কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নার্সের অবহেলায় দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

প্রকাশিত: ৭:০০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নার্সের অবহেলায় দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

সাইফুর রহমান শামীম ,কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড নার্সের অবহেলায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে মৃত দুই শিশুর স্বজনসহ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশুদের অভিভাবকদের রোষানলে পড়েছেন দায়িত্বরত নার্সসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২০ সেপ্টম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে সাংবাদিকরা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গেলে ভুক্তভোগী স্বজন ও অন্যান্য শিশুদের অভিভাবকরা নার্সদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতে থাকেন। তারা অভিযুক্ত নার্সদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

মৃত দুই শিশু হলো জেলা শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকার ছয়ানিপাড়ার দিলীপ চন্দ্র রায়ের মেয়ে এবং জেলার রাজীবপুর উপজেলার মরিচা কাঁদি গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে । দুই শিশু গত শনিবার (১৮ সেপ্টম্বর) জন্মগ্রহণ করে।

মৃত এক শিশুর বাবা দিলীপ চন্দ্র রায় জানান, গত শনিবার জেনারেল হাসপাতালে তার স্ত্রী অঞ্জনা একটি মেয়ে বাচ্চা প্রসব করেন। স্বাভাবিক প্রসব হলেও জন্মের সময় মাথায় আঘাত পেয়েছে জানিয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এরপর তাকে ইনজেকশন ও স্যালাইন দেওয়ারও ব্যবস্থাপত্র দেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।

দিলীপ রায় বলেন, ওষুধ আর স্যালাইন নিয়ে এসে তা নার্সদের দিয়ে বাচ্চাকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তারা কথা শোনেন না। তারা রুমে বসে মোবাইলে ফেসবুক চালান। এখনও স্যালাইন অমনি (অব্যবহৃত) পড়ে আছে। সোমবার দুপুরে বাচ্চার নাক থেকে অক্সিজেনের লাইন খুলে গেলে তা ঠিক করার জন্য নার্সদের ডাকি। কিন্তু তারা ধমক দিয়ে আমাদের ফিরিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরে বাচ্চাটা মারা যায়। নিজের বাচ্চার মৃত্যুর জন্য নার্সদের অবহেলাকে দায়ী করেন ভুক্তভোগী এই বাবা।

অপর মৃত শিশুর বাবা র‌বিউল ইসলাম জানান, ‘বাচ্চাকে চিকিৎসা সেবা, ওষুধ দিতে ডাকলে নার্সরা আসেন না। চিকিৎসার অভাবে কখন বাচ্চা মারা গেছে আমরা টেরও পাই নাই। তারা (নার্সরা) মোবাইল নিয়া ব্যস্ত। রোগীর সেবা করতে তাদের অনীহা।’

র‌বিউ‌লের বাবা (মুত শিশুটির দাদা) ফুল মিয়া বলেন, ‘বাচ্চা মারা‌ যাওয়ার পর নার্সরা আমাদেরকে ব‌লে বাচ্চা রংপুর নি‌য়া যাই‌তে হ‌বে। মরা বাচ্চা নিয়া আমা‌গো রংপুর যেতে বলে। এরা ইচ্ছা করে আমার নাতনিতে মেরে ফেলেছে।

ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশুদের অভিভাবকদের অভিযোগ, নার্সরা ডিউ‌টি রু‌মে মোবাই‌ল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কোনও সমস‌্যার কথা বল‌লে অভিভাবকদের সা‌থে খারাপ আচরণ ক‌রে চি‌কিৎসা না দেওয়ার হুম‌কি দেন।

শিশু ওয়ার্ডে বিকাল শিফটে দায়িত্বরত নার্স তুল‌শি রানী ও উ‌র্মিলা শাহা এসব অভিযোগের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। তারা বলেন, ঘটনার সময় যারা ডিউটিতে ছিলেন তারা ডিউটি শেষে চলে গেছেন।

নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শিশু ওয়ার্ডের ইন চার্জ কাকলী বেগম বলেন, যে শিশু দুটি মারা গেছে তাদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। এরপরও নার্সদের কোনও অবহেলা থাকলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিশু ওয়ার্ডে ৪৮ রোগীর বিপরী‌তে ভ‌র্তি আ‌ছে ১১৮ শিশু। নার্স সংকট থাকায় অ‌তি‌রিক্ত সংখ্যক রোগীর সেবা দি‌তে হিম‌শিম খে‌তে হয়। ফ‌লে ডিউ‌টিতে কিছুটা ভুল ত্রুটি হ‌য়ে থাকতে পা‌রে বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হানপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ লিংকন জানান, আমি বিষয়টি জানার পর শিশু ওয়ার্ডে গিয়েছি। শিশু দুটির শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। বাচ্চা দুটিকে রংপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।’

নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় তত্ত্বাবধায়ক বলেন, রোগীর স্বজনরা বিষয়টি আমাকেও বলেছেন। প্রয়োজনে আমি তদন্ত কমিটি করে সেবা দিতে গিয়ে যদি তারা রোগীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে সেটা কাম্য নয়। সেবা, ভাষাগত কিংবা ব্যবহারগত বিষয় তারা যদি কোনও দায়িত্ব অবহেলা করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest