ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে, জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম

প্রকাশিত: ৯:৫১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০২৩

ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে, জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম

বিশেষ প্রতিনিধি।

জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দূর্গাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তালিকাভূক্ত কার্ডধারী অর্ধশত জেলেদের চাল না দিয়ে স্থানীয় চাল বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি ও একটি গোডাউনে মজুদ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় তালিকাভূক্ত কার্ডধারী অর্ধশত জেলে ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে ওই ইউনিয়নের জেলেদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরেছে। ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড লক্ষীবর্ধন গ্রামের কার্ডধারী জেলে জাহাঙ্গীর খান অভিযোগ করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মল্লিক সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ৪০ কেজি চাল নেওয়ার জন্য প্রত্যেক জেলের কাছে এক হাজার করে টাকা দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় আমিসহ ইউনিয়নের অর্ধশত কার্ডধারী তালিকাভূক্ত জেলেদের সরকারি বরাদ্দের চাল দেওয়া হয়নি।

একই গ্রামের বাসিন্দা ও মৎস্য অধিদপ্তরের রেজিষ্টারভূক্ত কার্ডধারী জেলে মৃত হামজেদ আলী খানের পুত্র জাহাঙ্গীর খান বাবুল খান সহ অসংখ্য জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মল্লিকের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় কার্ডধারী আমাদের অর্ধশত জেলেকে চাল দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হলে আমাদের কার্ড চিরদিনের জন্য বাতিল করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি প্রদর্শন করা হয়েছে।

তারা আরো অভিযোগ করেন, বছরের বারো মাসই আমরা নদীতে জাল বেয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। অথচ যারা টাকা দিতে পেরেছে সেইসব মৌসুমী জেলেসহ অন্যান্য পেশার সাথে জড়িতদের চাল দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় চাল ব্যবসায়ীদের কাছে জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দের চাল বিক্রি করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে আরও জানা গেছে, প্রত্যেক জেলে কার্ডের বিপরতীতে ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও যেসব জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে তার পরিমাপ করে দেখা গেছে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৬ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদারের খামখেয়ালীপনায় চাল না পাওয়া কার্ডধারী জেলেরা সরকারিভাবে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল পাওয়াসহ গোডাউনে মজুদ করে রাখা চাল উদ্ধারের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

দূর্গাপাশা ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি ও ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য রুবেল মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়নে তালিকাভূক্ত সাতশ’ জেলে কার্ড রয়েছে। নামেমাত্র কিছু লোকের মাঝে বরাদ্দকৃত সরকারি চাল ওজনে কারচুপি করে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি প্রায় দুইশ’ বস্তা চাল কালোবাজারে বিক্রি করার জন্য সেনেরহাট বাজারে ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনে মজুদ করে রাখা হয়েছে।

এক হাজার করে টাকা দাবিসহ অন্যান্য সকল অভিযোগ অস্বীকার করে দূর্গাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার বলেন, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কতিপয় ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে জেলেদের কাছে যাতায়াত খরচ বাবদ একশ’ করে টাকা চাওয়ার মৌখিখ অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষনিক তাদের (ইউপি সদস্য) কঠোরভাবে শ্বাসানো হয়েছে। আমার নাম ব্যবহার করে কোন ইউপি সদস্য টাকা চেয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, একজন ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়। তারপরেও জেলেদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজল চন্দ্র শীল বলেন, জেলেদের লিখিত অভিযোগের তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশক্রমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest