যোগোপযোগী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ডাঃ সেলিম হোসেনের একান্ত সাক্ষাৎকার।

প্রকাশিত: ২:৩৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০২৩

যোগোপযোগী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ডাঃ সেলিম হোসেনের একান্ত সাক্ষাৎকার।

১)এলোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর:এলোপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগের নামে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে ,কিন্তু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগ নয় বরং রোগীর সম্পূর্ণ লক্ষণের উপর চিকিৎসা করা হয়।
এলোপ্যাথি ঔষধ ইতর প্রানীদের উপর পরীক্ষিত,যার ফলে মানব শরীরে প্রয়োগ করার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়ে থাকে,পরবর্তীতে নতুন নামে রোগটি ফিরে আসে। আর হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সুস্থ মানবদেহে পরীক্ষিত,যার তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।ফলে রোগটি সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব।
২)হোমিওপ্যাথি বিষয়টিকে আপনার প্রফেশন হিসেবে বেছে নেয়ার পেছনে আপনার অনুপ্রেরণা বা কারণ কি ছিলো?
উত্তর:আসলে একটা সময় আমি হোমিও ঔষধ সেবন করেছিলাম তখন এর কার্যকারিতা দেখে অবাক হই,তখন খুব হোমিও সম্পর্কে খুব জানতে ইচ্ছে হয়,তখনই সিদ্ধান্ত নেই হোমিও ডাক্তার হবো।
৩)হোমিওপ্যাথি কি শিশু ও বয়ষ্ক তথা পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই প্রযোজ্য?
উত্তর:হ্যাঁ,হোমিওপ্যাথি শিশু ও বয়স্ক তথা পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য প্রযোজ্য ।
৪)হোমিওপ্যাথিতে কি সার্জারীর কোন অপশন আছে? সার্জিক্যাল কন্ডিশনে আপনি কিভাবে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন?
উত্তর:হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীকে বিনা কষ্টে চিকিৎসা প্রদান করা হয়,তাই সার্জারির কোন অপশন নেই।কিডনিতে পাথর ,টিউমার,আচিল ইত্যাদি জটিল রোগে আমরা সূক্ষ্ম মাত্রায় হোমিও ঔষধ প্রদানের মাধ্যমে রোগ নির্মূল করে থাকি।তবে জটিল রোগসমূহ বা সার্জিক্যাল কন্ডিশন যখন প্রয়োজন পড়ে তখন আমি আমার পেশেন্টদের সার্জনদের কাছে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেই।
৫)এপেন্ডিসাইটিস, গল ব্লাডার স্টোন ও কিডনি স্টোনের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কি আছে?
উত্তর:হ্যাঁ, এপেন্ডিসাইটিস, গল ব্লাডার স্টোন ও কিডনি স্টোনের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আছে।হোমিও চিকিৎসা পদ্ধতিতে আমরা রোগীকে কোনো রুপ কষ্ট ছাড়া অর্থ্যাৎ সার্জারি ছাড়া হোমিও ঔষধ এর মাধ্যমে এসকল রোগীদের সুস্থ করে থাকি।
৬)হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে আচিল পড়ে যায়। এটা কিভাবে হয়?
উত্তর:আচিল মূলত HPV ভাইরাসের ফলে হয়ে থাকে। আচিল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে ।কারো আচিল ছোট , কারো বড়।কারো আচিল থেকে রক্তস্রাব হয়।আবার অনেকের ব্যাথাও হয়ে থাকে ।মাথার পিছনে,মুখে ও গায়ের বিভিন্ন জায়গায় আকারে বড় ও কালো থাকলে থুজা ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।আবার মুখে ছোট ছোট অনেক গুলো সূচাঁলো আচিল ও চোখের উপরে আচিল এর জন্য cauticum ব্যবহার করা হয়।এছাড়াও আরো অনেক ঔষধ রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।এজন্যই মূলত হোমিওপ্যাথিতে খুবই তাড়াতাড়ি আচিল দূর হয়।
৭)হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই শুনে থাকি চিকিৎসার প্রাথমিক অবস্থায় সমস্যাটা বৃদ্ধি পায় বা বাড়ে এরপর ধীরে ধীরে তা ঠিক হয়ে যায়। এটা কতোটুকু সত্যি?
উত্তর:হোমিওপ্যাথি একটি সদৃশ বিধান ।হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাথমিক সমস্যাটা বৃদ্ধি পায় , এর অর্থ হলো সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করা হয়েছে , যাকে আর্দশ আরোগ্য বলা হয়।পরবর্তীতে ধীরে ধীরে রোগী সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে যায়।
৮)খুব কমন একটা সমস্যার সমাধানে হোমিওপ্যাথির শরণাপন্ন সকলেই হয়ে থাকেন তা হলো মাছের কাটা গলায় বা ফ্যারিংস এ আটকে যায় যা এমন কোন হোমিওপ্যাথি ওষুধের মাধ্যমে সাথে সাথেই ঠিক হয়ে যায়। এ ব্যাপারে একটু বলেন।
উত্তর:মাছের কাটা গলায় বা ফ্যারিংসে আটকে যাওয়া খুব কমন একটা সমস্যা ।আমাদের হোমিও ঔষধ প্রয়োগের সাথে সাথেই তা ঠিক হয়ে যায়।আমরা লক্ষণভেদে বিভিন্ন ঔষধ প্রয়োগ করে থাকি ।এর মধ্যে সাইলেসিয়া , এনালাগিস এআরভি, হিপার সালফ্ ইত্যাদি ।
৯)হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার বা ওষুধের কি কোন সাইড এফেক্ট আছে?
উত্তর:হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার বা ঔষধের কোন সাইড এফেক্ট নেই।
১০)হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সাধারণত কালেক্ট করা হয় কিভাবে?
উত্তর:হোমিওপ্যাথি ঔষধের প্রধান উৎস উদ্ভিদ।শতকরা 70 ভাগ ঔষধ তৈরি করা হয় উদ্ভিদ থেকে।এছাড়া প্রানীজ , খনিজ, গন্থিজ ও রাসায়নিক উৎস থেকে হোমিও ঔষধ কালেক্ট করা হয় ।
১১)হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতির জন্য মৌলিক উপাদানগুলো কি আপনি নিজেই মিক্স করেন না কি কোন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানী আছে?
উত্তর:হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি আছে ।এর মধ্যে জার্মানি ঔষধ গুলো খুব ভালো।এছাড়াও পাকিস্তান,ভারত ও বাংলাদেশী কিছু কোম্পানি থেকে ঔষধ নেওয়া হয়।
১২)হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে আপনি হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনের মাধ্যমে সুস্থতা পাওয়া রোগীর সাফল্যের হার কেমন বলবেন?
উত্তর:হোমিওপ্যাথি ঔষধ সদৃশ বিধান মতে সূক্ষ্ম শক্তি দ্বারা রোগকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করে থাকে।লক্ষণ মিলিয়ে সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করলে হোমিওতে রোগকে নির্মূল করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
১৩)আপনার পেশেন্টদের মধ্যে কোন বয়সী মানুষ বেশী?
উত্তর:শিশু ও বয়স্ক পেশেন্ট বেশি।
১৪)আপনার রোগীদের মধ্যে বিত্তশালী ও শিক্ষিত রোগীর হার কেমন?
উত্তর:বর্তমানে শিক্ষিত ও বিত্তশালী রোগীর পরিমান খুবই বেশী।তারা স্বাস্থ্য সচেতন, তারা হোমিও ঔষধ সম্পর্কে ও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে জেনেই হোমিও চিকিৎসা নিতে আসে।
১৫)আপিনার প্রফেশন নিয়ে আপনি কতোটা সুখী এবং স্যাটিসফাইড?
উত্তর:আলহামদুলিলাহ আমি আমার প্রফেশন নিয়ে খুবই সুখী ও স্যাটিসফাইড।
হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে জনসাধারণের উদ্দেশে আপনি কিছু বলেন?
উত্তর:যুগোপযোগী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন ২০২৩ মহান জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা, মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোঃ জাহিদ মালেক ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম হোমিওপ্যাথিক সংগঠক, চিকিৎসক নেতা, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বারবার মনোনীত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের মাননীয় সফল চেয়ারম্যান হোমিওরত্ন ডাঃ দিলীপ কুমার রায় , রেজিস্টার কাম সেক্রেটারি ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম , পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ডাঃ মোঃ শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন।আমি মনে করি ভবিষ্যতে হোমিওপ্যাথি আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে,ইনশাল্লাহ ।হোমিওপ্যাথি একটি বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা।আপনারা সবাই একজন রেজিস্টার হোমিও চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করুন এবং সুস্থ থাকুন ।
ডাঃ মোঃ সেলিম হোসেন
সিনিয়র কনসালটেন্ট,
হোমিওপ্যাথি মেডিসিন
প্রভাষক–আমেনা বেগম হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
চেম্বার:- নাফী হোমিও ফার্মসী , ৪১৯, বর্ণমালা সড়ক, উত্তর ইব্রাহিমপুর, কাফরুল, ঢাকা। মোবাইল :০১৮১২২৭৮৭১৮, ০১৯৭২২৭৮৭১৮


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest