এজেন্টের খামখেয়ালি পনায় আশুলিয়ায় ইসলামি ব্যাংকের দুটি এজেন্ট পরিবর্তন। ।

প্রকাশিত: ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০২১

এজেন্টের  খামখেয়ালি পনায় আশুলিয়ায় ইসলামি ব্যাংকের দুটি এজেন্ট পরিবর্তন। ।

নিজস্ব প্রতিনিধি: ঢাকার আশুলিয়ার কলমা ও দোসাইদ এলাকায় ইসলামি ব্যাংকের দুটি এজেন্ট শাখা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। এ শাখা দুটির কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে এজেন্ট শাখার মালিক আব্দুর রাজ্জাকের নানা অপকর্মের চিত্র।

‘ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল’ এর স্বত্বাধিকারী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড থেকে একসাথে দুটি এজেন্ট ব্যাংকের অনুমদন পায়। কলমা থেকে দোসাইদ মাত্র এক কিলোমিটার দূূরত্বে ভাড়া ভবনে দুটি এজন্ট শাখার কার্যক্রম শুরু করেন। তবে মাত্র আট মাসের মাথায় দুটি শাখা বন্ধ হয়ে যায় অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে।

শাখা দুটি বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে,এজেন্ট শাখার স্বত্বাধিকারী আঃ রাজ্জাক বলছেন আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় চালাতে পারছেন না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আশুলিয়ার কলমা এজেন্ট শাখায় একজন গ্রাহক আনুমানিক ১১ লাখ টাকা জমা দেয়ার একমাস পর তার একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে জানতে পারেন পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যালেন্স নেই।

এই ঘটনার সূত্র ধরেই প্রথমে সার্ভার এবং পরবর্তীতে দুটি এজেন্ট শাখার সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ।

এব্যাপারে আশুলিয়ায় অবস্থিত ইসলামি ব্যাংক শাখার প্রধান মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, মালিকানা পরিবর্তন করা হবে এজন্য এজেন্ট শাখা দুটি সাময়িক ভাবে বন্ধ রয়েছে। দুটি শাখা একই সময়ে বন্ধ হওয়ার কারন জানতে চাইলে, তিনি এড়িয়ে যান।

অনুসন্ধানে জানা যায়,নীলফামারী জেলায় ডোমার থানার গোসাইগঞ্জ গ্রামের মোঃ আব্দুর রাজ্জাক প্রায় ১৭ বছর আগে সাভারে আসেন। পাঞ্জাবি পরে এলেও পোশাক বিবর্তনের মাধ্যমে এখন নিয়মিত টি-শার্ট পড়েন।
তৎকালীন সময়ে একটি শিশু সংগঠন ‘ফুল কুঁড়ির’ সাভার অঞ্চল প্রধান ছিলেন।

২০০৭-৮ সালের দিকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করেন । ২০১১ সালে লিজেন্ড ট্রাস্ট নামে একটি ট্রাস্টির সাথে যুক্ত হয়ে লিজেন্ড কলেজের যাত্রা শুরু করেন ।

উক্ত প্রতিষ্ঠানে কলেজ সমন্বয়কারির দায়িত্ব পালন করেন ২০২১ এর জুলাই পর্যন্ত।

এসময় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সকল বিষয় দেখাশোনার মৌখিক দায়িত্ব পায় এবং এখান থেকেই জীবনের গতিপথ পাল্টে যায়।

২০১৮/১৯ সালে সাভারের বনফুলে শেয়ার নেন বলে জানা যায়।

একই বছর ইন্তেখাব প্রোপার্টিজ নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানি চালু করেন। যার বর্তমান অফিস বন্ধন রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন মফিজ প্লাজার ২য় তলায় ২০১৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটির অফিস সংলগ্ন নিজের ডেভেলপারের অধীনে একটি ভবনের কাজ শুরু করেন। যা এখনো নির্মানাধীন। প্রায় একই সময়ে জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটি মসজিদ সংলগ্ন ডি- ব্লকের প্রথম ১০ তলা বাড়িটিতে তার রয়েছে দুটো ফ্ল্যাট।

২০২১ এর এপ্রিল মে’র দিকে কোরাইশি মার্কেট সংলগ্ন, ইতালিয়ান জুতোর ব্রান্ড লোটো’র শো-রুম চালু করেন। একই সময়ে বাংলার স্বাদ রেস্তোরাঁর অংশীদার হন।

২০১১ সালে মোঃ নুরুল হককে সভাপতি ও হাসানুজ্জামান শেখ কে সাধারণ সম্পাদক করে, ২৫ জন ট্রাস্টি সদস্য নিয়ে শুরু হয় লিজেন্ড ট্রাস্টের। পরে আরও একজন ট্রাস্টি যুক্ত করে, ২৬ জনে গিয়ে দাড়ায় সংখ্যা। প্রতিজন ট্রাস্টি থেকে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা নিয়ে চালু করা হয় লিজেন্ড কলেজ। টাকা নেয়ার সময় বলা হয়েছিলো, পরবর্তীতে এই টাকা পরিশোধ করে দেয়া হবে এবং কলেজ থেকে আয়ের একটি অংশ প্রতি মাসে দেয়া হবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং আব্দুর রাজ্জাক এবং হাসানুজ্জামান শেখ এবং তাদের কাছের কয়েকজন মূল টাকা ফেরত পেয়েছেন এবং কলেজ থেকে আয়ের অংশ ভাগ করে নিচ্ছেন বলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাস্টি অভিযোগ করেছেন।

কলেজের কার্যনির্বাহী কমিটি ছিলোনা দীর্ঘদিন। সাভার মডেল কলেজের রসায়নের প্রভাষক নুরুল হক ট্রাস্টের সভাপতি এবং বিপিএটিসি কলেজের রসায়নের সহযোগী অধ্যাপক হাসানুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা যায়। মূলত এই হাসানুজ্জামান শেখের দিকনির্দেশনাতেই চলেন আব্দুর রাজ্জাক।

অডিট কমিটি থাকলেও তা মৌখিক এবং দায়সারাভাবে রয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভা বলে কিছু নেই এই কলেজে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে, কলেজ ট্রাস্টের সভাপতি মোঃ নুরুল হক বলেন, আমি এখন আর গভর্নিং বডি তে নেই। তাই এবিষয়ে তেমন কিছু জানিনা। শিক্ষক নিয়োগেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম শিক্ষকদের কোন নিয়োগপত্র দেয়া হয় না কলেজ থেকে । যখন যাকে খুশি মৌখিক নিয়োগ দেন। এবং যখন তখন ছাঁটাইও করে দেন। নেই কোন নীতিমালাও। কলেজের আয় ব্যয়েরও কোন নথিপত্র নেই বলে জানা যায় ।

আব্দুর রাজ্জাক ব্যাবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষক। যিনি ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে খুবই উদাসীন। অভিযোগ রয়েছে গত তিন বছরে তিনি কোন ক্লাস নেননি। তার স্ত্রী সুলতানা নাজনীনও এই কলেজের শিক্ষক। এবং তিনি দিনের পর দিন ছুটিতে থেকেও নিয়মিত বেতন ভাতা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।
অভিযোগ রয়েছে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রিসিভ কপি ছাড়াই বেতন সংগ্রহ করা হয়। শিক্ষার্থী ভর্তি ও সেশন চার্জে টাকা নিয়মিত কলেজ একাউন্টে জমা হয়না।

এসব অনিয়ম ও বিপুল পরিমাণ অথের্র উৎস সম্পর্কে মুঠোফোনে একাধিকবার জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে যান। কিভাবে হলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষঃ রাজ্জাক দায়িত্ব নেয়ার আগে মোট তিন জন দায়িত্ব পালন করেছেন এই কলেজে। এদের মধ্যে একজন ছিলেন ভারপ্রাপ্ত।

২০২১ এর জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন আব্দুর সবুর। আগস্ট ২০২১ এ ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান শেখের একক ক্ষমতাবলে আব্দুর রাজ্জাক কে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে বসানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মাস দুয়েক আগে, কলেজের স্বীকৃতি সংক্রান্ত জটিলতায় তড়িঘড়ি করে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের একজন সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যিনি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো ভিসি ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, কলেজের কর্মচারীদের কলেজের তুলনায় হাসানুজ্জামান শেখ ও আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ির কাজ এবং ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করতেই বেশি সময় ব্যায় হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্রাস্টি কলেজের এ অচলাবস্থা থেকে মুক্তি চান এবং হাসানুজ্জামান শেখ ও আব্দুর রাজ্জাক এর অবৈধ প্রভাবমুক্ত স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest