বাগেরহাট-৪ আসনে নিরুত্তাপ ভোট, নজর কেড়েছে হাত ধোয়া

প্রকাশিত: ৯:২৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০২০

বাগেরহাট-৪ আসনে নিরুত্তাপ ভোট, নজর কেড়েছে হাত ধোয়া
মোঃ সাগর মল্লিক বাগেরহাট প্রতিনিধি :-  বাগেরহাট-৪ (মারেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের উপনির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হয়েছে। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত একটানা ভোট চলে এই আসনটিতে। অনুষ্ঠেয় এই ভোটে কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ভোটারদের ভোট প্রদানের আগে হাত ধোয়ার দৃশ্য সবার নজর কেড়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ভোটারদের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখে নির্বাচন কমিশন। ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা নারী-পুরুষ ভোটারদের আনসার বাহিনীর সদস্যরা হাত ধুতে সহযোগিতা করেন। শনিবার সকাল নয়টায় ভোট শুরুর সময়ে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কমতে থাকে। দুপুরের দিকে অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রই ছিল ফাঁকা। এরপর বিকেলে গড়ালে আবার কিছুটা বাড়ে। এই আসনে প্রাথমিকভাবে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নীং কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে ভোট গনণার পর কত শতাংশ ভোট পড়ল তা জানা যাবে। এই আসনের আওয়ামী লীগ ও জাপার মনোনীত প্রার্থীদেরও ভোট নিয়ে ছিল না কোন অভিযোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভোটার বলেন, এই আসনের গত পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের প্রতিদ্ব›িদ্বতা হয়ে আসছে। এই উপনির্বাচনে জামায়াত তাদের কোন প্রার্থী দেয়নি। এখানকার রাজনীতিতে জাপার সাংগঠনিক কোন ভীত নেই। একারনে তাদের ভোটও নেই। তাছাড়া জাপা যাকে প্রার্থী করেছে ওই প্রার্থীর এলাকার কোন মানুষ চেনে না। নির্বাচনে তার কোন পোষ্টার ভোট কেন্দ্রে নেই। তিনি এখানকার সব ভোটারদের কাছে পৌছতেও পারেননি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে জাপার প্রার্থীর কোন প্রতিদ্ব›িদ্বতাই হবে না এই আসনে বলে মত দেই ওই ভোটাররা। জাপার মনোনীত প্রার্থী শনিবার সকালে তার বাড়ি রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কামলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন। পরে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় দলের কয়েকজন নেতাকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে যান। তার মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি বিশে^শ^র বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা সরোয়ার হোসেন, মৃনাল সাহাসহ একাধিক ভোটার বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নির্বাচন কমিশন হাত ধোয়ার প্রস্তুতিটা আমাদের ভাল লেগেছে। এখানে আসা অধিকাংশ ভোটারই স্বাস্থ্য সচেতন না। দরিদ্র দিনমজুর যারা ভোট দিতে এসেছেন তারা বাড়িতে এভাবে হাত ধোয় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ভোটারদের হাত ধুয়ে দিয়ে তাদের সচেতন করেছেন। তারা একটু হলেও সচেতন হয়েছেন বলে মতদেন ওই ভোটাররা। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন এবং জাতীয় পার্টির সাজন কুমার মিস্ত্রী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এই আসনে ভোটার তিন লাখ ১৬ হাজার ৫১০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৮ হাজার ৭৯১ জন ও এক লাখ ৫৭ হাজার ৭১৯ জন নারী ভোটার রয়েছেন। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও বাগেরহাট-৪ আসনের রিটার্নীং কর্মকতা মো. ইউনুচ আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, বাগেরহাট-৪ আসনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিও ছিল সন্তোষজনক। ৪০ শতাংশের মত ভোট পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করছি। ভোট নির্বিঘœ করতে দশ প্লাটুন বিজিবি, দুই প্লাটুন কোস্টগার্ড, র‌্যাবের ১০টি টিম নির্বাচনী এলাকায় টহল দিয়েছে। এছাড়াও এই নির্বাচনে ২৩ জন নির্বাহী, দুইজন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, পুলিশের ২১টি ভ্রাম্যমাণ টিম এবং দশটি স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে সার্বক্ষনিক নিয়োজিত ছিল। শান্তিপূর্ণ ভোট উপহার দিতে যা যা করণীয় ছিল তা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় এই নির্বাচনে ভোটারদের জন্য ১৪৩টি ভোট কেন্দ্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, টিস্যু সরবরাহ করা হয়। ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা উপস্থিত হলে সেখানের আনসার সদস্যরা পানি ও সাবান দিয়ে প্রথমে হাত ধুয়ে দেয়। পরে তাদের বুথে যেয়ে ভোট দেয়ার অনুরোধ করে। এই উদ্যোগ ভোটারদের মধ্যে একটু হলেও সচেতনতা বেড়েছে। গত ১০ জানুয়ারি বাগেরহাট-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেনের মৃত্যু হলে আসনটি শূন্য হয়। ৬ ফেব্রæয়ারি নির্বাচন কমিশন উপ-নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসীল অনুযায়ি ১৯ ফেব্রæয়ারি আওয়ামী লীগম বিএনপি ও জাপার তিন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করে। বিএনপি দলীয় প্রার্থী কাজী খায়রুজ্জামান ঝণ ও কর খেলাপী হওয়ায় তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest