোয়ারের পানিতে একটি গ্রাম বাদে সবগুলো গ্রাম প্লাবিত হয়ে মানুষ পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে।চরমোন্তাজ ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ মিয়া জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হলেই চরআন্ডার অরক্ষিত বেড়িবাধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে লোকালয় তলিয়ে যায়। মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়ে।অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জি এম সরফরাজ উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের হাফেজ প্যাদার হাটে ‘দুর্যোগে করণীয় এবং জানমাল রক্ষায়’ মানুষকে সচেতন করতে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় মানুষজনকে নিয়ে সভা করেছেন।এ সময় কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক তাঁর সঙ্গে ছিলেন।কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সাগর থেকে ফুঁসে ওঠা জোয়ারের পানি, জেলেপাড়া গুলো নিজেদের মালামাল যত্ন সহকারে উপরে উঠে রাখা হয়েছে, আমাদের পৌরসভা থেকে মাইকিং করা হচ্ছে, এবং সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে ।একই সাথে কাউন্সিলর, মনির শরীফ জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ মোকাবেলায় কুয়াকাটা পৌরসভা থেকে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, আমরা বেরিবাদের বাহির সাইডে থাকা সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিচ্ছি এবং তাদের মালামাল যত্নসহকারে রাখার জন্য সাহায্য করছি।ধানখালী ইউপির চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার বলেন, তাঁর ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া গ্রাম থেকে ৩০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ছুটে যাওয়ার কারণে নিশানবাড়িয়া, লোন্দা, মরিচবুনিয়া, দাসের হাওলাসহ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতির মুখে পড়েছে। লতাচাপলী ইউনিয়নের চাপলীবাজার এলাকার বাসিন্দা কামাল হাসান বলেন, ঘের ও পুকুরের রুই, কাতল, সিলভার কার্প, পাঙাশ, গলদা চিংড়ি ভেসে গেছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের তাণ্ডবে গঙ্গামতি এলাকার পুরো সৈকত ৫ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সৈকত-সংলগ্ন গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের ঘরের মেঝেতে পানি উঠে গেছে। সাগরের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সৈকতে যাতায়াতের পিচঢালা সড়কের ওপর। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া এলাকা থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার ভেঙে গেছে।কলাপাড়ার ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ‘আমরা কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় শুকনো খাবার কেনার জন্য ২৫ হাজার করে টাকা, শিশুখাদ্য কেনার জন্য এক লাখ টাকা এবং গো-খাদ্য কেনার জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউপি ও পৌরসভার চেয়ারম্যানদের এই টাকা দেওয়া হয়েছে। ঝড়ের ভয়াবহতা বাড়লে উপকূলের প্রত্যন্ত এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।দুর্গত এসব মানুষের নিরাপদ আশ্রয়সহ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গাবালি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসফাকুর রহমান ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest