জরুরি সেবা পেতেও অপেক্ষা

প্রকাশিত: ১২:০৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২

জরুরি সেবা পেতেও অপেক্ষা

যে কোনো বিপদ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে দ্রুত প্রতিকার পেতে চালু রয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা। ফোন নম্বর ‘৯৯৯’। ফোন করলে ভুক্তভোগী সেবা পাচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ফোন পাওয়ার পর থেকে সমস্যা সমাধানে বা সাড়া দেওয়ার সময় (রেসপন্স টাইম) নিয়ে। বর্তমানে জরুরি সেবায় সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে গড় সময় ২০ মিনিট। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এটি অন্তত চার গুণ বেশি। অন্যান্য দেশে ৯৯৯-এর মতো জাতীয় জরুরি সেবা সর্বোচ্চ ৫ মিনিটের মধ্যে দেওয়া হয়ে থাকে।

বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, কল দিলেও সঠিক সময়ে পুলিশ পৌঁছেনি। সর্বশেষ চলচ্চিত্র অভিনেতা রিয়াজের শ্বশুর মহসিন খান ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন। লাইভের শুরুর দিকেই এক ব্যক্তি ৯৯৯-এ ফোন করেন। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লেগে যায় প্রায় ২২ মিনিট। ১৭ মিনিট লাইভে কথা বলেছিলেন মহসিন খান। এর মধ্যে পুলিশ পৌঁছাতে পারলে ঘটনাটি ঠেকানো যেত বলে মনে করছেন অনেকে।

জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলাদেশে জরুরি সেবা পেতে বেশি সময় লাগছে। অন্য দেশে যিনি ফোন করেন তাৎক্ষণিকভাবে তার অবস্থান জরুরি সেবা কেন্দ্রের কাছে চলে যায়। আলাদাভাবে তার কাছে জানতে হয় না কোথায় কোন এলাকায় তিনি অবস্থান করছেন। কিন্তু বাংলাদেশে ৯৯৯-এ কল করলে ভুক্তভোগীর কাছে জানতে চাওয়া হয় কোথায় তার অবস্থান। শোনা হয় তার সমস্যার কথা। ঘটনা ও অবস্থান নিশ্চিত হতেই কিছু সময় চলে যায়। এরপর রয়েছে বড় বড় শহরের যানজট সমস্যা। তা ছাড়া দেশের কোনো থানায় জরুরি সেবার জন্য আলাদা কোনো যানবাহন নেই। থানার যানবাহনই ব্যবহূত হয়। অনেক সময় তা থানার দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত থাকে। এ ছাড়া দেশে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে ৯৯৯-এর সেবা পেতে বিলম্ব হয়।

এক কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতাল ঘিরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের একটি চক্র আছে। অনেক সময় জরুরি সেবা থেকে কল পেলেও চালক সেই চক্র এড়িয়ে রোগীর কাছে সময়মতো পৌঁছতে পারেন না। সিরিয়াল মেনে তাকে যেতে হয়। এমনও নজির আছে, সেবার প্রত্যাশীর সবচেয়ে কাছে যে চালক রয়েছেন তাকে খুঁজে না পেয়ে অন্যদের ফোন দিতে হচ্ছে। এতে সময়ক্ষেপণ হয়।

তবে অ্যাম্বুলেন্স সেবা আরও দ্রুত দেওয়ার লক্ষ্যে ৯৯৯ কর্তৃপক্ষ ‘অ্যাম্বুলেন্স অ্যাপ’ চালু করতে যাচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্স চালকদের মোবাইলে এই অ্যাপস খোলা থাকবে। চালক ও সংশ্নিষ্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে জরুরি সেবা দেওয়া যায়, তা নিয়ে এরই মধ্যে কিছু কাজ শুরু হয়েছে।

জরুরি সেবার হটলাইনে কাজ করছেন এমন কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ২৮-৩০ হাজার কল ৯৯৯-এ আসে। এর মধ্যে এক হাজারের মতো কল জরুরি সেবার থাকে। বাকি কলগুলো থাকে নানা ধরনের জিজ্ঞাসার। ২০১৭ সালে চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সেবার জন্য কল এসেছে সাত লাখ ৩৩ হাজার ৯৩৭টি। এর মধ্যে ৭৮.৮৭ শতাংশ পুলিশি সেবা চেয়ে করা হয়। ৯.৫১ শতাংশ অগ্নিদুর্ঘটনার পর করা হয়েছে। ১১.৬২ শতাংশ কল গেছে অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে।

আরেক কর্মকর্তা চট্টগ্রামের একটি ঘটনার উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর অবস্থান মৌখিকভাবে জানতে হওয়ায় সঠিক সময়ে সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। বছর দুয়েক আগে চট্টগ্রামের বাটারমোড় এলাকা থেকে এক পোশাককর্মী ৯৯৯ ফোন করে জানান, তিন বখাটে তাকে অনুসরণ করছে। তিনি দ্রুত পুলিশের সহযোগিতা চান। এরপর তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। ৯৯৯ থেকে ঘটনাটি স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়। কয়েক ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে ওই পোশাককর্মীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ততক্ষণে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে কল করা ব্যক্তির অবস্থান জানতে পারলে খোঁজাখুঁজি না করে দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে পারত পুলিশ।

একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পার হলেও ৯৯৯-এর নিজস্ব কোনো দপ্তর নেই। ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি স্থাপনায় সাড়ে পাঁচশ জনবল নিয়ে তিন পালায় (শিফটে) দায়িত্ব পালন করছেন তারা। কল ধরার জন্য ১০০ জনের বসার আয়োজন।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, ৯৯৯-কে ঢেলে সাজানো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ৫০০ জনের বসার ব্যবস্থাসহ কল রিসিভার সেন্টার করা হবে। ডেমরার আমুলিয়ায় প্রায় তিন একর জায়গার ওপর জরুরি সেবার হটলাইন কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন হবে। পুলিশের একটি স্বতন্ত্র ইউনিট হিসেবে একটি কাজ করবে এটি। এজন্য জনবল প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৮৪৭ জনের। এ ছাড়া ৯৯৯ সেবার আওতায় সেভ আওয়ার সোল (এসওএস) নামে একটি অ্যাপ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হয়তো কেউ ফোন করে তার বিপদের খবর পুলিশকে জানাতে পারছে না। তখন ওই অ্যাপসের বাটনে চাপ দিলেই তথ্য ৯৯৯-এ চলে যাবে।

পুলিশ অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, রেসপন্স টাইম কমানোর ব্যাপারে আমরাও বেশ কিছু পরিকল্পনা নিচ্ছি। কল লোকেশন তাৎক্ষণিকভাবে পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেটা অনুমোদন হলে সেবার জন্য সময় আরও কম লাগবে। আমরা চাই মানুষ আরও দ্রুত সেবা পাক। সূত্র : সমকাল।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest