মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ৪টি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ:

প্রকাশিত: ৮:৪৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২০

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ৪টি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ:
মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, আলোকিত সময় আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আজ ২৩/০১/২০২০ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। এতে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে গাম্বিয়ার দায়েরকৃত মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চারটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। আদালত সর্বসম্মতভাবে এ আদেশ জারি করেছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় আইসিজের প্রধান বিচারপতি আবদুল কাভি আহমেদ ইউসুফ আদেশ ঘোষণা করেন। আদেশ ঘোষণার শুরুতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার দায়েরকৃত মামলার পক্ষে রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও গণহত্যার যেসব আলামত আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল, সেসব বিরোধের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি ইউসুফ। আদালত বলেছেন, গণহত্যা সনদের ২ নং ধারা অনুযায়ী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে একটি বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে গত বছরের নভেম্বরে মামলা করে গাম্বিয়া। গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গাম্বিয়ার পক্ষে মামলার শুনানিতে নেতৃত্ব দেন দেশটির বিচার বিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন দেশটির নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি।সেসময় শুনানিতে মামলাকারী গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যাতে আর কোনও ধরনের সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ৫টি আদেশ চেয়েছিল। বৃহস্পতিবার মামলার আদেশ ঘোষণায় জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালত বলেছেন, গণহত্যা সনদের ৪১ ধারার আওতায় তিনটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশের শর্তসমূহ বিরাজ করছে। গাম্বিয়া সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীর সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী যেসব ব্যবস্থার আদেশ চেয়েছে; সেগুলোর প্রথম তিনটির লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। দু’দিন আগে মিয়ানমার সরকারের গঠিত একটি কমিশন ২০১৭ সালে রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর অপারেশন ক্লিয়ারেন্সের সময় কিছু সৈন্য সেখানে যুদ্ধাপরাধ করলেও গণহত্যার মতো ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না বলে এক তদন্ত প্রতিবেদনে জানায়। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ঘোষণার আগে মিয়ানমারের ওই প্রতিবেদনকে অনেকেই প্রতারণামূলক হিসেবে দেখছেন। এর আগে মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলছে এমন অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় বলা হয়, মিয়ানমার ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি সেনা পোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাখাইনে এ অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন, নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা এবং নারীদের গণধর্ষণ করা হয়। মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে গত মাসে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগেতে নিজের দেশের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি।সেখানে তিনি মিয়ানমার সেনাদের গণহত্যার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, এই মামলার শুনানির অধিকার নেই আন্তর্জাতিক আদালতের। অপরদিকে মিয়ানমারের গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকারের জবাবে গাম্বিয়ার এক আইনজীবী আদালতের কাছে রোহিঙ্গা হত্যা ও নিপীড়নের বেশ কিছু ছবি প্রদর্শন করেন। এগুলোকে গণহত্যার আলামত হিসেবে আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন তিনি। সে সময় গাম্বিয়ার এক আইনজীবী বলেন, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগে নিজ দেশের সৈন্যদের জবাবদিহি করার জন্য মিয়ানমারকে বিশ্বাস করা যায় না এবং সহিংসতা বন্ধের জন্য এখনই ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest