ঢাকা ৭ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
করোনা সংক্রমণে মানুষের মৃত্যু ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই চলমান কঠোর লকডাউন শিথিল করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সরকর। এতে আগামী ১১ আগস্ট থেকে সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ সবকিছু খোলা থাকবে। কিন্তু গণপরিবহন, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলে প্রজ্ঞাপনে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। যাত্রী থাকবে সব আসনেই তবে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলবে অর্ধেক। পরিবহন নিয়ে সরকারের এমন নির্দেশনায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু আর বাড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সব কিছু খোলা রেখে অর্ধেক পরিবহন সড়কে নামানো হলে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে। একইসঙ্গে সড়ক, ট্রেন ও নৌপথে যাত্রীর চাপ বাড়বে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি হুমকিতে পড়বে। এতে কঠোর লকডাউন শিথিল করায় নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণ রোগী শনাক্তের পর থেকে বেশ কয়েকবার কঠোর লকডাউন দেয় সরকার। এতে সব গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। আবার কঠোর লকডাউন শিথিল করে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে গণপরিবহন চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র। গণপরিবহন অর্ধেক চলবে আর সব আসনেই যাত্রী বসবেন আগের ভাড়ায়। এতে সড়কে গাড়ি কমে যাবে, সড়কে তৈরি হবে ভিড়, গাড়িতে গাদাগাদি করে চলতে হতে পারে।
সড়কে অর্ধেক গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনার বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, স্বাভাবিক সময়ে রাজধানীতে গণপরিবহন সংকটে চাকরিজীবী মানুষ সড়কে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেখানে করোনা সংক্রমণের মধ্যেই সব অফিস খোলা রেখে অর্ধেক গণপরিবহন চালানোর নির্দেশনা দেয়া মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। এতে সড়কে মানুষের ভিড় বাড়বে এবং করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী ২৫ আগস্টের মধ্যেই করোনার ঊর্ধ্বমুখী রূপ মানুষ দেখতে পাবে। এতে সংক্রমণ বেড়ে হাসপাতালে রোগীদের চাপ সামাল দেয়া চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
কঠোর লকডাউন শিথিল করে রোববার (০৮ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যখন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় তখনও দেশে ১০ হাজারের বেশি করোনা শনাক্ত আর মৃত্যু ২৪১ জন। এই ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই অর্ধেক গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েতউল্লাহ এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলেছেন। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সড়কে অর্ধেক গণপরিবহন চালু হলে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে পাশাপাশি গাড়িতে ভিড়ও বাড়বে। নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা কষ্টকর হবে।
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘সরকার অর্ধেক গণপরিবহন চালানোর যে নির্দেশনা দিয়েছে এতে যাত্রীরা গাদাগাদি করে বসবেন। করোনা মহামারির সময়ে সরকারের এই নির্দেশনা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ক্ষতিকর। সব অফিস খুলে দেয়া হলে অফিসমুখী মানুষের চাপ বাড়বে। অর্ধেক বাস চললে স্বাস্থ্যবিধিতে উদাসীনতার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তিও বাড়াবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমাতে কোনো ভিড় যেন তৈরি না হয়, কিন্তু অর্ধেক পরিবহন চললে তো ভিড় তৈরি হবে। এটি জনস্বস্থ্যের আরও ক্ষতি হবে। এই প্রজ্ঞাপন গ্রহণযোগ্য নয়। ভালোর চেয়ে মন্দ-ই বেশি হবে। এজন্য প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গিতপূর্ণ গণপরিবহন চালু রাখতে হবে। সব লোক অফিসে গেলে সব গণপরিবহন চালু রাখা দরকার।’
করোনা সংক্রমণ কমাতে স্বাস্থ্যবিভাগের কাজে অব্যবস্থাপনা রয়েছে। এই অব্যবস্থাপনা গত দেড় বছরেও স্বাস্থ্যবিভাগ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরমধ্যে ফের অর্ধেক গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়ায় ভিড় বেড়ে যাবে, ফলে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।
সবকিছু খোলা রেখে অর্ধেক গণপরিবহন চালানোর কারণে করোনা আক্রান্তে মানুষের মৃত্যু আরও বাড়তে পারে কিনা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এর সঙ্গে ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST