ঢাকা ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১ আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:৩২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও উপ-সড়কে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। চলাচলে নেই কোন নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা। এই মহাসড়ক ও পার্শ্ববর্তী উপ-সড়ক যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে যাত্রী ও পথচারীরা। গত তিন মাসে অন্তত শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। হাজারো মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছে। এভাবে থমকে যাচ্ছে বহু পরিবার। আর যেসব মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন অথবা পঙ্গুত্ব বরণ করেন তাদের পরিবারের খবর কেউ রাখে না!
কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে এসব সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমে আসতো। লবণের পানি, সড়কের উপর দৈনন্দিন বাজার, ফিটনেস বিহীন গাড়ি, নিষিদ্ধ তিন চাকার গাড়ি ও সড়ক ছোট হওয়াকে দুর্ঘটনার কারণ বলে দায়ী করেছেন সচেতন মহল।
স্থানীয়রা জানান, পলিথিন দিয়ে লবণ পরিবহনের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও এখনও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার কোটি কোটি টাকায় রাস্তা তৈরি করছে আর লবণ পানিতে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লবণ পরিবহনের কারণে বিকাল থেকে ভোর পর্যন্ত এই সড়ক সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। অন্যদিকে ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। ফলে অকালে ঝরছে মানুষের প্রাণ। বিশেষ করে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে লবণবাহী ট্রাক থেকে পানি পড়ে পিচ্ছিল হচ্ছে প্রতিদিন। এ কারণে পিচ্ছিল সড়ক মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। দিনের বেলায় সামান্য পরিমাণ লবণবাহী ট্রাক চলাচল করলেও সন্ধ্যার পর বেশি সংখ্যক চলাচল করে। লবণ আর ধুলোয় জমাট বেঁধে আস্তরণ তৈরি হয় এবং সড়ক হয়ে উঠে তেলতেলে।
এ সময় কোন যানবাহন প্রয়োজনের সময় ব্রেক করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এভাবে গত তিনমাসে সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
পরিবহণ শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালকের বেপরোয়া গতি। দুর্ঘটনার আরও একটি অন্যতম কারণ হলো, ঘুমের ঘোরে গাড়ি চালানো। বিশ্রাম ব্যতীত গাড়ি চালানোর ফলে তাদের চোখে অনেক সময় ঘুম চলে আসে। ফলে ঘটে যায় মারাত্মক দুর্ঘটনা।
চকরিয়া-বদরখালী সড়ক, পেকুয়া-চকরিয়া সড়ক, ঈদগাঁও-চৌফলদন্ডী সড়ক, গোমাতলী-ইসলামপুর সড়ক, কালিরছড়া থেকে নাপিতখালী পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা খুবই বিপজ্জনক। আবার বেশ ক’জন পথচারীদের মতে, মহাসড়কে শুধু লবণ পানির কারণে সড়ক বিপজ্জনক হওয়ায় দুর্ঘটনা বেড়েছে। এসবের পরও খোলা ট্রাকে লবণ পরিবহন দমানো যাচ্ছে না। পিচ্ছিল হওয়া ছাড়াও লবণ পানি পড়ে মহাসড়কের কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে হারবাং, বরইতলী, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা ও খুটাখালী ইউনিয়নের বিশাল এলাকা মহাসড়কের মধ্যে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের ২০টি স্পটে সড়ক দখল করে দৈনিক বাজার বসার কারণে গাড়ি চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় সময় দূরপাল্লার গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ছোট গাড়িগুলো প্রধান সড়কে চলাচলে নিষিদ্ধ করলেও এসবের তোয়াক্কা করছে না গাড়ি চালকরা। এছাড়াও পর্যটন শহর কক্সবাজার মৌসুম হওয়ায় গাড়ি চলাচল বাড়ছে। এসব কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
খোলা ট্রাকে করে লবণ পরিবহন কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। এ কারণে এলাকার লবণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। খোলা লবণ পরিবহন বন্ধে সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় লবণ পরিবহনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার এম এম রকিবুর রাজা।
৮ ফেব্রুয়ারি সকালে কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাট এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় পিকআপের ধাক্কায় একই পরিবারের ৫ সহোদর ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। ৫ সন্তানের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গেছে সদ্য বিধবা মা ও স্বজনরা। নিহতরা পিতার মৃত্যুর দশম দিন ধর্মীয় রীতিনীতি পালন শেষে ফেরার পথে উপজেলার মালুমঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এর আগের দিন সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া এলাকায় শ্যামলী যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক সংঘর্ষে চালক-হেলপারসহ ৩ জন নিহত হয়েছে। এ সময় গাড়ি দুটিতে থাকা অন্তত ৩০ যাত্রী আহত হয়েছে।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহা সড়কের চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মালুমঘাট ও দোহাজারি হাইওয়ে থানার অন্তর্গত মহাসড়কে বেশকিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিসংখ্যান তার কাছে নাই বলে দাবি করেন তিনি।
তবে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শাফায়েত হোসেন জানান, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু স্থানে আঁকা-বাঁকা সড়ক, সরুপথ, অদক্ষ চালক ও ছোট সড়কগুলোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
তিনি আরও বলেন, সোমবার ৮ ফেব্রুয়ারি সকালে কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাট এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় পিকআপের ধাক্কায় একই পরিবারের ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে; পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনারোধে মহাসড়কে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ হলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এ ছাড়া নছিমন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলে এ সড়কে। অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে চলে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক। ফলে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST