আমরা কি করোনাতংকিত, নাকি করোনার ছুটিতে আনন্দিত?

প্রকাশিত: ৪:৫৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০২০

আমরা কি করোনাতংকিত, নাকি করোনার ছুটিতে আনন্দিত?

মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ আমরা কি আদৌ করোনাতংকিত, নাকি করোনান্দিত? পৃথিবীর সকল মানুষ মৃত্যুভয়ে আতংকিত, শংকিত। আর আমরা বাংলাদেশের মানুষ এমন সব কাজ করছি যাতেআমরা এক নির্বোধ, উদাসীন জাতিতে পরিণত হচ্ছি। জানিনা কি হবে আমাদের! গতকাল কমলাপুরে যা হল তারপর আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিছু কিছু মানুষ মুখে মুখে কোয়ারেন্টাইন নিয়ে সিরিয়াস হলেও তারা বাস্তবিক অর্থে নিজেরাই নিয়ম পালন করছেন না। টিকিটের জন্য লাইনধরা মানুষগুলোকে আমার কাছে মনে হচ্ছিল এরা এক একটি জলজ্যান্ত করোনাভাইরাস। এরা কি করোনাভাইরাসের ভয়ে লাইন ধরছিল নাকি করোনাভাইরাসের আগমনে আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে গায়ে গা লাগিয়ে লাইনে দাড়িয়েছিল বাড়ী যাওয়ার জন্য। একটা গানের কথা মনে পড়ে গেল, এটা খুব সম্ভব কোন এক ঈদে একটি মুঠোফোন কোম্পানীর ক্যাম্পেইন ছিল, গানের লাইনটি ছিল, “স্বপ্ন যাবে বাড়ী”। কমলাপুরের অবস্থা দেখে আমার মনে হচ্ছিল, ” করুনা যাবে বাড়ী”। আমরা কি আদৌ করোনাতংকিত, নাকি করোনান্দিত? যে যেখানেই আছেন সেখানেই অবস্থান করুন। যেখানে মৃত্যুর ছোবলে পুরো পৃথিবী কাপছে সেখানে আমরা পাব্লিক হলিডে পালনে রওয়ানা দিচ্ছি গ্রামে। কমলাপুর রেল ষ্টেশনের এত বড় ভীড় প্রশাসনের নজর কাড়লনা? নাকি টিকিটের বিক্রি বাট্রা ভাল হচ্ছে বলে টু শব্দটি করারও প্রয়োজন বোধ করেননি। কালকের ঐ কমলাপুরের ভীড়ে আপনি কি নিশ্চিত কারো শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিলনা? শনাক্ত হয়তো ছিলনা। কিন্তু করোনা ট্রান্সমিট হয়নি এটা বলা খুব দুস্কর। যদি না হয় তাহলে ধরে নিতে হবে আমাদের উপর আল্লাহর খাস রহমত আছে। আমরা বই পড়ে মুখস্ত বিদ্যায় শিক্ষিত জাতি, কিন্তু সুশিক্ষায় এবং স্বশিক্ষায় সচেতন জাতি না। দেশের সরকার সরকারি ছুটিটা কেন দিল, কেন সেনা মোতায়েন হল সেটার আসল উত্তর কেউ দিতে পারবেনা। কেন আমরা ইতালি আর চীন থেকে শিক্ষা নিতে পারছিনা। কি বিভীষিকাময় রুপ ধারণ করছে পাশ্চাত্যে তা ইউরোপ-আমেরিকা থাকা প্রবাসী বন্ধুদের কাছ থেকে শুনছি আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে স্বচক্ষে দেখছি। পুরো ইতালির স্বাস্থ্যসেবা যেখানে কলাপ্স করেছে, স্পেন যখন বুঝতেই পারছেনা এর শেষ কোথায়, মানুষের মত্যুর পর লাশ সৎকারের কোন ব্যবস্থাও নাই, পুরো পৃথিবীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা যেখানে নাকাল, সেখানে আমাদের পরিস্থিতি কি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে তা কি ভাবা যায়? আসলে ব্যাপারটা এমন হওয়া উচিৎ। যেমন ধরেন, আমরা প্রবাসীদের দেশে ঢুকলে যেমন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে পাঠাচ্ছি, ঠিক তেমনি যারা করোনা আতংককে উৎসব মূখর আমেজ বানিয়ে গ্রামে পাবলিক হলিডে করতে যাচ্ছেন তাদেরও গ্রামে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে। অন্যথায় পিটিয়ে হাড্ডি গোড়া করে ফেলা হবে। এই ওষুধ না দিলে বাংলাদেশের করোনা মুক্তির স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে। দয়া করে, ঘরে থাকুন। হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। পরিশেষে রবীন্দ্রনাথের দুটি কবিতার লাইন দিয়ে শেষ করতে চাই, ” নীল নবঘনে আষাঢ় গগণে তিল ঠাই আর নাহিরে, ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাইরে”।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest