রাজশাহীর আতংক ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরত মানুষ, আক্রান্ত ৪

প্রকাশিত: ১২:৫২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২০

রাজশাহীর আতংক ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরত মানুষ, আক্রান্ত ৪
রাজশাহী ব্যুরো : প্রবাসীর পর এবার রাজশাহীবাসীর আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ফেরত মানুষ কারণ স্থানীয় কারো মধ্যে সংক্রমণ দেখা না দিলেও ঢাকা নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা চারজন ইতিমধ্যেই করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এরমধ্যে দুইজন নারী ও দুইজন পুরুষ। তারা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। আর গতকাল শনিবার সকালে রাজশাহী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল আইসোলেশনে থাকা নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে চারদিন জ্বর ছিল বলে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন। বাইরের জেলার মানুষ রাজশাহীতে প্রবেশ ঠেকাতে ও এর প্রাদুর্ভাব যে কোনভাবেই রোধ করতে চলতি মাসের ১৪ এপ্রিল সকাল থেকে রাজশাহী জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লকডাউনের পর রাজশাহী জেলার প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দিনরাত প্রবেশপথগুলোতে পাহারা রয়েছে পুলিশ। তারপরও কোন না কোনভাবে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রাক সহ অন্যান্য যানবাহন করে রাজশাহীতে ফিরছে মানুষ। বাইরে থেকে রাজশাহীতে ফেরা মানুষ এখন যেন আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার পর থেকেই রাজশাহী ফিরছে এসব মানুষ। দিনের বেলা তারা বেশি সুবিধা করতে না পারলেও রাতের বেলা ঠিকই বিভিন্ন কায়দায় বিভিন্ন যানবাহনে তারা রাজশাহী ফিরছেন। এ নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ফেরা মানুষকে ফেরা আটকাতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী রাজশাহীতে গেল এক মাসের বেশি সময়ে রাজশাহী ফিরেছেন প্রায় তিন হাজার প্রবাসি। জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, পুলিশ খুঁজে খুঁজে হাজার খানেক মানুষের সন্ধান পেলেও বাকিদের হদিস পায়নি। তারা বিভিন্নভাবে লুকিয়ে যেখানে সেখানে অবস্থান করেছেন। যখন এদের নিয়েই বিপাকে প্রশাসন ঠিক তখন মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা ফেরা মানুষ। ঢাকা নারায়ণগঞ্জ থেকে যারা ফিরছেন তাদের মধ্যেই বেশিরভাগ গার্মেন্টস শ্রমিক ও যানবাহন সহ অন্যান্য শ্রমিক রয়েছে। তারা দিনের বেলায় রাজশাহীতে প্রবেশ করতে না পারলেও রাতের বেলা ট্রাকে বা অন্য কোন যানবাহনে লুকিয়ে নিজ এলাকায় ফিরছেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। এলাকাবাসী মনে করছেন, ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ফেরত মানুষ ঠেকাতে না পারলে রাজশাহীতে আরো বেশি মানুষের সংক্রামিত হতে পারে। যেকোনো মূল্যে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মানুষকে রাস্তাতেই আটকাতে হবে। তাদের শহরে বা নিজ উপজেলার বাড়িতে আসতে দেয়া সুযোগ দেয়া যাবে না। এদিকে, এখন পর্যন্ত রাজশাহী জেলায় চারজন করোনা পজেটিভ হয়েছেন। চারজনের মধ্যে দুইজন নারী ও দুইজন পুরুষ। একজন ঢাকা ফেরত ও বাকি তিনজন নারায়ণগঞ্জ ফেরত। চলতি মাসের ১২ এপ্রিল রাজশাহীতে প্রথম পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া গ্রামে এক পুরুষ করোনা পজেটিভ হয়। তারপর পজিটিভ রোগীর বাড়িসহ আশেপাশের ৪০টি বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়। এর মাত্র একদিনের মাথায় পার্শ্ববর্তী উপজেলা বাগমারাতে নাঃগঞ্জ ফেরত এক ইঞ্জিনিয়ার করোনা পজিটিভ হন। তাকেও নিজ বাড়িতে আইশোলেশনে রাখা হয়। আর তার মাত্র একদিনের ব্যবধানে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় এক যুবতী নারী করোনা পজিটিভ হন। তিনিও নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। রাজশাহী নয়টি উপজেলার মধ্যে ইতিমধ্যে তিনটিতেই করোনা পজেটিভ রোগী পাওয়া গেছে। আর জেলার প্রায় প্রত্যেকটি উপজেলায় ও রাজশাহী শহরে আসছে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা থেকে মানুষ। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, বেশ কয়েকদিন আগে একটি হাইস গাড়িতে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে প্রায় ১৩ জন গার্মেন্টসকর্মী ঢাকা থেকে আসছিলেন। পথে নগরের নওদাপাড়া এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেকপোষ্টে তারা ধরা পড়েন। এছাড়াও ট্রাকে করে আসতে গিয়ে আরো বেশকিছু গার্মেন্টসকর্মী ধরা পড়েন। এদিকে লকডাউন এর মধ্যেই চলতি মাসের ১৬ এপ্রিল গভীর রাতে ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে ট্রাক ভাড়া করে নারীসহ ২৪ জন ইটভাটার শ্রমিক রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার ১ নং কলমা ইউনিয়নের বিল্লি হাটে গিয়ে পৌঁছে। স্থানীয়রা তাদের দেখতে পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ডা. সেকেন্দার আলীকে খবর দেয়। তাৎক্ষণিক ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে ঢাকা থেকে আসা লোকজনের মধ্যে ১৩ জনকে বিল্লি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখেন। বাকি ১১ জনকে পাশের উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যের জিম্মায় দেন। পরদিন ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহ অন্যরা তাদের সাথে দেখা করে কথা বলে প্রয়োজনে চিকিৎসা খোঁজখবর নিয়েছেন। এত কড়াকড়ির মধ্যেও প্রতিনিয়ত রাতের আঁধারে মাইক্রোবাস, শাকসবজি ট্রাক, মাছের পিকআপ সহ বিভিন্ন যানবাহনে কৌশলে লুকিয়ে আসছেন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজশাহীতে। রাজশাহীর স্থানীয় শাহাদাত নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, এত কড়াকড়ির মধ্যে কি করে এতগুলো মানুষ বা এত বড় যানবহন চেকপোস্ট পেরিয়ে আসছে তা আমার বোধগম্য নয়। রুবেল নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজশাহীতে আসতে হলে তাদেরকে অনেক চেকপোস্ট পার হয়ে আসতে হয়। এমনকি যমুনা সেতু পার হতে হয় এতগুলো চেকপোস্ট পার হয়ে কি করে তারা আসছে বুঝতে পারছি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন এসব মানুষ। রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, যে যেখান থেকেই আসুক আমরা তাদেরকে এলোমেলো ঘুরতে দেবো না। কেউ যদি গোপনে এসে থাকে আমরা স্থানীয় থানা, স্বাস্থ্য বিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার কে বিষয়টি অবহিত করে তাদেরকে নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে রাজশাহীতে ব্যাপক আকারে করোনা কারো মাধ্যমে ছড়াতে না পারে।

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest