কুড়িগ্রামে কাশফুলের মুগ্ধতায় হৃদয় ছুঁয়েছে দর্শনার্থীদের

প্রকাশিত: ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১

কুড়িগ্রামে কাশফুলের মুগ্ধতায় হৃদয় ছুঁয়েছে দর্শনার্থীদের

সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রাম ।।। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায়,
‘কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, সৃষ্ট্রার কি অপার সৃষ্টি।’

কবি জীবনানন্দ দাশ শরৎ বন্দনায় লিখেছেন,‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’।

কবি জসীম উদদীন ‘বিরহী নারী’ মননে কবিতায় লিখেছেন-‘গণিতে গণিতে শ্রাবণ কাটিল, আসিল ভাদ্র মাস, বিরহী নারীর নয়নের জলে ভিজিল বুকের বাস’।

এমন শতশত উক্তি রয়েছে বাংলার সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দেয়া কাশফুল নিয়ে। কারো জন্য কাশফুল মনের মুগদ্ধতা বাড়ায় আবার কারো জন্য অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বাড়ায়।

প্রকৃতিতে যখন শরৎ কাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় আগমনী বার্তা। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন চরা ল গুলোতে প্রকৃতিতে কাশফুলের রাজত্ব দেখে যে কারোই চোখ-মন জুড়িয়ে আসবে।

কাশফুলের সৌন্দর্য্য দেখতে প্রতিদিন প্রকৃতি প্রেমীদের পদ চারণে মুখরিত বিশেষ করে উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের সোনাইকাজী এলাকার শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর থেকে উত্তরে মাত্র ৫শ গজ দুরে ধরলার চরাঞ্চল গুলো। কাশফুলের বাতাসে দোল খাওয়ার দৃশ্য যেন মন কাড়বে সবার। প্রতিবছর শরতের এই সময়টাতে চরা লে শহরের মানুষের পদাচারণ পড়ে।

শরতের শেষ বিকেল। থেমে থেমে বৃষ্টি। কালো মেঘের আবরণ ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে মিষ্টি রোদ। সাদা মেঘের মিটিমিটি হাসি যেন শুভ্রতা ছড়াচ্ছে চারদিকে। ফুটেছে রঙিন শিউলি। সাদা কাশফুল শারদ বন্দনার কলরবে মেতে উঠেছে। শরত শোভায় প্রকৃতিতে সাজ-সাজ রব। নীল আকাশে চলছে সাদা-কালো মেঘের লুকোচুরি। কখনো কালো মেঘে আবার কখনো সাদা মেঘের আভরণে লুকিয়ে হাসছে সোনালী সূর্য।

পরন্ত বিকেলে মুহুর্তের দৃশ্য অন্য রকম। কেউবা স্ব-পরিবারে ঘুরতে আসেন আবার কেউ প্রিয়জনের সাথে এসেছেন সোনালী শরতের মিষ্টি গন্ধের স্বাদ নিতে অনেকেই ছবি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট দিচ্ছেন। আবার অনেকেই প্রিয়জনকে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি ফেসবুকে লাইভে দেখাচ্ছেন। এভাবেই ঘুরতে আসা দর্শনার্থীর কাশবনে ব্যস্ত সময় পাড় করেন।

কাশফুলের আদি নিবাস রোমানিয়ায়। কাশফুল মূলত ছন গোত্রীয় এক ধরনের ঘাস। ঘাস জাতীয় উদ্ভিদটি উচ্চতায় সাধারণত ৭-৮ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ বেশ ধারালো। কাশবন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে না এর রয়েছে নানা ঔষধি গুণও। নদীর ধার,জলাভূমি, চরা ল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের উঁচু স্থানে কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই কাশফুল বেশি জন্মাতে দেখা যায়। গ্রাম বাংলার অপরূপ শোভা কাশবন ছিল চিরচেনা দৃশ্য হলেও এই কাশবন এখন আগের মতো চোখে পড়ে না।

পাশ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলা দুর্গাপুর এলাকার থেকে চরের মধ্যে সাদা ফুলের সমারোহ দেখতে আসা অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী মৌমিতা খাতুন জানান, অনেকের কাছ থেকে শুনেছি ফুলবাড়ী উপজেলার শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর উত্তরে মাত্র ৫শ গজ দুরেই কাশফুল বাগান দেখলেই মনটা জুড়ে যায়। তাই আমার ভাবীসহ তিন বোন এখানে এসেছি। কাশফুল সত্যি প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। শহরের এমন দৃশ্য চোখে পড়েনা। আমাদের গ্রাম বাংলার অনেক ফুল হারিয়ে গেছে। তবে এখন নদী তীরবর্তি চরে কাশবন দেখে আসলেই মনটা ভালো হয়ে যায়।

লালমনিরহাট সদরের থানাপাড়া এলাকার শিক্ষার্থী সাদমান মিরাজ ও উৎস চন্দ্র সরকার বিডি২৪লাইভকে বলেন, কাশফুল সত্যি প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। শহরের এমন দৃশ্য চোখে পড়েনা। তবে এখন নদী তীরবর্তি চরে কাশবন দেখে আসলেই মনটা ভালো হয়ে যায়।

ফুলবাড়ী উপজেলার গংগাহাট এলাকার মৃনাল কান্তি রায় ও সোনাইকাজী এলাকার শামিম বিডি২৪লাইভকে বলেন, এসে বেশ ভালই লাগছে। আমরা গ্রামে থাকি কিন্তু গ্রামের সৌন্দর্য্য দেখা যায় না। গোধুলী বেলায় এখানে এসে আসলেই খুব ভাল লাগছে।

শেখ হাসিনা ধরলা পাড়ের বাসিন্দা আফজাল হোসেন, চরের মধ্যে এই কাশিয়া অনেক কাজে লাগে। বন্যার সময় নদীর স্রোত কমায়। কাশিয়া গরুকে খাওয়ানো যায়। এছাড়াও পানের বরজের জন্য এই কাশিয়া রাজশাহী,খুলনা,বরিশাল সহ দেশের অনেক জায়গায় নৌকা যোগে।

একই এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান ও ধীবেন্দ্র নাথ রায় বিডি২৪লাইভকে জানান, চরের পরিত্যক্ত বালু জমিতে একাই হয় কাশিয়া। এর জন্য কোন টাকা- পয়সা খরচ করে আবাদ করা লাগে না। কাশিয়া ৭-৮ফুট লম্বা হয়। এর ফুল আড়াই থেকে ৩ফুট ফুল হয়। বছরে একবারই কাশিয়া হয়।কার্তিক মাসে এই কাশিয়া কাটা হয়।

এক বিঘা জমিতে প্রায় পনের শ থেকে দু’ হাজার কাশিয়ার আটি হয়। কাশিয়ার কেটে ১৪ইি করে আটি বেঁধে ১০/১২টাকা করে বিক্রি হয়। গড়ে প্রতি বিঘা জমি থেকে কাশিয়া থেকে ১০/১২হাজার টাকা আসে। কার্তিক মাসে চরের অভাব দেখা দেয়। কাশিয়া বিক্রি করে যে টাকা আসে তাতে কার্তিক মাসের অভাব পার হয়ে যায়।

এই বিষয়ে নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার জানান, ধরলার চরে কাশফুল প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দেয়। চরা লের কাশবন দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের ভীড় জমে। কাশফুল সৌন্দর্য্য দেখে অনেক মানুষের মনে আনন্দ দেয়। কাশফুল আমাদের পরিচিত উদ্ভিদ হলেও এর আদিনীবাস রোমানিয়ায়। এর ইংরেজি নাম ক্যাটকিন এবং বৈজ্ঞানিক নাম হলো স্যাকরারাম এসপোটেনিয়াম।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest