কুড়িগ্রাম সীমান্তে ফেলানী হত্যার ১১ বছরেও ন্যায় বিচার পায়নি তার পরিবার

প্রকাশিত: ৭:০০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২২

কুড়িগ্রাম সীমান্তে   ফেলানী হত্যার ১১ বছরেও ন্যায় বিচার পায়নি তার পরিবার

সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম : ০৭.০১.২০২২
কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১১ বছরেও ন্যায় বিচার পায়নি তার পরিবার। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবা নুর ইসলামের সাথে ভারত থেকে বাংলাদেশ ফিরছিলেন ফেলানী। এসময় মই বয়ে কাঁটাতার পারাপারের সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত হয় ফেলানী। । বাবা নুর ইসলাম প্রাণে বেঁচে গেলেও মেয়ে ফেলানীর মরদহ দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকে কাঁটাতারে।
পরে এ নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতে ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সদর দফতরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে নির্দোষ ঘোষণা করেন রায় দেয় নিজ বাহিনীর আদালত।
ফেলানীর বাবা-মা রায় প্রত্যাখ্যান করলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু করে ভারত। পরের বছর ২ জুলাই অভিযুক্তকে আবারও নির্দাষ ঘোষণা করো রায় দেওয়া হয়।
এরপর ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচারের আশায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে যথাযথভাবে রিট আবেদন করেন ফেলানীর বাবা ও মানবাধিকার সংগঠন সুরক্ষা মঞ্চ। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত পূর্ণাঙ্গ ব্রেঞ্চ রিট আবেদনটি গ্রহণ করলেও একাধিকবার শুনানীর তারিখ পরিবর্তন হওয়ায় এখনও ন্যায় বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার।
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ অনেকের কাছে আমরা গিয়েছি, কিন্তু ১১ বছরেও ন্যায় বিচার পেলাম না।
বাবা নুর ইসলাম বলেন, দুই দুই বার কুচবিহার গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের নৃশংসতার বর্ননা দিয়েছি। তারপরও ন্যায্য বিচার পাইনি। তবে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা ছাড়িনি।
ফেলানীর হত্যাকান্ডে পিতা নুর ইসলামের আইন সহায়তাকারী কুড়িগ্রাম পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, একাধিকবার তারিখ বদলার পর ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট শুনানীর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ভারতের সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি এন ভি রোমানা ও বিচারপতি মোহন এম সাÍনা গদ্ধারক নিয়ে গঠিত দ্বত বেরেঞ্চ শুনানীর জন্য আইটম নম্বর-৩ হিসব তালিকাভুক্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। অথচ সুপ্রীম কোর্ট থেকে বিবাদীকে শোকজ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা শোকজের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু পরর্বতীতে আর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমান কার্য তালিকা থেকে বাদ পড়ে আছে রিটটি। করোনার কারনে রিটটির সর্বশেষ অবস্থা জানন না তিনি।

এডভোকেট আব্রাহাম লিংকন ন্যায্য বিচারের আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘জেনারল সিকিউিরিটি ফোর্স কোর্টে বাদী ছিল বিএসএফ, আসামি ছিল বিএসএফ এবং বিচারকও ছিল বিএসএফ। ফলে ন্যায্য বিচার পাওয়া যায়নি। সুপ্রীম কোর্টে ন্যায্য বিচার পাওয়া যাবে। আর এই রিট নিস্পত্তি করতে সুপ্রীম কোর্ট য পর্যবেক্ষণ দিবেন তাতে দু-দেশের সীমান্ত ব্যবস্নাপনা ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
ফেলানীর পিতা নুর ইসলাম পরিবার নিয়ে ভারতে থাকতেন এবং সেখানে ইট ভাটায় কাজ করতেন। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর রামখানার কলোনীটারী গ্রামে মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তাই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরতে ২০১১সালের ৬ জানুয়ারী রওনা হন বাংলাদেশ। ৭ জানুয়ারি এ হত্যাকান্ড ঘটে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest