যেভাবে গৃহিণী থেকে উদ্যোক্তা হলেন রাজশাহীর তন্বী

প্রকাশিত: ৯:৪৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০২২

যেভাবে গৃহিণী থেকে উদ্যোক্তা হলেন রাজশাহীর তন্বী

ওমর ফারুক, রাজশাহী:
জান্নাতুল ফেরদৌস তন্বী। বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর সিপাইপাড়া এলাকায়। বর্তমানে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হলেও অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে তাকে। নানা প্রতিবন্ধকতা ও আর্থিক সংকটের মধ্যেও তিনি নিজ হাতে তৈরি করা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। গৃহিণী থেকে উদ্যোক্তা হওয়াটা অন্যদের মতো সহজ ছিলনা তার কাছে। এজন্য কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে।

বর্তমানে তন্বী সংসার সামলানোর পাশাপাশি নিজে হাতে পণ্য তৈরি করে দেশ ও বিদেশে বিক্রি করছেন। তিনি ছাড়াও তার সাথে আরো ৪/৫ জন নারী কাজ করেন। যারা তার সাথে কাজ করে কর্মসংস্থান লাভের পাশপাশি পরিবারে আর্থিকভাবে অবদান রাখতে পারছেন। এ জন্য তার কর্মচারীরাও খুশি। কারণ তারাও এক সময় তার মতো গৃহিণী ছিল। সংসারে অবদান রাখার মতো কোনো কিছুই ছিলনা। তারা এখন নিজ নিজ সংসারে অন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশপাশি নিজেরাও অবদান রাখছেন। নিজে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশপাশি অন্যদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারায় তন্বী নিজেও খুশি।
জান্নাতুল ফেরদৌস তন্বীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, এইচএসসি পাশ করার পরপরই ২০১১ সালে তার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে চলে যান তিনি। বিয়ের পর বেশ কয়েক বছর তিনি প্রথম প্রথম অন্য গৃহবধূদের মতো স্বামীর সংসার সামলাচ্ছিলেন। এর কয়েক বছর পরে ২০১৬ সালে অবসর সময়ে সুতো দিয়ে শখের বসে টুপি ও শিশুদের জুতো তৈরি করা শুরু করেন। সেটি তৈরি করার পর তিনি সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। ফেসবুকে সেই ছবি দেখে এক নারী ক্রেতা তাকে শিশুর জন্য জামার তৈরির অর্ডার দেন। কিন্ত তন্বী তাকে জানান, তার কাছে সেই জামা তৈরির সুতো কেনার জন্য অর্থ নেই। এরপর ওই নারী ক্রেতা তাকে অগ্রিম ১ হাজার টাকা প্রদান করেন। সেই টাকা দিয়ে তন্বী সুতো কিনে জামা তৈরি করেন। সেই জামা বিক্রি করে ৬৫০ টাকা লাভ হয় তার। সেই গ্রাহকের মাধ্যমে তিনি আরো বেশ কয়েকটি অর্ডার পান।


তারপর থেকে আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বেশি বেশি কাজের অর্ডার পেতে শুরু করায় দুই মাস পরে তিনি ফেসবুকে (ক্রোসেড কুইন) নামের একটি পেজ খোলেন। সেই পেজে তার হাতে তৈরি করা কাজের ছবি পোস্ট করতে থাকেন। সেই ছবি দেখে একের পর এক অর্ডার আসা শুরু হয়। তার প্রতিষ্ঠান তন্বীস্ ড্রীম থেকে যেসব পণ্য তৈরি করা হয় তার মধ্যে রয়েছে, কুশিকাটার কাজ, বাচ্চাদের জামা, শুয়েটার, মাপলার, মোজা, মাজুনি, টেবিল ম্যাট, শাল, কুশন কভার, টেবিল রানারসহ বিভিন্ন পণ্য।
এসব পণ্য তৈরির কাজে ব্যবহৃত সুতোগুরো বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হয় বলে জানান তিনি। সুতো এবং উল দিয়ে পণ্য তৈরি করেন। ভালোভাবে কাজ শুরু হওয়ার পর মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করা শুরু করেন। তবে বছরের ১২ মাসই বেচাকেনা সমান হয়না। শীত মৌসুমে বেচাকেনা ভালো হয়। বছরের অন্য সময়গুলোতে একটু কম হয়। কাজ করার পাশপাশি বর্তমানে তিনি প্রশিক্ষণও দেন। ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে ফ্রি কুশিকাটার কাজ শেখান। তিন থেকে ছয় মাসের কোর্স করান। ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত কোর্স ফি নেন।
তিনি আরো জানান, শুরুর সময় তার স্বামী তাকে পারবেনা বলে নানা কথা শোনান। কিন্ত তিনি বাবা-মায়ের উৎসাহে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে তিনি কিছুটা এগিয়ে গেলে স্বামী তাকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন। এখন তিনি স্বাবলম্বী। তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স পাশ করেছেন।

জান্নাতুল ফেরদৌস তন্বী বলেন, যারা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে এখনো চাকুরীর আশায় বসে আছেন তারা চাকুরীর জন্য বসে না থেকে নিজ উদ্যোগে ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হন। তাহলে নিজের পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করা সম্ভব হবে।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest