ঢাকা ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:১৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০
মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান,বিশেষ প্রতিনিধিঃ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবিশদের ২৩২ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে বর্তমান সরকার। ফলে স্থায়ীকরণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে দেশজুড়ে প্রায় ২০ হাজার নকল নবিশের চাকরির। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিক বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। সর্ব সম্মতিক্রমে নকল নবিশদের চাকরি স্থায়ীকরণের পক্ষে মত দেয়া হয়েছে বলেও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় খাত সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, যেখান থেকে প্রতি বছরই হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে সরকার। এ রাজস্ব আদায়ে ও সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালনকারী নকল নবিশ (মোহরার)। যারা দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পর বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ (সংরক্ষণ) কাজ ও নকল দলিল প্রদানে মূল সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করেন। জানা গেছে, গত ২২ জুলাই নকল নবিশদের চাকরি স্থায়ী করার জন্য একটি সভা আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নকল নবিশদের পক্ষ থেকে ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের ওপর অবজ্ঞা আর বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরেন। সেখানে বাংলাদেশ নকল নবিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নাল আবেদীন দলিল নিবন্ধন খাতে নকল নবিশদের গুরুত্ব তুলে ধরে তাদের চাকরি স্থায়ী করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের চাকরি স্থায়ী করে জাতীয় বেতন স্কেলের ১৯তম গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে বলে সর্ব সম্মতিক্রমে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে চাকরি স্থায়ী করার আগে কিছু সুপারিশ করা হয় ওই সভায়। সুপারিশগুলো হলো-তালিকাভুক্ত নকল নবিশদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা সমমান এবং বয়স অনধিক ৪৯ বছর হতে হবে। এক্ষেত্রে কম্পিউটার প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা অগ্রাধিকার পাবেন। পদের সংখ্যা এবং নিয়োগ দেয়ার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিবন্ধন পরিদফতর থেকে গৃহীত হতে হবে। বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মাহফুজুর রহমান খান বলেন, নকল নবিশ পদ স্থায়ী করা হলে কাজের যেমন মান বাড়বে, তেমনি তারা জবাবদিহিতার মধ্যে আসবে। ঈশ্বরদী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১১ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারীসহ সর্বমোট ২৪ জন নকল নবিশ কর্মরত রয়েছে। সরকারিকরণের আশায় দীর্ঘ দিন অনিশ্চিয়তার মধ্য দিয়ে দিন পার করলেও এখন দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে নিজেদের আর খাপ খাওয়াতে পারছেন না তারা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ৬ মাসের বেতন বকেয়া। এ রকম নানা অনিশ্চিয়তা ও হতাশার মধ্যে দিন পার করছেন ঈশ্বরদী উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের নকল নবিশরা। সূত্র মতে, দলিল সম্পাদনের ইতিহাস অনেক পুরনো হলেও সম্পত্তি বেচাকেনায় প্রতারণা বন্ধ এবং ভূমি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ১৭৮১ সালে উপমহাদেশে প্রথম রেজিস্ট্রি আইন প্রবর্তিত হয়। তখন থেকেই দলিল রেজিস্ট্রি এবং দলিলের নকল লেখার জন্য সৃষ্টি হয় নকল নবিশ পদ। কিন্তু পদ সৃষ্টি হলেও সোয়া দুই’শ বছর ধরে মাস্টার রোল পর্যায়েই কাজ করতে হচ্ছে নকল নবিশদের। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করলেও তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। প্রশাসনিক জটিলতাসহ নানা কারণে হয়নি চাকরি স্থায়ীকরণ। অথচ ১৯৫৮ সালে কালেক্টরেট, জজকোর্ট, হাইকোর্ট ও সরকারের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত নকলনবিশদের চাকরি স্থায়ী করে নেয়া হয়। ঈশ্বরদী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবিশ নাছির জানান, আমদের ২৪ জন নকল নবিশের (এক্সা মোহরার) চাকরি আজও অনিশ্চিত। নাম মাত্র বেতনে দিনের পর দিন দৈনিক হাজিরা হিসেবে চাকরি করছি। পরিবার পরিজন নিয়ে কাটাচ্ছি মানবেতর জীবন। রেজিস্ট্রেশন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরির নিয়োগ বিধির মতোই শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সব যোগ্যতা ও নিয়মের ভিত্তিতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে এক্সট্রা মোহরার নিয়োগ করা হয়। এসব অফিসের স্থায়ী পদের কর্মচারী মোহরারদের প্রধান কাজ হলো রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের নকল ভলিউমে লেখা। দলিল রেজিস্ট্রির ১৫ দিনের মধ্যে নকল লেখার কাজ শেষ না হলে সহযোগী হিসেবে ভলিউমে নকল লেখা এক্সট্রা মোহরারদের কাজ। এজন্য পাবনা সদরের রেকর্ডরুমসহ দেশের ৪৭৬টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১৫ হাজার এক্সট্রা মোহরার কর্মরত আছেন। পাবনা জেলা নকল নবিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়া জানান, রেজিস্ট্রি অফিসে চাকরিরত এক্সট্রা মোহরাররা কোনো বেতন পান না। তারা দৈনিক হাজিরায় চাকুরি করেন। জমি বেচাকেনার দলিলের নকল ভলিউম বইয়ে লেখার জন্য রেজিস্ট্রি অফিসের এক্সট্রা মোহরাররা ভলিউমের পাতা প্রতি (৩০০ শব্দ) পান ২৪ টাকা। এ খাতে জমি ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা হয় ৪০ টাকা। উদ্বৃত্ত থাকে ১৬ টাকা। একজন এক্সট্রা মোহরারকে বাধ্যতামূলকভাবে মাসে ৩০০ পাতা অর্থাৎ ৯০ হাজার শব্দ ভলিউমে লিখতে হয়। এ হিসেবে প্রতি মাসে তিনি পান চার হাজার ৮০০ টাকা।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST