নলছিটিতে বিরল রোগে আক্রান্ত হতদরিদ্র একটি পরিবার

প্রকাশিত: ২:০০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯

নলছিটিতে বিরল রোগে আক্রান্ত হতদরিদ্র একটি পরিবার

হাসান আরেফিন, নলছিটি ঝালকাঠির : নলছিটি উপজেলার বিকপাশা গ্রামে বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে শেষ হচ্ছে হতদরিদ্র একটি পরিবার। প্রথমে গৃহকর্তা কাঠ মিস্ত্রী সহকারী সাইদুর রহমানের জন্মগত এ রোগটি থাকলেও বর্তমানে ছড়িয়ে পড়েছে তারই সন্তানদের মাঝে। এনিয়ে দুচিন্তায় পড়েছেন গোটা পরিবার। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা না হওয়ায় দিনদিন বাড়ছে এর প্রকোপ। মেডিকেল সাইন্স বিরল এ রোগকে অটোজম এন্ড ডমিনাল ডিসিস হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে এ রোগটির নাম নিউরো ফাইবারমেটিস, আর যিনি আবিষ্কার করেছেন তিনি এর নাম দিয়েছেন ভন রেক্লিং হোসেন ডিসিস। জানা যায়, সাইদুর রহমানের ডান গালে জন্ম থেকেই একটি তিল্ক দেখা যায়। তার বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার সেই তিল্কও বড় হতে থাকে। বর্তমানে তার বয়স ৩৬ বছর। এখন তিল্ক এতোটাই বড় হয়েছে যার ফলে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও ব্যাহত হচ্ছে । শিশু পুত্র সন্তান দুটিও পিতার রোগেই আক্রান্ত হয়েছে। সাইদুর রহমান জানান, ছোট বেলায় ডান গালে (নাকের কাছে) একটি তিল্কের মতো দেখা যায়। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় আর সেটিও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াশুনা অবস্থায় বাবা আঃ গনি হাওলাদার মারা যান। দরিদ্র পরিবারের অভাব-অনটনের সংসারে ৬ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় হওয়ায় পড়াশুনা ছেড়ে সংসারের হাল ধরতে হয়। সংসারের খরচ যোগানো এবং নিজের চিকিৎসার ব্যায় বহন করা একার পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। তাই কখনোই বিরল এ রোগের চিকিৎসা করাতে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয়নি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তার গালে থাকা তিল্কটি কালো আকারে বড় হতে থাকে। একপর্যায়ে সেই তিল্ক বড় আকার ধারণ করে পুরো গাল ছেয়ে যায় এবং সেটি ভারী হতে থাকে। বাড়তে থাকে এর ভিতরের অসহনীয় যন্ত্রনা। কিন্তু টানাপোড়নের সংসারে অর্থের অভাবে কখনো চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ হয়নি। এরই মধ্যে বিয়ের পর তাদের সংসারে দুটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তিনি আরো জানান, গত ৭বছর ধরে তিল্কয়ের ভিতরে জ্বালাপোড়া এবং চুলকানোয় অস্বাভাবিক যন্ত্রণায় ভোগেন। টাকার অভাবে অল্প খরচে অনেক জায়গায় হোমিও চিকিৎসা করানো হলেও কোন সুফল আসেনি। বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখালে তিনি ঢাকা পিজি হাসপাতালে গিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করানোর পরামর্শ দেন। সংসারের খরচ আর সন্তনদের লেখাপড়ার চিন্তা করে টাকার অভাবে সেখানে আর যাওয়া হয়নি। সাইদুর রহমান আরো জানান, কাঠমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত ভালোভাবে খেয়ে বাঁচাই কষ্ট হয়ে যায়। সামনে ঝুঁকে যখন কাজ করি তখন মুখ ভারী হয়ে যায়। অযু করতে গেলেও যদি নাড়া লাগে তাহলেই রক্ত ঝড়তে শুরু করে। কোন কিছু দিয়ে চেপে না ধরলেই রক্ত ঝড়তেই থাকে। ঠোটের পাশের স্থানে ঘাঁ হয়ে গেছে। ঝাল কোন তরকারীও খেতে পারছি না। আগে মাঝে মধ্যে একটু পান খেতাম, তাও ঝালের কারনে বাদ দিতে হয়েছে। সরেজমিনে সাইদুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবার পাশাপাশি তার সন্তানদের শরীরের ছড়িয়ে পড়েছে এ বিরল রোগের ছোঁয়া। বড় ছেলে ওয়াজ কুরুনী (৮)। তার জন্মের পর থেকে শরীরের পিছনের অংশে একটি তিল্ক ছিলো। তাও বড় হয়ে ডান পাশের পাজরের অংশ থেকে হাটু পর্যন্ত ঝট আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোট ছেলে আব্দুল্লার (৬) ডান গালের নীচের দিক থেকে একটি ঝট দেখা যাচ্ছে। বয়সের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে এটিও তাও দিন দিন বড় হচ্ছে। সংসারে মা অসুস্থ্য, স্ত্রী, সন্তান ও ছোট ভাই আছে। তাদের নিয়ে সংসার পরিচালনা করায় আর নিজের বা সন্তানদের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য হয়ে ওঠে না। নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, বিকপাশা গ্রামের সাইদুর রহমান দরিদ্র পরিবারের সন্তান। যৌথ পরিবারে একাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সাইদুলে গালে বড় একটা কালো ঝটের মতো আছে। এটির সু চিকিৎসা করানো দরকার। না হলে ওই রোগ থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা আছে। এ ব্যাপারে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আওছাফুল ইসলাম রাছেল জানান, এটা এক ধরনের চর্ম রোগ। এটাকে আমরা বলি অটোজম এন্ড ডমিনাল ডিসিস। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গোটা গোটা জাগতে পারে। এ রোগটির নাম নিউরো ফাইবারমেটিস। এটা ২ ধরনের হতে পারে। একটা চামড়ার বাইরে আরেকটা ভিতরে। ভিতরেরটায় ঝুকি বেশি, কিন্তু বাইরেরটাতে ঝুকি কম হলেও রোগ তো রোগই। এধরনের রোগীর ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারি সর্বোত্তম পন্থা।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest